আটকে গেল সোহেল রানার জামিন

২০১৩ সালে এই সোহেল রানার মালিকানাধীন ভবন রানা প্লাজা ধসে হাজারো পোশাক শ্রমিকের মৃত্যু সারাবিশ্বে আলোড়ন তুলছিল।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 April 2023, 09:26 AM
Updated : 9 April 2023, 09:26 AM

রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানাকে হাই কোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিত করে দিয়েছেন আপিল বিভাগের চেম্বার জজ।

হাই কোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের শুনানি করে চেম্বার বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী রোববার এই স্থগিতাদেশ দেন।

২০১৩ সালে এই সোহেল রানার মালিকানাধীন ভবন রানা প্লাজা ধসে হাজারো পোশাক শ্রমিকের মৃত্যু সারাবিশ্বে আলোড়ন তুলছিল।

ভবন ধসের পাঁচ দিন পর রানা গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। এত শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনায় তার বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগে মামলা হয়েছিল। আরও কয়েকটি মামলায়ও গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছিল তাকে।

রাষ্ট্রপক্ষে এদিন শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারোয়ার হোসেন বাপ্পী। সোহেল রানার পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. কামরুল ইসলাম।

আইনজীবী কামরুল পরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আগামী ৮ মে পর্যন্ত স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছে। সেদিন জামিন বিষয়ে আপিল বেঞ্চে শুনানি হবে।”

আর সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ সাইফুল আলম আদালতপাড়ার সাংবাদিকদের বলেন, “হাই কোর্টের জামিনের আদেশের ওপর সুপ্রিম কোর্টের স্থগিতাদেশ চেয়েছিলাম আমরা। অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনায় সোহেল রানা এই মামলায় জামিন পাওয়ার যোগ্য নন।

“সুপ্রিম কোর্ট চেম্বার আদালতের এই সিদ্ধান্তের পর (জামিন স্থগিত) আর কারাগার থেকে বের হতে পারবেন না সোহেল রানা।”

সোহেল রানার জামিন প্রশ্নে এক রুলের শুনানি করে বিচারপতি আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি শাহেদ নুরউদ্দিনের হাই কোর্ট বেঞ্চ গত ৬ এপ্রিল সোহেল রানাকে জামিন দেয়। ফলে ১০ বছর ধরে কারাবন্দি রানার মুক্তির সুযোগ তৈরি হলেও চেম্বার বিচারপতির সিদ্ধান্তে তা আটকে গেল।

Also Read: রানা প্লাজার সোহেল রানার জামিন

Also Read: রানা প্লাজা ধস: হত্যা মামলায় ৯ বছরে কেবল বাদীর সাক্ষ্যগ্রহণ

আইনজীবী কামরুল এর আগে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, এ মামলায় তার মক্কেল ১০ বছর ধরে কারাগারে রয়েছেন। এ মামলার ৫৯৪ জন সাক্ষী আছেন। কিন্তু গত ১০ বছরে মাত্র ৩৫ জন সাক্ষীর বক্তব্য রেকর্ড করা হয়েছে। মামলার মোট ৩৮ আসামির মধ্যে সোহেল রানা ছাড়া বাকি ৩৭ জন এখন জামিনে।

“ভবন নির্মাণে অবহেলার অভিযোগে মামলা হয়েছে, হত্যার অভিযোগে মামলা হয়েছে আমার মক্কেলের বিরুদ্ধে। সোহেল রানা এর আগে বাকি ৫ থেকে ৭টি মামলায় হাই কোর্ট ও নিম্ন আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন। রানা প্লাজা ধসে যাওয়ার ঘটনায় সোহেল রানার দায় অবশ্যই আছে। কিন্তু তার বিচার পাওয়ার অধিকার আছে।”

২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভার বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন ১০ তলা রানা প্লাজা ভবন ধসে পড়ে। ওই ভবনে থাকা কয়েকটি পোশাক কারখানার ৫ হাজারের মতো শ্রমিক তার নিচে চাপা পড়েন।

কয়েকদিনের উদ্ধার তৎপরতায় ১ হাজার ১৩৬ জনের লাশ তুলে আনা হয়। ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে ২ হাজার ৪৩৮ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। তার মধ্যে প্রায় দুই হাজার শ্রমিক আহত ও পঙ্গু হন।

ঘটনার পাঁচদিন পর ২৯ এপ্রিল ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পথে সোহেল রানাকে যশোরের বেনাপোল থেকে গ্রেপ্তারের কথা জানায় র্যাব।

ওই ঘটনায় সাভার থানার তৎকালীন এসআই ওয়ালী আশরাফ ভবন নির্মাণে অবহেলা ও ত্রুটিজনিত কারণে বিপুল সংখ্যক মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়ার অভিযোগে মামলা করেন।

মামলায় ভবন মালিক রানা ছাড়াও আসামি করা হয় তার বাবা আব্দুল খালেক, মা মর্জিনা বেগম, সাভার পৌরসভার তৎকালীন সাভার পৌরসভার তৎকালীন মেয়র মো. রেফাতউল্লাহ, তৎকালীন ওয়ার্ড কমিশনার হাজি মোহাম্মদ আলী, সাভার পৌরসভার তৎকালীন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা উত্তম কুমার রায়, তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম, তৎকালীন সহকারী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান, তৎকালীন উপসহকারী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান রাসেল, সাভার পৌরসভার তৎকালীন টাউন প্ল্যানার ফারজানা ইসলাম, তৎকালীন লাইসেন্স পরিদর্শক মো. আব্দুল মোত্তালিব, তৎকালীন সচিব মর্জিনা খান, তৎকালীন সচিব মো. আবুল বাশার, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক (আর্কিটেকচার ডিসিপ্লিন) এ টি এম মাসুদ রেজা, প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসাইন, ফ্যান্টম অ্যাপারেলস লিমিটেডের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আমিনুল ইসলাম, নিউ ওয়েব বটমস লিমিটেডের এমডি বজলুস সামাদ ও ইথার টেক্স লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. আনিসুর রহমান।

এদের মধ্যে দুই আসামি রানার বাবা আব্দুল খালেক ওরফে খালেক কুলু এবং আতাউর রহমান মারা গেছেন।

২০১৫ সালের ২৬ এপ্রিল সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার বিজয় কৃষ্ণ কর ভবন মালিক সোহেল রানাসহ ৪১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন। মামলায় ৫৯৪ জনকে সাক্ষী করা হয়।

২০১৬ সালের ১৮ জুলাই ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ এস এম কুদ্দুস জামানের আদালতে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় বিচার।

তবে ৩৯ আসামির মধ্যে দুইজনের পক্ষে উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ থাকায় সাক্ষ্যগ্রহণ থেমে ছিল। গত বছরের ৩১ জানুয়ারি মামলার বাদী ওয়ালী আশরাফ আদালতে উপস্থিত হয়ে সাক্ষ্য দেওয়া শুরু করলে বিচার কাজে গতি আসে।

রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর যে কয়েকটি মামলা হয়েছে, তার মধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা মামলায় রানার তিন বছরের সাজা হয়েছে।