রানা প্লাজা ধস: হত্যা মামলায় ৯ বছরে কেবল বাদীর সাক্ষ্যগ্রহণ

সাভারের রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলায় এতদিনে কেবল মামলার বাদীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 April 2022, 05:00 PM
Updated : 23 April 2022, 05:11 PM

হাই কোর্টের স্থগিতাদেশ কাটিয়ে মাস তিনেক আগে শুরু হয় এ মামলার বিচার।

গত ১১ এপ্রিল ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে এ মামলার বাদী পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের উপ পরিদর্শক ওয়ালী আশরাফের সাক্ষ্য শেষ হয়।

আগামী ২৯ মে আদালতে এসে সাক্ষ্য দিতে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী ইকরামুল হক, শিউলি আক্তারসহ পাঁচজনকে পরোয়ানা পাঠানো হয়েছে।

রাষ্ট্রপক্ষে এ মামলা পরিচালনা করছেন এ আদালতের অতিরিক্ত কৌসুলি বিমল সমাদ্দার। আর আসামি পক্ষে প্রধান আইনজীবী হিসেবে লড়ছেন আইনজীবী ফারুক আহাম্মদ।

আইনজীবী ফারুক এ মামলার প্রধান আসামি সোহেল রানার হয়ে মামলার শুনানিতে অংশ নিচ্ছেন।

মামলার বিচার করছেন ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ এ এইচ এম হাবিবুর রহমান ভূইয়া।

রানা প্লাজা ধসে নিহত হয় হাজারের বেশি শ্রমিক।

গত ৩১ জানুয়ারি মামলার বাদী ওয়ালী আশরাফ এ আদালতে উপস্থিত হয়ে সাক্ষ্য দেওয়া শুরু করেন। এরপর দ্বিতীয় দিবসে সাক্ষ্যগ্রহণে প্রধান আসামি সোহেল রানাকে কারাগার থেকে আদালতে না আনায় কারা কর্তৃপক্ষকে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারক।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বিমল সমাদ্দার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছিলেন, সেদিন বাদী আদালতে হাজির থাকলেও সোহেল রানাকে হাজিরে ব্যর্থতায় বিচারক সাক্ষ্য নিতে পারেননি।

আইন অনুযায়ী, আসামিদের সামনে সাক্ষ্য করার নিয়ম রয়েছে।

বিচারের সময় জামিনে থাকা আসামি জান্নাতুল ফেরদৌস, আনিসুর রহমান ওরফে আনিসুজ্জামান, জামশেদুর রহমান, ইউসুফ আলী, উত্তম কুমার রায়, নয়ন মিয়া, বেলায়েত হোসেন, আমিনুল ইসলাম, আব্দুস সালাম, বিদ্যুৎ, মধু, রকিবুল হাসান রাসেল, রফিকুল ইসলাম, মাহমুদুর রহমান তাপস, আওলাদ হোসেন মর্জিনা বেগম, সারোয়ার কামাল, অনিল দাস আদালতে হাজির থেকে বিচারের মুখোমখি হচ্ছেন।

এ মামলার আসামি রানার বাবা মো. আব্দুল খালেক ওরফে খালেক কুলু এবং আতাউর রহমান মারা গেছেন। আর আসামি সাভারের সাবেক মেয়র রেফাত উল্লাহর স্থগিতাদেশ বিষয়ে হাই কোর্টে থেকে কোনো কাগজ পাওয়া যায়নি।

আসামি মাহবুবুর রহমান, ফারজানা ইসলাম, মো. শফিকুর ইসলাম ভূইয়া , মেনোয়ার হোসেন বিপ্লব, সৈয়দ শফিকুল ইসলাম জনি, রেজাউল ইসলাম, রেজাউল ইসলাম, নান্টু কনট্রাকটর , আবু বকর সিদ্দিক, মো. আবুল হাসান, মোহাম্মদ আলী খান, বজলুল সামাদ পলাতক রয়েছেন।

এতদিন ৩৯ আসামির মধ্যে মামলার বিচারে শুধু দুইজনের পক্ষে উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ থাকায় সাক্ষ্যগ্রহণ থেমে ছিল।

গত ৩১ জানুয়ারির আগে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর তারিখ পিছিয়েছে ২৫ বারের বেশি।

রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানা রয়েছেন কারাগারে।

রানা প্লাজা ধসের পর ইমারত নির্মাণ আইনে দায়ের করা মামলাটিতে সাক্ষ্যগ্রহণ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আনোয়ারুল কবির বাবুল।

নথিপত্রে দেখা যায়, রাজউকের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হেলাল উদ্দিনের করা এই মামলায় ২০১৫ সালের ২৬ এপ্রিল সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার বিজয়কৃষ্ণ কর ভবনের মালিক সোহেল রানাসহ ১৮ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। প্রায় তিন বছর আগে অভিযোগ গঠনও হয়েছে।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আনোয়ারুল কবির বাবুল গেল জানুয়ারির শেষে জানিয়েছিলেন, কয়েকজন আসামি অভিযোগ গঠনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিভিশন আবেদন করেন। তাদের মধ্যে নিউ ওয়েব বটমস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বজলুস সামাদ ও সাবেক সহকারী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমানের রিভিশন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত। অপরদিকে ফ্যান্টম অ্যাপারেলস লিমিটেডের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আমিনুল ইসলামের রিভিশন মঞ্জুর করে তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়। রিভিশনের বিষয়টি নিষ্পত্তি হলে এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু করা যাবে।

ঢাকার আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি আনোয়ারুল কবির বাবুল জানিয়েছিলেন, রানার বিরুদ্ধে অস্ত্র মামলা ও মাদকের মামলাও বিচারাধীন।

দুর্ঘটনার পর যে কয়েকটি মামলা হয়েছে, তার মধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা মামলায় সাজা হয়েছে রানা ও তার মায়ের।

সম্পদের হিসাব দাখিল না করায় রানার তিন বছরের কারাদণ্ড হয়েছে। একই সঙ্গে তাকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়।

২০১৭ সালের ২৯ অগাস্ট ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬ এর বিচারক কে এম ইমরুল কায়েস এ রায় দেন।

আর জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও মিথ্যা তথ্য দেওয়ার মামলায় রানার মা মর্জিনা বেগমকে ছয় বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। কারাদণ্ডের পাশাপাশি তার সম্পদের ৬ কোটি ৬৭ লাখ ৬৬ হাজার ৯৯০ টাকা বাজেয়াপ্ত করেন বিচারক।

প্রতি বছর শ্রমিক সংগঠনগুলো স্মরণ করে রানা প্লাজা ধসে নিহতদের।

২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভার বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন আটতলা রানা প্লাজা ধসে নিহত হন এক হাজার ১৩৫ জন; প্রাণে বেঁচে গেলেও পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয় আরও হাজারখানেক গার্মেন্ট শ্রমিককে।

বিশ্বকে নাড়িয়ে দিয়ে যাওয়া সেই ঘটনার দিনই সাভার থানায় দুটি মামলা হয়। পরের বছর দুর্নীতি দমন কমিশন দায়ের করে আরেকটি মামলা।

প্রথমটিতে হতাহতের ঘটনা উল্লেখ করে ভবন ও কারখানা মালিকদের বিরুদ্ধে মামলাটি করেন সাভার মডেল থানার এসআই ওয়ালী আশরাফ।

‘অবহেলা ও অবহেলাজনিত হত্যার’ অভিযোগে মামলা দায়েরের দুই বছর পর ২০১৫ সালের ২৬ এপ্রিল সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার বিজয়কৃষ্ণ কর ভবন মালিক সোহেল রানাসহ ৪১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। মামলায় সাক্ষী করা হয় ৫৯৪ জনকে।

২০১৬ সালের ১৮ জুলাই ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ এস এম কুদ্দুস জামান আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন।