১৯৯৩ সালে কেরানীগঞ্জে বাবা-ছেলেকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় পাঁচজনের ফাঁসির আদেশ দিয়েছিল আদালত; কিন্তু খুনের পর থেকেই নিরুদ্দেশ ছিলেন আরিফ।
Published : 01 Dec 2023, 12:58 PM
চাঁদাবাজি করতে গিয়ে বাবা-ছেলেকে কুপিয়ে হত্যার পর দিয়েছিলেন গা ঢাকা, নাম-পরিচয় ছাড়াও পাল্টে ফেলেন পেশা, কিন্তু তাতেও মেলেনি রেহাই; তিন দশক পর ধরা পড়লেন র্যাবের জালে।
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে বৃহস্পতিবার রাতে মো. আরিফ (৫২) নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব, যিনি খুনের ওই মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশ মাথায় নিয়েই এতদিন পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন।
র্যাব বলছে, ঘটনাটি ১৯৯৩ সালের। ওই বছরের ১৩ জুলাই ঢাকার কেরানীগঞ্জের বরিশুর বাজারে মুদি দোকানে শরিফ ও তার ছেলে খোকনকে খুনের ঘটনা এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য তৈরি করে।
পরে কেরানীগঞ্জ থানায় দায়ের করা হত্যা মামলায় ১৯৯৪ সালের ২৬ অগাস্ট পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা পড়ে। এক দশক পর ২০০৪ সালের ২১ জুলাই আরিফসহ পাঁচজনকে মৃত্যুদণ্ড দেয় আদালত। পরে রায়ের বিরুদ্ধে করা আবেদনে সব প্রক্রিয়া শেষে ২০১৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর ওই আদেশ বহাল রাখেন বিচারক।
মামলার অপর আসামিরা হলেন- শফিকুল ইসলাম, নজরুল ইসলাম নজু, মিস্টার ও মো. মাসুদ। এর মধ্যে শফিকুল ও নজরুল কারাগারে আছেন। বিচার চলাকালে মারা গেছেন মিস্টার। আর এখনও পলাতক রয়েছেন মাসুদ।
কী ঘটেছিল সেদিন
আরিফকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে শুক্রবার ঢাকার কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে আসেন এ বাহিনীর আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
ঘটনার বর্ণনায় তিনি বলেন, কেরানীগঞ্জের বারিশুর বাজারে মুদি দোকান ছিল শরিফের। বেশিরভাগ সময় মধ্যরাত পর্যন্ত তিনি বেচাকেনা করতেন। রাতে তার জন্য খাবার নিয়ে আসত তার দুই ছেলে খোকন (৯) ও শাহজাহান (১২)। এরপর রাতে দোকানেই পড়ালেখা করে বাবার সঙ্গেই তারা ঘুমিয়ে পড়ত সেখানে।
ওই সময় কেরানীগঞ্জ এলাকায় সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, ডাকাতি ও ছিনতাইসহ নানা অপরাধে জড়িত ছিলেন আরিফ ও তার সহযোগীরা; মাদকের কারবারও করতেন। তারা দেশিয় অস্ত্র নিয়ে প্রায়ই স্থানীয় বাজারের বিভিন্ন দোকান থেকে চাঁদা আদায় ও ছিনতাই করতেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ১৯৯৩ সালের ১৩ জুলাই শরিফ প্রতিদিনের মত দোকান বন্ধ করতে যাচ্ছিলেন। দোকানের পেছনের অংশে ঘুমাচ্ছিল তার ছোট দুই ছেলে। সেসময় আরিফ ও তার সহযোগীরা এসে সিগারেট ও অন্যান্য মালামাল ছিনিয়ে নেয়। এরপর ক্যাশ বাক্স থেকে টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে শরিফ তাদের বাধা দেয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তারা শরিফকে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে।
চিৎকার শুনে ঘুমিয়ে থাকা দুই শিশু তার বাবাকে বাঁচানোর আকুতি করলে তাদেরও কুপিয়ে চলে যায় সন্ত্রাসীরা। পরদিন ভোরে স্থানীয়রা দোকানের সামনে বাবা-ছেলেদের রক্তাক্ত দেহ পড়ে থাকতে দেখে।
ওই ঘটনায় নিহত হন শরিফ ও তার ছোট ছেলে খোকন। গুরুতর আহত হলেও বেঁচে যায় আরেক ছেলে শাহজাহান।
ধরাছোঁয়ার বাইরে ৩০ বছর
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার মঈন বলেন, হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই নিরুদ্দেশ ছিলেন আরিফ। এতদিন দেশের বিভিন্ন এলাকায় গা ঢাকা দিয়ে ছিলেন।
“নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় গিয়ে নাম পাল্টে শরিফুল ইসলাম রাখেন। পরিচয় গোপন করে ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করেন। কাজ করেন ঢেউটিন ফ্যাক্টরিতে। পরে ওই ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়ে গেলে মুদি ও লন্ড্রির ব্যবসা চালিয়ে আসছিলেন।”
মৃত্যুদণ্ড মাথায় নিয়ে এই মামলায় পলাতক রয়েছেন আসামি মাসুদ। তাকেও গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে বলে জানান এই র্যাব কর্মকর্তা।