তবে অবৈধ সম্পদের অভিযোগ নিয়ে তারা তিনজনই লিখিত ব্যাখ্যা পাঠিয়েছেন।
Published : 24 Jun 2024, 07:57 PM
সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদের পথেই আছেন, তার স্ত্রী ও দুই মেয়ে; দুর্নীতি দমন কমিশনে তলব করে দ্বিতীয় দফা চিঠি পাঠানোর পরও তারা হাজির হননি।
তবে অবৈধ সম্পদের অভিযোগ নিয়ে তারা তিনজনই লিখিত ব্যাখ্যা পাঠিয়েছেন বলে দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন জানিয়েছেন।
বেনজীরের স্ত্রী জিশান মির্জা এবং দুই মেয়ে ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীর ও তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীরকে গত ৯ জুন দুদকে হাজির হতে বলা হয়েছিল। কিন্তু বেনজীরের মত তারাও সময় চেয়ে আবেদন করেন। পরে বেনজীরের হাজির হওয়ার তারিখের পরদিন, অর্থাৎ সোমবার তার স্ত্রী-সন্তানদের হাজিরার তারিখ রাখে দুদক।
কিন্তু রোববার দুদকে যাননি সাবেক আইজিপি। তার স্ত্রী-কন্যারাও সোমবার জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হননি। তারা সবাই বিদেশে আছেন এবং সেখান থেকে আইনজীবীর মাধ্যমে সময়ের আবেদন এবং লিখিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন সোমবার সাংবাদিকদের বলেন, “তারিখ বাড়ানোর জন্য নতুন করে কোনো আবেদন তারা করেননি। তবে একটি লিখিত বক্তব্য দিয়েছেন। যেখানে অভিযোগের বিষয়ে তাদের অবস্থান বর্ণনা করেছেন। ওই আবেদনটি বেনজীরের আবেদনের সঙ্গে গত বৃহস্পতিবার এসেছিল।
বেনজীরের স্ত্রী ও কন্যারা যে আবেদন করেছেন, তা যাচাই বাছাই করে সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তারা পরবর্তী ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান দুদক সচিব।
তিনি বলেন, “দুদক আইন ও দুদক বিধি অনুযায়ী তদন্ত কর্মকর্তারা পরবর্তী পদক্ষেপ নেবেন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তদন্ত কর্মকর্তারা তাদের প্রতিবেদন দেবেন।”
পরবর্তীতে কী ধরনের আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে জানতে চাইলে খোরশেদা ইয়াসমীন বলেন, “তদন্তকারী কর্মকর্তারা প্রতিবেদন দেওয়ার পর কমিশন পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে। প্রতিবেদনে কর্মকর্তাদের সুপারিশের উপর ভিত্তি করে ও অন্যান্য আইনি প্রক্রিয়া অনুযায়ী পরবর্তী কার্যক্রম চলবে।”
দুদক আইন অনুযায়ী কাউকে নোটিস করলে তিনি আসতে বাধ্য কি না, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু বলা নেই। তবে তারা সময় চাইতে পারেন। তখন কমিশন ১৫ দিন সময় দিতে পারে, যা তারা আগেই নিয়েছেন।
বেনজীর আহমেদ বাংলাদেশের প্রথম পুলিশ প্রধান, যিনি একাধারে ঢাকা মহানগর পুলিশ ও পুলিশের বিশেষ ইউনিট র্যাবেরও প্রধান ছিলেন। ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর তিনি অবসরে যান।
গত ৩১ মার্চ ‘বেনজীরের ঘরে আলাদীনের চেরাগ’ এবং ৩ এপ্রিল ‘বনের জমিতে বেনজীরের রিসোর্ট’ শিরোনামে তাকে নিয়ে দুটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে বসুন্ধরা গ্রুপের মালিকানাধীন দৈনিক কালের কণ্ঠ। সেখানে সাবেক আইজিপির বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠে আসে। এরপর আলোচনা শুরু হয় তাকে নিয়ে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গোপালগঞ্জের সাহাপুর ইউনিয়নে সাভানা ইকো রিসোর্ট নামে প্রায় ১৪০০ বিঘা জমিতে একটি ইকো রিসোর্ট গড়ে তুলেছেন বেনজীর পরিবার। এছাড়া ঢাকা ও পূর্বাচলে তার একাধিক ফ্ল্যাট ও বাড়ি আছে।
তার স্ত্রী ও দুই মেয়ের নামে দেশের বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ছয়টি কোম্পানির খোঁজ পাওয়ার কথাও বলা হয় প্রতিবেদনে। পাঁচটি প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকার বেশি হতে পারে বলে সেই প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়।
বনের জমি দখল করে গাজীপুরে রিসোর্ট বানানোর অভিযোগও আনা হয়েছে দৈনিকটির আরেক প্রতিবেদনে। ওই রিসোর্টের এক-চতুর্থাংশের মালিকানা বেনজীর পরিবারের বলে পত্রিকাটি দাবি করেছে।
বিষয়টি নিয়ে আলোচনার মধ্যে হবিগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন এপ্রিলের শেষে বেনজীর এবং তার পরিবারের সদস্যদের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান করে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নিতে দুদকে আবেদন করেন।
এরপর ২২ এপ্রিল দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন জানান, বেনজীরের ‘অবৈধ সম্পদ’ নিয়ে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছেন তারা। এজন্য তিন সদস্যের একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সদস্যরা হলেন- উপপরিচালক হাফিজুল ইসলাম, সহকারী পরিচালক নিয়ামুল হাসান গাজী এবং জয়নাল আবেদীন।
একই দিন এক আদেশে দুই মাসের মধ্যে বেনজীরের বিষয়ে ওঠা অভিযোগের তদন্ত করে দুই মাসের মধ্যে প্রতিবেদন চেয়ে নির্দেশ দেয় হাই কোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী এবাদাত হোসেনের বেঞ্চ।
নির্দেশনার পর সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক বেনজীর ও তার পরিবারের সম্পদের খোঁজে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ আটটি প্রতিষ্ঠানে চিঠি দেয় দুদক।
পরে দুদকের আবেদনে বেনজীর, তার স্ত্রী ও তিন মেয়ের স্থাবর সম্পদ ক্রোকের আদেশ দেন ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন। সেই সঙ্গে তাদের নামে থাকা ব্যাংক হিসাব এবং বিভিন্ন কোম্পানিতে তাদের নামে থাকা শেয়ারও অবরুদ্ধ করার আদেশ আসে। সেই অনুযায়ী পরে ব্যবস্থাও নেয় দুদক।
বেনজীর ও তার স্ত্রী-কন্যাদের দেশের বাইরে যাওয়ার বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কিছু বলা হয়নি। তবে বোট ক্লাবের সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগের জন্য দেওয়া চিঠিতে তিনি পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বিদেশে থাকার কথা বলেন। তারা সবাই দেশের বাইরে চলে গেছেন বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদনও ছাপা হয়েছে। এগুলোর প্রতিবাদ করেননি সাবেক আইজিপি।