মাসুদ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে অঢেল সম্পদ ও অর্থপাচারের অভিযোগ তদন্ত করছে দুদক।
Published : 03 Oct 2024, 07:09 PM
দুর্নীতির অভিযোগে তদন্তের মুখে থাকা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) সাবেক প্রধান মাসুদ বিশ্বাসের বিদেশযাত্রা ঠেকাতে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চে চিঠি পাঠিয়েছে দুদক।
বৃহস্পতিবার পাঠানো চিঠিতে তিনি যাতে বিদেশে পালিয়ে যেতে না পারেন, সে বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হয়েছে। সেইসঙ্গে তার সম্পদের তথ্য সংগ্রহে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডাসহ ১১টি দেশে চিঠি পাঠানোর কথা জানিয়েছে দুদক।
অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে অঢেল সম্পদ ও অর্থপাচারের অভিযোগ পাওয়া পর গত ২৫ সেপ্টেম্বর মাসুদ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের কথা জানায় দুদক। অভিযোগ তদন্তে সংস্থাটির উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধানকে দলনেতা করে চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
দুদকের উপ-পরিচালক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম বলেন, “মাসুদ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, ঘুষ ও অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে অনুসন্ধান চলছে। গোপন খবরে জানা গেছে, তিনি অন্য দেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। এজন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চে চিঠি পাঠানো হয়েছে। একই সঙ্গে তার সম্পদের তথ্য জানতে চেয়ে ১১ টি দেশে চিঠি পাঠানো হয়েছে।”
অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর আগের সরকারের মন্ত্রী-এমপিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আমলে নেওয়া শুরু করে দুদক। এর ধারাবাহিকতায় মাসুদ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অনুসন্ধানেও আনুষ্ঠানিকভাবে মাঠে নামার ঘোষণা দেয় সংস্থাটি।
আর্থিক খাতের গোয়েন্দা ইউনিট বিএফআইইউয়ের এই সাবেক প্রধানের বিরুদ্ধে দুদকে আসা অভিযোগে বলা হয়েছে, তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার ও অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন। স্কাই ক্যাপিটাল এয়ারলাইনসের উড়োজাহাজ কেনায় সন্দেহজনক অনিয়মের অভিযোগটি ঘুষের বিনিময়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে না পাঠিয়ে সেটির শেষ টানা, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের চেয়ারম্যান তমাল পারভেজের ব্যাংক থেকে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা লুটপাটসহ আর্থিক অনিয়মের প্রতিবেদনকে গোয়েন্দা প্রতিবেদন হিসেবে না পাঠিয়ে ‘সাধারণ পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন’ হিসেবে পাঠানোর অনুমতি দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
অভিযোগে আরও বলা হয়, অনিয়ম ও অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির কারণে শেয়ার বাজারের তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান হিমিদ্রী লিমিটেডের ব্যাংক হিসাবের লেনদেন স্থগিত করা হয়েছিল, যা আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছিলেন মাসুদ। তানাকা গ্রুপ, এসএ গ্রুপ ও আনোয়ার গ্রুপের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং, অর্থপাচার-সংক্রান্ত সুনিশ্চিত তথ্য থাকা সত্ত্বেও অভিযোগগুলো আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে না পাঠিয়ে ব্যক্তিগত সুবিধা নেওয়ার মাধ্যমে নথিভুক্ত করেন।
অর্থপাচারেরও আরও বেশ কিছু অভিযোগ রয়েছে মাসুদ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে। এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলামের সঙ্গে পারস্পরিক যোগসাজশে ইসলামী ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে কোটি কোটি টাকা ঋণ নিয়ে বিদেশে পাচার, আবদুল কাদির মোল্লার থার্মেক্স গ্রুপ থেকে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে বিদেশে অর্থপাচার, ঘুষের বিনিময়ে জিনাত এন্টারপ্রাইজের বিদেশে অর্থপাচারের মামলা ধামাচাপা দিয়ে বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ করা হয়েছে দুদকে।
দুদকের সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানতে মাসুদ বিশ্বাসের মোবাইল ফোনে একাধিকার কল দিলেও তিনি ধরেননি। এসএমএস পাঠালেও তাৎক্ষণিকভাবে তার জবাব মেলেনি।
আরও পড়ুন-
বিএফআইইউর সাবেক প্রধান ও চবি উপাচার্যের 'দুর্নীতি'র খোঁজে দুদক