মিশনে চুক্তিতে কাউন্সেলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করা ফারজানা মিথিলাসহ পাঁচ কর্মকর্তাকেও ফেরত আনা হচ্ছে।
Published : 15 Aug 2024, 11:56 PM
ক্ষমতার পালাবদলে সরকার ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন স্তরে পরিবর্তনের ধারায় এবার চু্ক্তি বা প্রেষণে বিদেশি মিশনে দায়িত্ব পালন করা সাত রাষ্ট্রদূত ও হাই কমিশনারসহ ১২ জনকে ঢাকায় ফেরত আনছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পৃথক পৃথক আদেশ জারি করে তাদের নিজ নিজ দপ্তরে ফিরে আসতে বলা হয়েছে। এসব রাষ্ট্রদূত ও হাই কমিশনার এবং কর্মকর্তারা চুক্তিতে বা প্রেষণে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
ঢাকায় ফিরতে বলা মিশন প্রধানদের মধ্যে রয়েছেন রাশিয়ায় রাষ্ট্রদূত কামরুল আহসান, ওয়াশিংটনে রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান, সৌদি আরবে রাষ্ট্রদূত জাবেদ পাটোয়ারী, জাপানে রাষ্ট্রদূত শাহাবুদ্দিন আহমদ, সংযুক্ত আরব আমিরাতে রাষ্ট্রদূত আবু জাফর, জার্মানিতে রাষ্ট্রদূত মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া ও মালদ্বীপের মালেতে হাইকমিশনার রিয়াল অ্যাডমিরাল এস এম আবুল কালাম আজাদ।
এই রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনাররা দায়িত্ব পান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে। তাদের অধিকাংশকে ‘অবিলম্বে’ এবং বাকিদের নির্দিষ্ট সময়সীমা দিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ফিরতে বলা হয়েছে।
৫ অগাস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এখন প্রশাসন ও মিশনে দায়িত্ব পালনকারীদের পরিবর্তন বা বদলি করছে। কয়েক দিন ধরে দেশের ভেতরে গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক ও সরকারি প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পর্যায়ে রদবদল ও পরিবর্তন আনা হয়েছে। এবার কূটনৈতিক মিশনে হাত দিল অন্তর্বর্তী সরকার।
২০১৯ সালের নভেম্বর থেকে মস্কো মিশনে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন বিসিএস (পররাষ্ট্র ক্যাডার) ১৯৮৫ ব্যাচের কর্মকর্তা কামরুল আহসান। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে চুক্তিতে তার দায়িত্বের মেয়াদ দুবছর বাড়ানো হয়েছিল।
চুক্তিতে ভারতের নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাই কমিশনারের দায়িত্বে ছিলেন বিসিএস (পররাষ্ট্র ক্যাডার) ১৯৮৬ ব্যাচের কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইমরান। এরপর ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে তার চুক্তির মেয়াদ তিন বছর বাড়ানো হয়।
তিন বছরের চুক্তি থাকার মধ্যে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে থেকে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত করে পাঠানো হয়েছিল মুহাম্মদ ইমরানকে।
পুলিশ মহাপরিদর্শক থেকে অবসরে গিয়ে চুক্তিতে সৌদি আরবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হন জাবেদ পাটোয়ারী। ২০২০ সালের অগাস্ট থেকে তিনি এ দায়িত্বে পালন করে আসছেন।
চুক্তিতে ২০২০ সালের জুলাই থেকে আরব আমিরাতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করে আসছেন বিসিএস পররাষ্ট্র ক্যাডারের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু জাফর। এরপর ২০২৩ সালের ৯ মার্চ তার চুক্তির মেয়াদ আরও দুই বছর বাড়ানো হয়েছিল।
সিনিয়র সচিব হিসাবে অবসরে যাওয়ার পর চুক্তিতে এনবিআর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন পদ্মা সেতু প্রকল্পে ‘দুর্নীতির অভিযোগে’ আলোচিত মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া। এরপর ২০২০ সালের ২ অক্টোবর থেকে চুক্তিতে বার্লিনে বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পান তিনি। সরকার পতনে ঢাকায় ডাক পড়ার আগে কয়েক দফায় তার চুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছিল।
খাদ্য সচিব থেকে অবসরোত্তর ছুটি (পিআরএল) ভোগ করার মধ্যে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে জাপানে বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পান শাহাবুদ্দিন আহমদ। যোগদানের তারিখ থেকে পরবর্তী তিন বছরের জন্য ওই পদে যোগ দেন তিনি।
২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ৩ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই দ্বিতীয় দফায় দেড় বছরের জন্য সেই চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধি করে সরকার। সে হিসেবে গত জুনে তার ওই চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়া কথা ছিল। এর মধ্যে চলতি বছরের এপ্রিলে তৃতীয় দফায় চুক্তির মেয়াদ বাড়িয়ে আরও ছয় মাসের জন্য শাহাবুদ্দিনকে রাষ্ট্রদূত করা হয়েছিল।
২০২২ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি নৌবাহিনীর কর্মকর্তা রিয়ার অ্যাডমিরাল এসএম আবুল কালাম আজাদকে মালদ্বীপে বাংলাদেশের হাই কমিশনার করে পাঠায় সরকার।
সাত মিশন প্রধানের পাশাপাশি আরও পাঁচ কর্মকর্তাকে ঢাকায় ফেরত আসতে বলা হয়েছে। তিনটি মিশনে বিভিন্ন দায়িত্ব রয়েছেন তারা।
তাদের মধ্যে পুলিশ কর্মকর্তা অহিদুজ্জামান নূর ওয়াশিংটনে প্রথম সচিব এবং উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আরিফা রহমান রুমা একই দূতাবাসে কাউন্সেলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।
কানাডার অটোয়া মিশনে কাউন্সেলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসা অপর্ণা রানী পাল ছাত্রলীগের সাবেক নেত্রী, তাকেও ফিরতে বলা হয়েছে।
একই মিশনের কাউন্সেলর মোবাশ্বিরা ফারজানা মিথিলাকে ঢাকায় ফিরতে বলা হয়েছে। মিশনে যোগ দেওয়ার আগে মিথিলা বেসরকারি একাত্তর টিভির সংবাদ পাঠিকা ও উপস্থাপিকা ছিলেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘দালাল সাংবাদিক‘ হিসেবে করা তালিকায় নাম রয়েছে মিথিলার।
মন্ত্রণালয়ে ফেরার ডাক পাওয়া আসিব উদ্দিন আহমেদ নিউ ইয়র্কে দ্বিতীয় সচিবের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। গত ১ জুলাই তার চুক্তির মেয়াদ তিন বছর বাড়ানো হয়েছিল।