বৃষ্টি শুরু হতেই মেলায় দর্শনার্থীদের ছোটাছুটি দেখা যায়, বাতাস উড়িয়ে নেয় ব্যানার-ফেস্টুন।
Published : 22 Feb 2025, 11:43 PM
অমর একুশে বইমেলার সন্ধ্যায় হঠাৎ বৃষ্টিতে নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটলেন দর্শনার্থীরা, বিক্রয়কর্মীরা ব্যস্ত হলেন বই বাঁচাতে, ‘ছন্দপতন’ হল বেচাকেনায়।
শনিবার মেঘলা আকাশ আর বাতাসের মতিগতি দেখেই বৃষ্টির ঠাহর করেছিলেন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা; সেজন্য আগে থেকেই বই বাঁচানোর পদক্ষেপও নিয়ে রেখেছিলেন। এতে ক্ষতির মুখে পড়তে হয়নি তাদের।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও শহীদ দিবসের পরদিন বইমেলায় এমন বিড়ম্বনায় পড়েন ক্রেতা-দর্শনার্থীরা। গত বছর বইমেলারও ঠিক একই দিনে বৃষ্টি নেমেছিল মেলায়।
শনিবার মেলা শুরু হয় সকাল ১১টায়, চলে রাত ৯টা পর্যন্ত। সকাল সাড়ে ১০টায় বইমেলার মূলমঞ্চে শিশুকিশোর চিত্রাঙ্কন, আবৃত্তি ও সংগীত প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার দেওয়া হয়। বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত মেলায় ছিল শিশুপ্রহর।
সকাল থেকে সমাগম খুব বেশি না হলেও বিকালে ভিড় বাড়তে থাকে। কিন্তু সন্ধ্যা ৬টার দিকে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টির সঙ্গে শুরু হয় ঝড়ো বাতাস। সেসময় বিভিন্ন স্টল বিক্রি বাদ দিয়ে বই গোছানো শুরু করেন। কেউ পলিথিন, কেউ ত্রিপল দিয়ে ঢেকে দেন বই।
শনিবার বৃষ্টি হতে পারে, সেই আভাস আগেই ছিল। মেলার তথ্যকেন্দ্র থেকেও প্রকাশনা সংশ্লিষ্টদেরকে সতর্ক করা হয়।
সন্ধ্যায় বৃষ্টি শুরু হতেই মেলায় দর্শনার্থীদের ছোটাছুটি দেখা যায়। বাতাস উড়িয়ে নেয় ব্যানার-ফেস্টুন। লেখক বলছি মঞ্চ ও তথ্য কেন্দ্রের ছাউনির নিচে আশ্রয় নিতে মেলার মাইকে ঘোষণা আসে। কেউ কেউ বাংলা একাডেমির সামনের সড়কে মেট্রোরেল স্টেশনেও আশ্রয় নেন।
প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ঐতিহ্যের ব্যবস্থাপক আমজাদ হোসেন কাজল বলেন, “বৃষ্টি হলে মেলায় তো ব্যাঘাত ঘটবেই। এজন্য আমরা তো আশা করি মেলা চলাকালে বৃষ্টি না হোক।”
মেলায় ঘণ্টাখানেকের বৃষ্টিতে খুব বেশি ক্ষতি হয়নি বলেও জানান কথাপ্রকাশের বিপণন কর্মকর্তা শেখ ইউনূস।
বৃষ্টির কারণে কিছু প্রকাশনীর স্টল ত্রিপল দিয়ে পুরোপুরি ঢেকে রাখা হয়। আবার কিছু স্টলে বই সাজিয়ে ক্রেতার জন্য অপেক্ষা করেন বিক্রয়কর্মীরা।
কথাপ্রকাশের শেখ ইউনূস বলেন, “বৃষ্টি শুরুর আগে ভালোই বিক্রি হচ্ছিল। বৃষ্টি থেমে যাওয়ার পর লোকজনের চাপ কমে গেছে। তবে যারা এসেছেন, তাদের কেউ কেউ বইও কেনেন।”
‘স্বপ্ন ৭১’ এর প্রকাশক আবু সাঈদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের স্টলের চালের ফুটো দিয়ে পানি পড়ে ২০/২৫টি বই ভিজেছে। বৃষ্টির পর আর বিক্রিও তেমন হয়নি।”
