নিম্নমানের ইভিএম কেনার অভিযোগটি কার তরফে এসেছে, সে বিষয়ে কোনো তথ্য দেয়নি দুদক।
Published : 26 Jan 2025, 06:16 PM
বছর সাতেক আগে নির্বাচন কমিশনের কেনা ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মান ঠিকঠাক ছিল কিনা, তা পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
রোববার নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে দুদকের সহকারি পরিচালক নুর আলম সিদ্দিকী বলেন, “নিম্নমানের ইভিএম কেনার একটি অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আজ ‘এনফোর্সমেন্ট’ অভিযান চালানো হয়।
“এর অংশ হিসেবে দ্বৈবচয়ন ভিত্তিতে (র্যানডম) আমরা ইসিতে সংরক্ষিত মেশিনগুলোর মধ্যে তিনটি পরীক্ষা করে দেখি। এর একটিতে যান্ত্রিক ত্রুটি পেয়েছি; বাকি দুটো ভালো।”
তিনি বলেন, “তৎকালীন কমিশন ২০১৮ সালে এক লাখ ৫০ হাজার ইভিএম কেনে। এর মধ্য এক লাখ ৫০০ মেশিন ব্যবহারের অুনপযোগী রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
“ইসি তিন জায়গায় এগুলো সংরক্ষণ করেছে। এর মধ্যে ইসিতে ৬১৮টি; প্রায় ৮৬ হাজার রয়েছে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরিতে (বিএমটিএফ) এবং ১০ আঞ্চলিক কার্যালয়ে রয়েছে প্রায় ৬২ হাজার ইভিএম।”
তদন্তের প্রয়োজনীয় তথ্যউপাত্ত সংগ্রহে ইসির জ্যেষ্ঠ সচিব ও কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথাও বলেছে দুদকের এনফোর্সমেন্ট টিম।
নুর আলম সিদ্দিকী বলেন, “নিম্নমানে মেশিন কেনার অভিযোগের ব্যাপারে কিছু রেকর্ড সংগ্রহ করেছি। আরও তথ্য-উপাত্ত প্রয়োজন। বাকি রেকর্ডপত্রের জন্য রিক্যুজিশন দিয়েছি। সেগুলো যাচাই-বাছাই শেষে প্রতিবেদন জমা দেব।”
নিম্নমানের ইভিএম কেনার অভিযোগটি কার তরফে এসেছে, সে বিষয়ে সে বিষয়ে কোনো তথ্য দেননি দুদকের এই কর্মকর্তা।
২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে নানা অভিযোগ তদন্তে দুদকের সিদ্ধান্তের পরই এ অভিযান চালানো হল।
দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন বুধবার সাংবাদিকদের জানান বলেন, শেখ হাসিনার আমলে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘ক্ষমতার অপব্যবহার, অপরাধমূলক অসদাচরণ, জাল-জালিয়াতি, দিনের ভোট রাতে করা এবং আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে’ সংসদ সদস্য নির্বাচনের অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
ইভিএম যাত্রার দেড় দশক
>> ২০১০ সালে ইভিএম চালুর পর স্থানীয় নির্বাচনেই তা ব্যবহার হচ্ছিল। এটিএম শামসুল হুদা কমিশন সিটি করপোরেশনে বড় পরিসরে ব্যবহার করেছিল। কিন্তু সংসদ নির্বাচনে নিতে পারেনি।
>> ২০১২ সালে কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন ইসি আগের ইভিএমকে অনেকটা অকেজো অবস্থায় ফেলে গিয়েছিল। তখন সিটি নির্বাচনেও ইভিএম ব্যবহার হোঁচট খায়।
>> এরপর কে এম নূরুল হুদার কমিশন নতুন করে ইভিএম নিয়ে এগোয়। ৩ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে দেড় লাখ ইভিএম কেনার প্রকল্প অনুমোদন পায়। আইন সংশোধন করে ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে ছয়টি সংসদীয় আসনে ইভিএম ব্যবহারও করা হয়।
>> এসব যন্ত্রের আয়ুষ্কাল ১০ বছর ধরা হলেও পাঁচ বছরের মাথায় অধিকাংশ ইভিএম অকেজো হয়ে যায়। সেগুলো মেরামতে বড় অঙ্কের অর্থের সংস্থান আর পরে হয়নি।
>> এর মধ্যেও কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন স্থানীয় সরকারের সিংহ ভাগ নির্বাচন আয়োজন করে ইভিএমে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অন্তত দেড়শ আসনে ইভিএমে ভোট করার পরিকল্পনা ছিল ইসির।
>> তবে কোভিড পরবর্তী সময়ে আর্থিক সংকটের মধ্যে আরও দুই লাখ নতুন ইভিএম কেনার প্রস্তাবে সরকার সায় দেয়নি। ফলে দ্বাদশ সংসদে ইভিএম ব্যবহারের পরিকল্পনা থেকে সরে আসে ইসি।