বৃহস্পতিবার আদালতের সামনে বাদীকে পাওনা টাকা ফেরত দেন আসামিরা।
Published : 23 May 2024, 06:54 PM
বাদীর সঙ্গে আপস রফায় গিয়ে চেক প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের এক মামলা থেকে রেহাই পেয়েছেন ই-কমার্স কোম্পানি ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ রাসেল এবং তার স্ত্রী, কোম্পানির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন।
ঢাকার মহানগর হাকিম শেখ সাদি বৃহস্পতিবার এ মামলা নিষ্পত্তি করে দেন।
বাদীপক্ষের আইনজীবী আবু তাহের রনি বলেন, এ মামলায় দুজনের সাক্ষ্য গ্রহণ করে আদালত। গত ২৪ এপ্রিল যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায়ের জন্য ২৩ মে তারিখ রাখা হয়।
“সাজার ভয়ে আসামিপক্ষ আপস প্রস্তাব দেয়। এতে রাজি হন বাদী। সে অনুযায়ী তাকে আবার আদালতে ডাকা হয়। বৃহস্পতিবার আদালতের সামনে বাদীকে পাওনা টাকা ফেরত দেন তারা। তখন আদালত আসামিদের খালাস দেয়।”
মামলার অভিযোগে বলা হয়, বাদী আলী রেজা ফারুক ২০২১ সালের ২৯ নভেম্বর একটি বাইক কেনা বাবদ ইভ্যালিকে ২ লাখ ৯৬ হাজার ৩৪৮ টাকা নগদ ও বিকাশে পরিশোধ করেন। নির্ধারিত সময়ে বাইক দিতে না পারায় টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলে আলী রেজা ফারুককে একটি চেক দেয় ইভ্যালি।
২০২২ সালের ১৬ জানুয়ারি ব্যাংকে জমা দিলে চেকটি প্রত্যাখ্যাত হয় বলে অভিযোগ করেন বাদী ফারুক। বিষয়টি জানিয়ে ইভ্যালির সঙ্গে যোগাযোগ করেন তিনি। ইভ্যালি তখন টাকা ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু এরপর গড়িমসি শুরু করে।
লিগ্যাল নোটিস পাঠিয়েও টাকা ফেরত না পেয়ে ফারুক দণ্ডবিধির ৪০৬ ও ৪২০ ধারায় আদালতে মামলা করেন।
২০১৮ সালের ডিসেম্বরে যাত্রা শুরুর পর গাড়ি, মোটরসাইকেল, আসবাবপত্র, স্মার্ট টিভি, ফ্রিজ, এসি, ওয়াশিং মেশিনের মত পণ্য অর্ধেক দামে বিক্রির বিজ্ঞাপন দিয়ে সাড়া ফেলে অনলাইন মার্কেট প্লেস ইভ্যালি।
ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মটির চটকদার অফারের ‘প্রলোভনে’ অনেকেই বিপুল অংকের টাকা অগ্রিম দিয়ে পণ্যের অর্ডার করেছিলেন পরে বেশি দামে বিক্রি করে ভালো লাভ করার আশায়। কিন্তু মাসের পর মাস অপেক্ষা করেও তাদের অনেকে পণ্য বুঝে পাননি; ইভ্যালি অগ্রিম হিসেবে নেওয়া টাকাও ফেরত দেয়নি।
এক পর্যায়ে ক্রেতা ও পণ্য সরবরাহকারীদের কাছে ৫৪৩ কোটি টাকার দায়ে পড়ে ইভ্যালি। এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনার মধ্যে ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে ইভ্যালিসহ আরও বেশ কিছু ইকমার্স কোম্পানির বিরুদ্ধে প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে বিক্ষোভে নামে গ্রাহকরা।
সেই থেকে রাসেল ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে কয়েক ডজন মামলা হয়। ‘প্রতারণার শিকার’ আলী রেজা ফারুকের মামলাটি সেগুলোরই একটি।
গত ৪ মার্চ ঢাকা মহানগর হাকিম বেগম ফারাহ দিবা ছন্দার আদালত তিন মামলায় রাসেল ও শামীমার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। ওই তিন মামলার বাদী তানভীর আহমেদ, মোহাম্মদ মঈন উদ্দিন ও তৌফিক মাহমুদ একই ধরনের প্রতারণার শিকার হওয়ার অভিযোগ করেছিলেন।
এর তিন দিন পর ৭ মার্চ একই আদালত ৫ লাখ টাকার চেক প্রতারণা ও বিশ্বাস ভঙ্গের এক মামলায় রাসেল ও শামীমার সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশন দেয়। ওই মামলার বাদী ইভ্যালির গ্রাহক মুজাহিদ হাসান ফাহিম।
একই ধরনের অভিযোগে ইভ্যালির আরেক গ্রাহক তোফাজ্জল হোসেনের করা মামলায় গত ২৮ মার্চ ঢাকার ষষ্ঠ যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ হুমায়ুন কবির রাসেল ও শামীমার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।
মামলার বোঝা নিয়ে আগেই জেল খেটেছেন রাসেল ও শামীমা। ২০২২ সালের ৬ এপ্রিল শামীমা এবং ২০২৩ সালের ১৯ ডিসেম্বর রাসেল জামিনে কারামুক্ত হন। তারা আবার ইভ্যালির কার্যক্রম শুরুর চেষ্টা চালাচ্ছেন।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ১৯ মে ঢাকার কারওয়ান বাজারে তাদের কার্যালয়ে ইকমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে প্রাপ্ত অভিযোগ নিষ্পত্তি এবং পেমেন্ট গেটওয়েতে আটকে থাকা অর্থ পরিশোধ বিষয়ে পর্যালোচনা সভার আয়োজন করে। সেই সভাতেও যোগ দেন ইভ্যালির রাসেল।
সভা শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, “ইভ্যালিতে গ্রাহকরা অলরেডি কেনাকাটা শুরু করেছে। আমি আশা করছি ইভ্যালির কোনো গ্রাহক কোনো ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হবে না। যারা আমাদের কাছে টাকা পায়, আমরা আমাদের মুনাফা থেকে ৫০ লক্ষ টাকা তাদের দিয়ে দিয়েছি। বাকি সবাইকে দিতে একটু সময় লাগবে শুধু।
“আগের চেয়ে বেশি শক্তিশালী হয়ে আমরা সকলের টাকা ফেরত দেব। ৬ মাসের ভেতরে একটা বড় পরিবর্তন দেখবেন আপনারা। আর সবার টাকা ফেরত দিতে আমাদের ২ বছর সময় লাগবে।”
ভোক্তা অধিকারের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান জানান, ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে গ্রাহকদের আটকে থাকা ৫৩৫ কোটির মধ্যে ৪০৭ কোটি টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে। ১২৭ কোটি টাকা ফেরত দেওয়া হয়নি।
“বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী মহোদয় এটার সমাপ্তি চাচ্ছেন। আমরাও আর ঝুলন্ত অবস্থা চাচ্ছি না।”
তিনি বলেন, “৩০ জুনের মধ্যে এর একটা সুনির্দিষ্ট উপায় বের করব। আমরা বিশ্বাস করি ই-কমার্সকে এগিয়ে নিতে হবে। তাই একজন (ইভ্যালির রাসেল) ২৭ মাস, আরেকজন (ইভ্যালির শামীমা) ৬ মাস জেল খেটেছেন, তাদেরকে নিয়েও আজ মিটিং করেছি।”