“সরকার তার বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া দিয়েছে। একই সরকার হিসেবে প্রতিক্রিয়া দুটো হতে পারে না।”
Published : 18 Mar 2025, 09:32 PM
বাংলাদেশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা প্রধান তুলসী গ্যাবার্ড যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটাকে ‘গুরুতর’ হিসেবে অভিহিত করেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।
মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেছেন, গ্যাবার্ডের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ইতোমধ্যে দিয়েছে।
গ্যাবার্ডের বক্তব্যের বিষয়ে তৌহিদ হোসেন বলেন, “এটা একটা সিরিয়াস স্টেটমেন্ট। সেটার ব্যাপারে সরকারের একটা প্রতিক্রিয়া আছে।
“একই সরকার হিসেবে প্রতিক্রিয়া দুটো হতে পারে না।”
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি ওয়ার্ল্ডকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তুলসী গ্যাবার্ড বলেন, “হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর দীর্ঘদিনের দুভার্গ্যজনক নির্যাতন, হত্যা ও নিপীড়নের ঘটনা মার্কিন সরকার এবং ডনাল্ড ট্রাম্প ও তার প্রশাসনের একটা বড় উদ্বেগের জায়গা।”
গ্যাবার্ডের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ‘গভীর উদ্বেগ ও হতাশা’ প্রকাশ করে সোমবার রাতেই বিবৃতি দেয় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়।
তাতে বলা হয়, “মার্কিন গোয়েন্দা প্রধানের এমন মন্তব্যের পেছনে কোনো তথ্যপ্রমাণ কিংবা সুনির্দিষ্ট অভিযোগ নেই। তারা এক তুলিতে পুরো জাতিকে অযৌক্তিকভাবে চিত্রিত করেছে।
“বিশ্বের অনেক দেশের মত বাংলাদেশও চরমপন্থার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে। কিন্তু আইন প্রয়োগ, সামাজিক সংস্কার ও সন্ত্রাসবিরোধী অন্যান্য প্রচেষ্টার মাধ্যমে এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অংশীদারত্বের ভিত্তিতে বাংলাদেশ ধারাবাহিকভাবে এ বিষয়ে কাজ করছে।”
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় বলেছে, ‘‘আমরা গভীর উদ্বেগ ও দুঃখের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি, তিনি (তুলসী গ্যাবার্ড) বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিপীড়ন এবং দেশে ইসলামিক সন্ত্রাসীদের হুমকি সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন, যা ইসলামিক খিলাফত প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য থেকে উদ্ভূত বলে তুলে ধরেছেন। এ মন্তব্য সঠিক নয় এবং বাংলাদেশের সুনাম ও ভাবমূর্তির জন্য বিভ্রান্তিকর এবং ক্ষতিকর।”
গ্যাবার্ডের মন্তব্যে দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্কের 'কোনো সমস্যা হবে না' বলে মন্তব্য করেছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।
মঙ্গলবার এক সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, “মার্কিন গোয়েন্দা প্রধান তুলসী গ্যাবার্ডের মন্তব্যে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক সম্পর্কের কোনো সমস্যা হবে না।"
কে এই তুলসী গ্যাবার্ড?
তুলসী নাম এবং হিন্দু হওয়ার কারণে অনেকেই তাকে ভারতীয় বংশোদ্ভূত বলে ধারণা করেন।
তবে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, তিনি ভারতীয় বংশোদ্ভুত নন। তার জন্ম ১৯৮১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সামোয়ায়। বয়স ৪৩ বছর। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম হিন্দু কংগ্রেস সদস্য।
১৯৮৩ সালে তুলসী গ্যাবার্ডের পরিবার যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই রাজ্যে স্থায়ীভাবে বাস করতে শুরু করে। তার মা হিন্দু ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়েছিলেন। তার বাবা রোমান ক্যাথলিক খ্রিষ্টান ছিলেন। হিন্দু ধর্মে অনুরাগের কারণে গ্যাবার্ডের মা সন্তানের হিন্দু নাম রাখেন।
তুলসী গ্যাবার্ড হাওয়াই থেকে ২০১৩ সালে প্রথমবার এমপি হিসাবে নির্বাচিত হন। ২০২১ সাল পর্যন্ত ওই পদে ছিলেন তিনি। রাজনীতি ছাড়াও দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্রের আর্মি ন্যাশনাল গার্ডের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তুলসী। ইরাক ও কুয়েতের মতো দেশেও ওই সময় মোতায়েন ছিলেন তিনি।
২০২২ সালে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের তীব্র সমালোচনা করে ডেমোক্র্যাটিক পার্টি ছেড়েছিলেন তুলসী। তার আগে ২০২০ সালে বাইডেনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার দৌড়েও তিনি শামিল হয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ডেমোক্র্যাটিক পার্টিতে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়েছিলেন তুলসী।
প্রথমে তিনি স্বতন্ত্র হিসাবে নাম নিবন্ধন করেছিলেন। পরে ২০২৪ সালে রিপাবলিকান পার্টিতে যোগ দেন তুলসী । চলতি বছর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডনাল্ড ট্রাম্পের প্রচারাভিযানে সাহায্য করেন তিনি।
রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধের মধ্যে ইউক্রেইনকে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের বিরোধিতা করেছিলেন তুলসী। সেই জায়গা থেকে তার নতুন দায়িত্ব তাকে কোন পথে নিয়ে যায় সবার নজর সেদিকে।
তুলসীর বাবা মাইক গ্যাবার্ডও ছিলেন রাজনীতিবিদ। তিনি রিপাবলিকান থেকে ডেমোক্র্যাটদের দিকে চলে গিয়েছিলেন। ছিলেন সেনেটারও।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে ‘সংখ্যালঘু নির্যাতন’ মার্কিন উদ্বেগের ‘বড় জায়গা’: তুলসী গ্যাবার্ড
গ্যাবার্ডের মন্তব্য ‘তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে নয়’, উদ্বেগ প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের