তাকে টোপ দেওয়া হয়েছিল, বিশেষ গবেষণার কাজে ব্যবহৃত এই কয়েন দুদিনের মধ্যে ১০০ কোটি টাকায় বিক্রি হয়ে যাবে। সেজন্য তাকে খরচা করতে হবে মাত্র ৩০ লাখ টাকা!
Published : 02 May 2024, 09:12 PM
কল্পিত এক ‘বহুমূল্য ধাতব কয়েনে’র প্রলোভন দেখিয়ে এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি চক্র।
তাকে টোপ দেওয়া হয়েছিল, বিশেষ গবেষণার কাজে ব্যবহৃত এই কয়েন দুদিনের মধ্যে ১০০ কোটি টাকায় বিক্রি হয়ে যাবে। সেজন্য তাকে খরচা করতে হবে মাত্র ৩০ লাখ টাকা!
প্রতারণার শিকার হওয়ার পর গত ২৫ মার্চ রাজধানীর বিমানবন্দর থানায় ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন রফিকুল ইসলাম নামে ওই ব্যবসায়ী। এরপর অভিযানে নেমে সোমবার দুজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের বিশেষায়িত তদন্ত সংস্থা পিবিআই-এর ঢাকা মহানগর উত্তর বিভাগ।
গ্রেপ্তার দুজন হলেন কাজী মো. ইউছুফ (৪৬) ও মানিক মোল্লা (৬৬)। কাজী ইউছুফকে ফেনী থেকে ও মানিক মোল্লাকে চাঁদপুর থেকে ধরা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে প্রতারণার বিষয়ে বিস্তারিত জানা গেছে বলে অতিরিক্ত ডিআইজি জাহাঙ্গীর আলমের ভাষ্য।
বৃহস্পতিবার আগারগাঁওয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর পিবিআই কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, মামলার বাদী রফিকুল ইসলামের সঙ্গে ২০১৫ সাল থেকে কাজী ইউছুফের পরিচয়। সেই সূত্রে কাজী ইউছুফ বাদীকে ওই কয়েন পাইয়ে দেওয়ার লোভ দেখান।
প্রলোভনে সাড়া দেওয়ার পর বিভিন্ন স্থানে দফায় দফায় বৈঠক হয়। কাজী ইউছুফ ও গোলাম মাওলা (৫০) নামে মামলার আরেক আসামি সিলেটে হযরত শাহ জালাল (রাহ.) ও হযরত শাহ পরান (রাহ.)-এর মাজারে রফিকুলকে নিয়ে ব্যবসার কথা কাউকে না বলার শপথ করান। এরপর তারা আরও বৈঠক করেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, রফিকুলকে কয়েন দেখানোর জন্য তাকে মানিক মোল্লার বাসা চাঁদপুরে নিয়ে যান প্রতারকরা। সেখানে কয়েকজন মিলে কয়েনটি বিভিন্ন আলোতে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে দেখান। রফিকুল সেটি দেখার পরে ঢাকায় এসে প্রতারকদের হাতে প্রথম দফায় ১০ লাখ টাকা তুলে দেন। নন-জুডিসিয়াল ৪০০ টাকার স্ট্যাম্পে কয়েনের প্রতিনিধি হিসেবে বাদীর সঙ্গে চুক্তি করেন মানিক মোল্লা।
এরপর টাকা হাতাতে নতুন গল্প বানান প্রতারকরা। কাজী ইউছুফ, মানিক মোল্লা ও গোলাম মাওলা বাদীকে বলেন, কয়েনটি ঢাকা ডিপ্লোমেটিক জোনে নিতে আরও ৫ কোটি টাকা দিতে হবে। তখন বাদী এবং আসামিদের মধ্যে দর কষাকষি হয়, এক পর্যায়ে যা ১ কোটি ৫০ লাখ টাকায় রফা হয়।
রফিকুল দুই দফায় প্রতারকদের আরও ৫৫ লাখ টাকা দেন। এরপর বাদীকে নিয়ে কাজী ইউছুফ কয়েন আনার জন্য চাঁদপুর যান। সেখানে থেকে কয়েনটি নিয়ে তারা লঞ্চে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন।
পিবিআইয়ের সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ঢাকায় আগে থেকেই ফাঁদ পাতা ছিল। সদরঘাট পৌঁছানো প্রতারকদের একটি দল ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে বাদীকে ও তার সঙ্গে থাকা কাজী ইউসুফকে একটি গাড়িতে উঠিয়ে নেয়। সাধারণ পোশাকের ওই ডিবি পরিচয়ধারীরা কয়েনটি তাদের হেফাজতে নিয়ে ২-৩ ঘন্টা পর রফিকুল এবং ইউছুফকে ছেড়ে দেয়। পরে কয়েনটি ফিরিয়ে দেওয়ার লোভ দেখিয়ে তারা বাদীর কাছ থেকে আরও ২ কোটি ২৩ লাখ টাকা নেয়।
জাহাঙ্গীর আলম জানান, মামলার আরেক আসামি লিটন নানা টালবাহানা করে বাদী রফিকুলের কাছ থেকে আরও ৮০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন।শেষমেষ গত ২৫ মার্চ বিমানবন্দর থানায় মামলা করেন রফিকুল।