সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল ও এমপি জ্যাকব ফের রিমান্ডে

আনিসুল হককে পাঁচ দিন এবং জ্যাকবকে তিন দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত।

আনিসুল হক ও আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব

ঢাকার দুই হত্যা মামলায় সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে পাঁচ দিন এবং ভোলা-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবকে তিন দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত।

বুধবার পুলিশের পৃথক আবেদনের শুনানি নিয়ে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইমরান আহম্মেদ এ আদেশ দেন।

আনিসুল ও জ্যাকবকে এদিন আদালতে হাজির করে ১০ দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে পুলিশ।

এদের মধ্যে আনিসুল হককে ঢাকার উত্তরা পূর্ব থানায় পোশাককর্মী ফজলুল করিম হত্যা মামলায় এবং জ্যাকবকে রূপনগর থানার শামীম হাওলাদার হত্যা মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড আবেদন করা হয়।

অন্যদিকে, আসামিপক্ষের আইনজীবীরা রিমান্ড আবেদনের বিরোধিতা করে তাদের জামিন চেয়ে আবেদন করে। উভয়পক্ষের বক্তব্য শুনে আদালত আদেশ দেয়।

শুনানিতে আনিসুল হক কোন কথা বলেননি। তবে বিচারক জ্যাকবের কাছে তার কিছু বলার আছে কি না জানতে চান। জ্যাকব তখন বলেন,“আমি ভোলা থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছি। ওই এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বললে জানতে পারবেন আমি কেমন মানুষ। আমার এলাকায় এখন পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। সেখানে অনেক উন্নয়ন করেছি। যে মামলায় আমাকে আসামি করা হয়েছে, বাদী নিজেও স্বীকার করেছে তিনি ভুল করেছেন।”

এই মামলায় নাম-ঠিকানা ভুল লেখা হয়েছে দাবি করে জ্যাকব বলেন, “আমাকে কষ্ট দেওয়া এবং হয়রানি করার উদ্দেশ্যে এই মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয়েছে। আমি কিছুই জানি না, আমি সম্পূর্ণ নির্দোষ। আমি রূপনগর এলাকায় কখনও যাইনি। আমার রিমান্ড নামঞ্জুর করেন স্যার। আপনি ন্যায়বিচার করবেন।”

পরে শুনানি শেষে বিচারক জামিন আবেদন নাকচ করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

আনিসুল হকের বিরুদ্ধে করা মামলার এজাহারে বলা হয়, গত ৫ অগাস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেন ফজলুল করিম। এসময় তিনি গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন। তাকে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

ওই ঘটনায় নিহতের ভাই বাদী হয়ে রাজধানীর উত্তরা পূর্ব থানায় ৪০ জনের নামে মামলা করেন।

গত ১৩ অগাস্ট ঢাকার সদরঘাট এলাকা থেকে আনিসুল হককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরদিন নিউ মার্কেট থানার হত্যা মামলায় তাকে ১০ দিনের রিমান্ডে পাঠায় আদালত।

জ্যাকবের মামলার এজাহারে বলা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত ২০ জুলাই রাজধানীর রূপনগর থানাধীন প্রবেশিকা মোড় এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন শামীম হাওলাদার। তাকে উদ্ধার করে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

এ ঘটনায় শামীমের চাচাত ভাই সম্রাট হাওলাদার রূপনগর থানায় হত্যা মামলা করেন। এ মামলায় জ্যাকব এজাহারনামীয় ১২২ নম্বর আসামি।

ভোলা-৪ (চরফ্যাশন-মনপুরা) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য জ্যাকবকে গত ১ অক্টোবর

ঢাকার গুলশান থেকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। ওই দিন হত্যাচেষ্টা মামলায় তাকে সাত দিনের রিমান্ডে পাঠায় আদালত।

আনিসুল-সালমানসহ ৭ জন নতুন মামলায় গ্রেপ্তার

এদিকে সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান, জাসদ সভাপতি ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী দীপু মনি, সাবেক শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার এবং শাজাহান খানের ছেলে আসিবুর রহমান খানকে রাজধানীর ৫ থানার পৃথক মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

বুধবার আদালতে তাদের গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করা হলে শুনানি নিয়ে ঢাকা মহানগর হাকিম ইমরান আহমেদ তা মঞ্জুর করেন।

এরমধ্যে রাজধানীর পল্টন থানার যুবদল নেতা শামীম হত্যা মামলায় দীপু মনিকে, উত্তরা পশ্চিম থানাধীন আমির হোসেন হত্যা মামলায় হাসানুল হক ইনু ও আনিসুল হককে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

বাড্ডা থানার রফিকুল ইসলাম হত্যা মামলায় শাজাহান খান ও তার ছেলে মাদারীপুর সদর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আসিবুর রহমান খানকে; শাহজাহানপুর এলাকায় বিএনপি কর্মী সৈয়দ হাসান মাহমুদকে হত্যাচেষ্টা ও অপহরণের মামলায় আনিসুলকে হক গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

এছাড়া মিরপুর থানাধীন এলাকায় মাদরাসা শিক্ষার্থী ও কিশোর মিজানুর রহমান হত্যা মামলায় কামাল আহমেদ মজুমদারকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছেন আদালত।