উভয়ের বিরুদ্ধে দুর্নীতি-অনিয়মের মাধ্যমে অঢেল সম্পদ গড়ার অভিযোগ রয়েছে, বলেছেন দুদকের উপ-পরিচালক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম।
Published : 25 Sep 2024, 07:36 PM
বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট-বিএফআইইউ এর সাবেক প্রধান কর্মকর্তা মাসুদ বিশ্বাস এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য শিরীণ আক্তারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বুধবার দুদকের উপ-পরিচালক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম বলেছেন, উভয়ের বিরুদ্ধে দুর্নীতি-অনিয়মের মাধ্যমে অঢেল সম্পদ গড়ার অভিযোগ রয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর আগের সরকারের মন্ত্রী-এমপিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আমলে নেওয়া শুরু করে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক। এরই ধারায় এবার মাসুদ বিশ্বাস ও শিরীণ আক্তারের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে মাঠে নামার ঘোষণা দিল সংস্থাটি।
বিএফআইইউ হল আর্থিক খাতের স্বচ্ছতার জন্য নিবেদিত গোয়েন্দা ইউনিট, যা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি-অনিয়ম রোধে কাজ করে থাকে।
আকতারুল ইসলাম বলেন, মাসুদ বিশ্বাস অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন বলে গোয়েন্দা তথ্যানুসন্ধানে প্রাথমিকভাবে সঠিক পরিলক্ষিত হওয়ায় তার বিরুদ্ধে প্রকাশ্য অনুসন্ধানের জন্য কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
দুদকের অভিযোগে বলা হয়েছে, মাসুদ বিশ্বাস দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন।
স্কাই ক্যাপিটাল এয়ারলাইনসের বিমান কেনায় সন্দেহজনক অনিয়মের অভিযোগটি ঘুষের বিনিময়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে না পাঠিয়ে সেটির শেষ টানা, এনআরবি কমার্সিয়াল ব্যাংকের চেয়ারম্যান তমাল পারভেজ ব্যাংক থেকে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা লুটপাটসহ আর্থিক অনিয়মের রিপোর্টকে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ বিধিমালা-২০১৯ এর আওতায় গোয়েন্দা প্রতিবেদন হিসেবে না পাঠিয়ে সাধারণ পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন হিসেবে পাঠানোর অনুমতি দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে মাসুদ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে।
অভিযোগে বলা হয়েছে, অনিয়ম ও অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির কারণে শেয়ার বাজারের তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান হিমিদ্রী লিমিটেডের ব্যাংক হিসাবের লেনদেন স্থগিত করা হয়েছিল, যা আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে প্রত্যাহার করার নির্দেশ দিয়েছিলেন বিএফআইইউ এর এই সাবেক প্রধান।
বিরুদ্ধ আরও যেসব অভিযোগ রয়েছে, তার মধ্যে তানাকা গ্রুপ, এস.এ. গ্রুপ ও আনোয়ার গ্রুপের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং, অর্থপাচার-সংক্রান্ত সুনিশ্চিত তথ্য থাকা সত্ত্বেও ওই অভিযোগগুলো আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে না পাঠিয়ে ব্যক্তিগত সুবিধা নেওয়ার মাধ্যমে নথিভুক্ত করা অন্যতম।
অর্থপাচারেরও বেশ কিছু অভিযোগ রয়েছে বিএফআইইউ এর এই সাবেক প্রধানের বিরুদ্ধ।
এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলামের সঙ্গে পারস্পরিক যোগসাজশে ইসলামী ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে কোটি কোটি টাকা ঋণ নিয়ে বিদেশে পাচার; আবদুল কাদির মোল্লার থার্মেক্স গ্রুপ থেকে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে বিদেশে অর্থপাচারসহ ঘুষের বিনিময়ে জিনাত এন্টারপ্রাইজের বিদেশে অর্থপাচারের মামলা ধামাচাপা দিয়ে বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জন করেছেন মাসুদ বিশ্বাস।
তার অবৈধভাবে অর্জিত জ্ঞাত আয়বর্হিভূত সম্পদ রয়েছে বলে গোয়েন্দা তথ্যানুসন্ধানে গোপনে 'সোর্স ইনফরমেশনের' বরাতে প্রাথমিকভাবে সঠিক পরিলক্ষিত হওয়ায় প্রকাশ্য অনুসন্ধানের জন্য কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে অবহিত করেছে দুদক।
দুদকের সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানতে মাসুদ বিশ্বাসের ফোনে একাধিকার কল করে এবং মেসেজ পাঠিয়েও তার সাড়া পায়নি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।
চবির সাবেক উপাচার্য শিরীণের দুর্নীতি অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক শিরীণ আখতারের দুর্নীতির অভিযোগও অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা অবহিত করেছেন আকতারুল ইসলাম।
অভিযোগে বলা হয়েছে, উপাচার্য পদে যোগ দেওয়ার পর থেকে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে ঘুষ, অবৈধ নিয়োগ বাণিজ্যেসহ নানা দুর্নীতির মাধ্যমে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন তিনি।
তবে অধ্যাপক শিরীণ তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন আইনিভাবে এসব মোকাবেলা করবেন তিনি।
তার বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ এনে বলা হয়েছে, প্রতিটি পদে ১৬ থেকে ২০ লাখ টাকা ঘুষের বিনিময়ে শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ, সংবিধি ও শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা লঙ্ঘন করেছেন তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজনের নামে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে উপাচার্য শিরীণের বিরুদ্ধে।
২০২৩ সালের ৪ জুন ‘বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ’ শিরোনামে সেমিনার আয়োজনের মাধ্যমে ১৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা খরচ দেখিয়ে আত্মসাৎ; চবির মেরিন সায়েন্সেস অ্যান্ড ফিশারিজ অনুষদের একাডেমিক ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ৪৪ লাখ ৫৫ হাজার টাকা ও একই দিনে অন্য একটি সভায় ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকা খরচ দেখিয়ে আত্মসাতের অভিযোগ তোলা হয়েছে।
স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে অবৈধভাবে নিয়োগ দিয়ে নিজস্ব সিন্ডিকেট তৈরি করা, ঘুষ নেওয়া ও অবৈধভাবে আর্থিক সুবিধা নেওয়ার মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন তিনি, অভিযোগ দুদকের।
দুদকের আকতারুল ইসলাম বলেন, শিরীণ আখতারের জ্ঞাত আয়বর্হিভূত সম্পদ রয়েছে, যা গোয়েন্দা তথ্যানুসন্ধানে গোপনে সোর্স ইনফরমেশনের বরাতে প্রাথমিকভাবে সঠিক পরিলক্ষিত হওয়ায় তার বিরুদ্ধে প্রকাশ্য অনুসন্ধানের জন্য কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে উপাচার্য শিরীণ বলেন, “আমার সময়ে যত কাজ হয়েছে, সব নিয়ম মেনে হয়েছে। সিনেট ও সিন্ডিকেটের অনুমোদন নিয়েই কাজ করা হয়েছে।”
“দুর্নীতি করার কোনো প্রশ্নই ওঠে না এবং প্রয়োজনও নেই। কোনো অভিযোগ থাকলে তা ফেস করব; অতীতেও করেছি।”
এর আগে ১৮ সেপ্টেম্বর কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য সৌমিত্র শেখরের দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিল দুদক।