চক্রের বেল্লাল চাকলাদার মতিঝিল ৯নং ওয়ার্ডের যুবলীগের সভাপতি।
Published : 10 Feb 2025, 03:30 PM
গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে রাজধানীর ধানমন্ডি ও মোহাম্মদপুর থেকে পামওয়েল ও সয়াবিন তেলবোঝাই দুইটি ট্রাক ডাকাতি করা চক্রের ১২ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গত মাসে 'একই কায়দায়' দুটি ট্রাক ডাকাতির ঘটনার তদন্তে নেমে এই চক্রকে ধরেছে ধানমন্ডি থানা পুলিশ।
গ্রেপ্তাররা হলেন- মো. মঞ্জু (৪০), সাইফুল ইসলাম (৪০), মো. রাসেল (২৮), মো. জাহিদ (২৪), মো. জাকির প্রকাশ তৌহিদ (৪০), মো. ইসমাইল হোসেন (৩৩), মো. হিরা শেখ (৩৫), মো. রফিক (৩৫), মো. বাধন (৩০), চাঁন মিয়া (৫৪), বেল্লাল চাকলাদার (৪৫) ও মো. আসলাম খাঁন (৪৫)।
রমনা বিভাগের উপ কমিশনার মো. মাসুদ আলম জানিয়েছেন, এর মধ্যে বেল্লাল চাকলাদার মতিঝিল ৯নং ওয়ার্ডের যুবলীগের সভাপতি; তার নামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘটনায় যাত্রাবাড়ী থানায় একটি ও উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি হত্যা মামলা আছে।
এই চক্রের সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা শহরে ডাকাতি করে আসছিল বলে ভাষ্য এই পুলিশ কর্মকর্তার।
ঢাকার মগবাজার, মহাখালী, শনির আখরা, কেরানীগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তারের পর তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মুন্সিগঞ্জের বিসিক এলাকার গোডাউন থেকে ১০টি তেল ভর্তি ড্রাম ও ৩৬টি খালি তেলের ড্রাম উদ্ধার করেছে পুলিশ।
এছাড়া, ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত একটি সাদা গাড়ি, একাধিক বাটন ফোন ও একটি ট্রাকও উদ্ধার করা হয় বলে জানিয়েছেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।
সোমবার দুপুরে ঢাকার মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে চক্রের কর্মকাণ্ড তুলে ধরেন উপ কমিশনার মো. মাসুদ আলম।
তিনি বলেন, "আব্দুল কাদের নামে এক ট্রাক ব্যবসায়ীর চারটি ট্রাক আছে। গত ২ জানুয়ারি সন্ধ্যায় তার ট্রাক ড্রাইভার মো. নয়ন ও হেলপার মো. জামিরুল ইসলাম পামঅয়েল বোঝাই ৬০টি ড্রাম একটি ট্রাকে নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার উদ্দেশে রওনা করে।
"৩ জানুয়ারি রাত সাড়ে তিনটার দিকে ধানমন্ডি মডেল থানাধীন মিরপুর রোডের 'হোটেল আড্ডার' সামনে ৭-৮ জনের একটি দল দুটি মাইক্রোবাসে করে এসে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে সিগন্যাল দিয়ে ট্রাকটি আটকায়। এদের দুইজন লেজার লাইট ও ওয়াকিটকিসহ সাদা পোশাকে নেমে নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে ট্রাকের কাগজপত্র দেখতে চায়।"
পুলিশ কর্মকর্তা মাসুদ বলেন, "এক পর্যায়ে পিস্তল ঠেকিয়ে ড্রাইভার হেলপারসহ তেলবাহী ট্রাকটি নিয়ে অজ্ঞাত স্থানে চলে যায় তারা। পরে ড্রাইভার ও হেলপারকে চেতনানাশক ওষুধ সেবন করিয়ে হাত ও চোখ বেঁধে কেরানীগঞ্জের রসুলপুর এলাকায় ফেলে দেয়। “
ওই ঘটনার পর ট্রাক ব্যবসায়ী আব্দুল কাদের গত ৭ জানুয়ারি অজ্ঞাতনামা ৭ থেকে ৮ জনকে আসামি করে ধানমন্ডি থানায় একটি মামলা করেন।
এর ১৯ দিন পর গত ২২ জানুয়ারি রাত তিনটার দিকে একই সড়কের রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল এন্ড কলেজ গেইটের সামনে 'একই কায়দায়' আরেকটি ডাকাতির কথা তুলে ধরেন উপ কমিশনার মাসুদ।
তিনি বলেন, "সেদিন ৭৫ ড্রাম সয়াবিন তেল বোঝাই একটি ট্রাক ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ডাকাতি করে নিয়ে যায়, যে ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় একটি মামলা হয়।"
মামলা তদন্তে জড়িতদের অবস্থান শনাক্ত করে গত ৩০ জানুয়ারি ঢাকার মগবাজার এলাকা থেকে মঞ্জু, সাইফুল ইসলাম, রাসেল ও জাহিদকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পরে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রোববার ডাকাতির মূল হোতা মো. জাকির প্রকাশ তৌহিদকে ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
একইদিন কেরানীগঞ্জ, মহাখালী, মুন্সিগঞ্জ, শনির আখড়া থেকে ইসমাইল হোসেন, হিরা শেখ, রফিক, বাধন, চাঁন মিয়া, বেল্লাল চাকলাদার ও আসলাম খাঁনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তাররা আন্তঃজেলা ডাকাত দলের 'সক্রিয় সদস্য' জানিয়ে উপ কমিশনার মাসুদ বলেছেন, তাদের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় একাধিক ডাকাতির মামলা রয়েছে।
“এই ১২জনই ধানমন্ডি ও মোহাম্মদপুরের দুইটি ডাকাতি করেছে।“
মূল হোতা জাকির প্রকাশ তৌহিদের বিরুদ্ধে ১০টি, জাহিদের বিরুদ্ধে ৮টি, হিরা শেখ ও রফিকের বিরুদ্ধে ৬টি করে, মঞ্জুর বিরুদ্ধে ৫ টি, চাঁন মিয়ার বিরুদ্ধে ৪টি ও বেল্লাল চাকলাদারের বিরুদ্ধে ৩টি মামলার তথ্য পেয়েছে পুলিশ।
কোনো জায়গায় ডাকাতির আগে এই চক্রের সদস্যরা একটি নির্দিষ্ট জায়গায় একত্রিত হত বলে পুলিশ তদন্তে জেনেছে।
উপ কমিশনার মাসুদ বলেন, “ডাকাতির সময় সাধারণত বাটন মোবাইল ফোন ব্যবহার করে, ডাকাতি শেষে মোবাইল ফোন সীমসহ ফেলে দিয়ে নিজ নিজ এলাকায় ফিরে যেতেন।"
এই ডাকাতির সঙ্গে জড়িত আরো কয়েকজনকে গ্রেপ্তারসহ মালামাল উদ্ধারে পুলিশের অভিযান চলছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।