“আমরা প্রত্যর্পণের জন্য চিঠি লিখেছি। চিঠি লেখার পর ভারত যদি শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণ না করে, তবে এটা বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের যে প্রত্যর্পণ চুক্তি, সেটার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন হবে,” বলেন তিনি।
Published : 21 Jan 2025, 09:45 PM
গুম ও গণহত্যার অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় থাকা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারত বাংলাদেশে ফেরত না পাঠালে তাতে প্রত্যর্পণ চুক্তি লঙ্ঘন হবে বলে মন্তব্য করেছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।
তিনি বলেছেন, “আমরা প্রত্যর্পণের জন্য চিঠি লিখেছি। চিঠি লেখার পর ভারত যদি শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণ না করে, তবে এটা বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের যে প্রত্যর্পণ চুক্তি, সেটার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন হবে। সেই ব্যাপারে আমরা বিশ্ব সমাজে কী পদক্ষেপ নেব, সেটা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ঠিক করা হবে।”
মঙ্গলবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কথা বলছিলেন আইন উপদেষ্টা।
ভারতে অবস্থানরত শেখ হাসিনার নামে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড অ্যালার্ট জারির উদ্যোগের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমাদের যা যা করণীয় আছে আমরা করে যাচ্ছি। আরও কিছু করণীয় থাকলে ক্ষেত্রবিশেষে চিন্তা করে আমরা অবশ্যই করব।”
প্রবল গণ আন্দোলনের মুখে গত ৫ অগাস্ট ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে সেখানেই আছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তার দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের কয়েকজন গ্রেপ্তার হলেও অধিকাংশই এখনও আত্মগোপনে রয়েছেন।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের চালানো দমন পীড়নকে ‘গণহত্যা’ বিবেচনা করে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুবনালে শেখ হাসিনাসহ অন্যদের বিচারের উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
গত ৫ জুলাই থেকে ৫ অগাস্ট পর্যন্ত সময়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্যে সারাদেশে ‘গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের’ অনেক অভিযোগ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা ও প্রসিকিউশন অফিসে জমা পড়েছে।
এর মধ্যে দুটি মামলায় শেখ হাসিনা, তার পরিবারের সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতাসহ অনেকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে ট্রাইব্যুনাল।
বিচারের মুখোমুখি করার জন্য শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়ে গত ২৩ ডিসেম্বর ভারত সরকারকে কূটনৈতিকপত্র (নোট ভারবাল) পাঠায় বাংলাদেশ সরকার।
ভারত এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো জবাব বাংলাদেশকে দেয়নি, বরং ভারতে হাসিনার ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর খবর এসেছে দেশটির সংবাদমাধ্যমে।
বিচারের গতি
এক প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, গণহত্যায় জড়িতদের বিচারের গতি নিয়ে আইন মন্ত্রণালয় ‘যথেষ্ট সন্তুষ্ট’।
তিনি বলেন, “বিচার প্রক্রিয়া অলরেডি শুরু হয়েছে। কনভেনশনাল কোর্ট ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আমাদের সম্পূর্ণ পুনর্গঠন করতে হয়েছে। প্রসিকিউটর নিয়োগ, তদন্তকারী নিয়োগ, বিচারক নিয়োগ এমনকি ভবন সংস্কার করা- সব কাজ আমাদের করতে হয়েছে। পূর্ণগতিতে বিচার চলছে, বিচারের গতি নিয়ে আমরা যথেষ্ট সন্তুষ্ট।”
আসিফ নজরুল বলেন, “আগামী দুয়েক মাসের মধ্যে আপনারা দেখবেন ঘন ঘন শুনানির ডেট পড়ছে। ঘন ঘন শুনানির ডেট পড়লে যখন আসামিদের নিজের চোখের সামনে দেখি, তখন মনে হয় বিচার হচ্ছে। কিন্তু ‘প্রি ট্রায়াল স্টেজে’ বিচারের গতি আমরা চোখে দেখি না তো। তাই মনে হয় গতিটা শ্লথ, কোনোভাবেই শ্লথ না, আমরা আপনাদের আশ্বস্ত করতে পারি।”
বিচার দ্রুত করতে ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের দ্বিতীয় শাখা’ গঠনের পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগ শেষ হয়ে গেলে আমরা এ কাজটি করব।”
সংস্কার নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমি আপনাদের একটা জিনিস ক্লিয়ার করে বলি, সংবিধানের সঙ্গে সংঘর্ষমূলক কোনো সংস্কার আমরা করছি না আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে। সংবিধান সংস্কার কমিশন যেটা বলেছে, ওটা সংবিধান সংশোধনের বিষয়ে, ওগুলোতে আমরা হাত দেব না।
“সংবিধান সংশোধনের কোনো ক্ষমতা আইন মন্ত্রণালয়ের নাই। আমার শুধু সেই সংস্কারগুলো করছি, যেগুলোর সঙ্গে রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানের শক্তি ও সক্ষমতা জড়িত এবং যেগুলোর ব্যাপারে ব্যাপক ঐক্যমত্য বহু বছর ধরে সমাজে প্রতিষ্ঠিত।”
আইন উপদেষ্টা বলেন, “সংবিধান সংস্কার কমিশনের রিপোর্টের ভিত্তিতে কী হবে তা সম্পূর্ণভাবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ডিসাইড করবে। উনারা কীভাবে করবে, নির্বাচনের আগে একটা জাতীয় দলিল করবে কিনা, বা গণপরিষদ নির্বাচন করবে কিনা, একইসাথে পার্লামেন্ট ও গণপরিষদ দুইটার নির্বাচনই করে ফেলল, আপনি নির্বাচিত হলে পার্লামেন্টের মেম্বারও থাকলেন গণপরিষদের মেম্বারও থাকলেন, সে প্রক্রিয়া যাবেন কিনা- এটা জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ঠিক করবেন।
“নির্বাচনি সংস্কারের কিছু বিষয় আছে, যেটা সংবিধান পরিবর্তনের সঙ্গে সম্পর্কিত না। সেটায় যদি রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্য পোষণ করে অবশ্যই এ সরকারের আমলে হয়ে যাবে ওটা।”
আওয়ামী লীগ সরকারের দেড় দশকে ২৫ জেলায় আড়াই হাজারের বেশি ‘গায়েবি মামলা’ হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “বহু গায়েবি মামলা হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার পাবলিক প্রসিকিউটর নিয়োগ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এসব মামলা চিহ্নিত করার কাজ শুরু হয়।
“তবে এই উদ্যোগ (গায়েবি মামলা প্রত্যাহার) নিতে দেরি হয়েছে। এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ২৫ জেলায় আড়াই হাজারের বেশি মামলাকে গায়েবি হিসেবে চিহ্নিত করতে পেরেছি। এর বাইরেও অনেক থাকতে পারে। আগামী সাত দিনের মধ্যে এগুলো প্রত্যাহারের উদ্যোগ নেওয়া হবে।”