“আওয়ামী লীগ আজকে ক্ষমতায় ফিরে আসতে পারবে বলেই-আজকে বাংলাদেশে যে অগ্রযাত্রা এই অগ্রযাত্রা আর কেউ ব্যাহত করতে পারবে না,” বলেন তিনি।
Published : 10 Jan 2024, 06:21 PM
মানুষ ভোট দিতে আসায় নির্বাচন বন্ধে অনেকের চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে রাতে ভোট হয়েছে বলে কেউ বলতে পারবে না।
বুধবার বিকালে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন। ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে এ জনসভার আয়োজন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, "এবারের নির্বাচনে কেউ বলতে পারবে না যে রাতে ভোট দিয়েছে, দিনের ভোট রাতে দিয়েছে, ভোট কারচুপি হয়েছে, তা বলার কোনো ক্ষমতা নেই।
"অত্যন্ত স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ নির্বাচন এইবার অনুষ্ঠিত হয়েছে সেটা আপনারা দেখেছেন। আমি মনে করি নির্বাচন কমিশন আইন করে সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে নির্বাচন কমিশন গঠন করে সেই নির্বাচন কমিশনকে আমরা নির্বাচন পরিচালনা করতে দিয়েছি। কোন রকম হস্তক্ষেপ আমরা করিনি, সহযোগিতা করেছি।"
টানা চতুর্থ মেয়াদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে সরকার গঠন করতে যাওয়া আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, “সেই সাথে সাথে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা, প্রশাসন থেকে শুরু করে সব কিছুই নির্বাচন কমিশনের হাতে ন্যস্ত-যেন নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হয়। আমরা কখনও হস্তক্ষেপ করিনি।”
নির্বাচন আয়োজনের জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, "অনেকেরই অনেক রকম স্বপ্ন আছে, অনেকেই নির্বাচন বন্ধ করতে চেয়েছিল ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনে মানুষ যাতে ভোট দিতে না আসে সেটা ঠেকাতে চেয়েছিল তারপরেও ৪১.৮ ভাগ ভোট পড়েছে সাধারণ নির্বাচনে। এটা সোজা কথা না, খুবই বড় কথা।
“আওয়ামী লীগ এবং আমাদের সমমনা দল যখন নির্বাচন করেছে আরেকটি দল তখন নির্বাচন ব্যাহত করার চেষ্টা করেছে।"
সরকারপ্রধান বলেন, "আমি বিশ্বাস করি আওয়ামী লীগ আজকে ক্ষমতায় ফিরে আসতে পারবে বলেই- আজকে বাংলাদেশে যে অগ্রযাত্রা এই অগ্রযাত্রা আর কেউ ব্যাহত করতে পারবে না।
"আপনাদের এই মিটিং থেকে সরাসরি বঙ্গভবনে যাব, মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে আমার চিঠি আমি হস্তান্তর করব এবং এরপর আমরা সরকার গঠন করব।"
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর আওয়ামী লীগের কিছু নেতাকর্মী বেইমানি করেছিল মন্তব্য করে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, “অবৈধভাবে যারা সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতা বসেছে, ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে কিছু দল সৃষ্টি করে, আর কিছু এলিট শ্রেণি তৈরি করে। যার উপর নির্ভর করে ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে অবৈধ ক্ষমতা বৈধ করার চেষ্টা করে। এর বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের সকল নেতাকর্মী, যদিও '৭৫ এর পরে আওয়ামী লীগের কিছু নেতাকর্মী বেইমানি করে। বেশিরভাগ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করানো হয়। তারা মুক্তি পেয়ে দলকে সুসংগঠিত করার চেষ্টা করেন।
"১৯৮১ সালে আমাকে দলের সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত করেন। আমি ফিরে আসি এমন একটি দেশে, যেখানে আমার বাবা-মায়ের হত্যাকারীদের বিচার করবেন না বলে ইনডেমনিটি জারি করে, তাদেরকে বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের চাকরি দেওয়া হয়েছে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এবং তাদের যে দোসর, আল বদর রাজাকারের সাথে হাত মিলিয়ে গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে লুটপাট করেছিল, আমাদের দেশে মা-বোনদেরকে পাকিস্তানি হানাদারদের হাতে তুলে দিয়েছিল, ক্যাম্পে নিয়ে মাসের পর মাস নির্যাতন করেছিল। সেই সমস্ত যুদ্ধাপরাধী, তাদের বিচার শুরু জাতির পিতা করেছিলেন। ১৫ অগাস্টের পর যারা ক্ষমতায় আছে তারা তাদেরকে ছেড়ে দিয়ে মন্ত্রী বানায়, প্রধানমন্ত্রী বানায়, তাদেরকে ক্ষমতা বসায়।"
প্রধানমন্ত্রী বলেন, "একদিকে খুনি, আরেকদিকে যুদ্ধাপরাধী তারাই ক্ষমতায়। সেই অবস্থা আমি ফিরে আসি। জনগণের ভোট ও ভাত নিশ্চিত করার প্রত্যয়ে ফিরে আসি। দারিদ্র্যে জর্জরিত ছিল এদেশের মানুষ, দুর্ভিক্ষ লেগেছিল। জাতির পিতার যে আকাঙ্ক্ষা, স্বপ্ন এদেশে মানুষকে নিয়ে সেটা পূরণ হয়নি।"
তিনি বলেন, "এদেশে মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য, অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য, কী কী কাজ করা দরকার, একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশকে কীভাবে তিনি গড়ে তুলবেন সে ভাষণ তাই এ জায়গায় দিয়েছিলেন। এই ভাষণ যখন শুনি আমি মাঝে মাঝে অবাক হয়ে যাই। দীর্ঘ ৯ মাস কারাগারে বন্দি, সে মিলওয়ালা জেল, শীতের সময় বরফ, গরমের সময় গরম। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে কীভাবে রেখেছিল তারা, সঠিকভাবে খাবারও দিত না। সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন, কোনো পত্রিকা কাগজ কোনো কিছুই ছিল না৷ তার বিরুদ্ধে মামলা এবং ফাঁসির হুকুম, সে অবস্থা থেকে বেরিয়ে এসে, লন্ডন থেকে বাংলাদেশের মাটিতে যখন নামেন তিনি ছুটে এসেছিলেন বাংলার জনগণের সামনে।
“১০ জানুয়ারি এখানেই তিনি ভাষণ দেন। সেই ভাষণে একটি দেশের ভবিষ্যত, উন্নয়ন, সব পরিকল্পনা, দুঃখী মানুষের হাসি ফোটানোর চিন্তা-পরিকল্পনা, মহান মুক্তিযুদ্ধের যে আদর্শ, সেটাই তিনি তুলে ধরেছিলেন।"
জাতির ভাগ্য গড়ার জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার জীবনটা উৎসর্গ করে ছিলেন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “বাংলাদেশের মানুষের কোনো কিছু ছিল না। থাকার ঘর নেই, বাড়ি নেই, তাদের ভবিষ্যৎ নেই, শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত। সেই জাতির জন্য, তাদের ভাগ্য গড়ার জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব উৎসর্গ করেন। অনেক সংগ্রাম ত্যাগের মধ্য দিয়ে এই দেশ স্বাধীন করেন।”