বইমেলার জনসংযোগ বিভাগ বলছে, শনিবার মেলায় নতুন বই এসেছে ১৪৪টি।
পুরস্কার
সকাল সাড়ে ১০টায় বইমেলার মূলমঞ্চে শিশুকিশোর চিত্রাঙ্কন, আবৃত্তি ও সংগীত প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার দেওয়া করা হয়।
চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় ক-শাখায় হয় সৈয়দ আননুর হায়দার, দ্বিতীয় হয় মুহাম্মদ শাহরিয়াদ রহমান শিহাব, তৃতীয় হয় ওয়াফিয়া নূর।
খ-শাখায় প্রথম হয় আসবাহ রহমান, দ্বিতীয় হয় মুহাম্মদ শাহরিয়ার রহমান হাবিব, তৃতীয় হয় দীপান্বিতা নন্দী।
গ-শাখায় প্রথম হয় নুজহাত সালসাবিল মুন, দ্বিতীয় হয় জায়ান দেওয়ান, তৃতীয় হয় মায়মুনা চৌধুরী ফাইজা।
শিশুকিশোর আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় ক-শাখায় প্রথম হয় ফাবলিহা মোস্তাক আরওয়া, দ্বিতীয় হয় মাহরীন নাওয়ার এবং তৃতীয় হয় মেহজারিন ইসলাম রূপকথা।
খ-শাখায় প্রথম হয় বেহজারিন হাসান তারফি, দ্বিতীয় হয় শরীফ ইবতিহাজ ইসলাম এবং তৃতীয় হয় সুনিপুণ বড়ুয়া চৌধুরী। গ-শাখায় প্রথম হয় নুজহাত করিম ফাইজা, দ্বিতীয় হয় আবদুল্লাহ আল হাসান মাহি এবং তৃতীয় হয় তাজকিয়া সমৃদ্ধি সূচনা।
শিশুকিশোর সংগীত প্রতিযোগিতায় ক-শাখায় প্রথম হয় আরোহী বর্ণমালা, দ্বিতীয় হয় লাইসা নূর বিনতে রহমান এবং তৃতীয় হয় তাহানি আবসি।
খ-শাখায় প্রথম হয় নীলান্তি নীলাম্বরি তিতির, দ্বিতীয় হয় সার্থক সাহা এবং তৃতীয় হয় অনিরুদ্ধ ধর। গ-শাখায় প্রথম হয় রোদসী নূর সিদ্দিকী, দ্বিতীয় হয় তানজিম বিন তাজ প্রত্যয় এবং তৃতীয় হয় তোকি ইয়াসার আয়মান।
পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম, সচিব মো. সেলিম রেজা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান উপস্থিত ছিলেন।
বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে হয় “কায়কোবাদের সাহিত্যে ‘শ্মশানে’র চিত্রাবলি” আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইমরান কামাল। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন হাবিব আর রহমান।
সাংস্কৃতিক পর্বে কবিতা আবৃত্তি করেন মালেক মুস্তাকিম, শাহনাজ পারভীন, মোশাররফ হোসেন খান এবং মমতাজ রহমান। আবৃত্তি পরিবেশন করেন লায়লা পারভীন কেয়া, নায়লা তারাননুম চৌধুরী এবং শাহিদা পারভীন রেখা।
রোববার যা থাকছে
বইমেলার ২৩তম দিন রোববার মেলা শুরু হবে বিকাল ৩টায় এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে হবে ‘গণঅভ্যুত্থান ও নারী’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন মির্জা তাসলিমা সুলতানা। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন শাওলী মাহবুব এবং মুশাররাত শর্মি হোসেন। সভাপতিত্ব করবেন রেহনুমা আহমেদ।