যশোর হত্যাকাণ্ডের দুই যুগ: উদীচীর তিন দিনের কর্মসূচি

দুই যুগেও বিচার না হওয়ায় হতাশ সংগঠনটির নেতৃবৃন্দ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 March 2023, 03:55 PM
Updated : 2 March 2023, 03:55 PM

যশোরে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সমাবেশে বোমা হামলার দুই যুগপূর্তি উপলক্ষে তিন দিনের কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সাংস্কৃতিক সংগঠনটি। 

'দুই যুগেও হয় না বিচার, এই লজ্জা ও অপমান কার' এই স্লোগানে আগামী ৪, ৫ ও ৬ মার্চ এই কর্মসূচি পালন করা হবে যশোরে। 

বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় ঢাকায় উদীচীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানান সংগঠনের কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে।  

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, “২০০৬ সালের ৩০ মে মামলার রায়ে সকল আসামিদের বেকসুর খালাস দিয়ে আদালত তিরস্কার করে বলেছিলেন, প্রায় কোনো রকম তদন্ত ছাড়া এই বোমা হামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে পুলিশ। 

"বলা বাহুল্য যশোর হত্যাকাণ্ডের তদন্ত ও বিচারের ব্যাপারে সরকার সীমাহীন অবহেলা দেখিয়েছে। ২৪ বছর পেরিয়ে গেলেও অজ্ঞাত কারণে তদন্ত  প্রক্রিয়া থেমে আছে।" 

অমিত বলেন, "এ কথা জোর দিয়ে বলা যায় যে, উদীচীর উপর বোমা হামলার সুষ্ঠু বিচার হলে হামলাকারীরা পরবর্তী সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে একের পর এক সংঘটিত বোমা হামলার সুযোগ পেত না। যশোর হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নান পরবর্তী সময়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিলে তার সূত্র ধরে দু’জনকে গ্রেপ্তার করার পরও অজ্ঞাত কারণে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। 

“২০০৮ সালের পর মামলাটির তদন্তের ভার সিআইডির হাতে ন্যস্ত হয়েছিল। কিন্তু আজ অবধি আমরা তদন্তের কোনো অগ্রগতি দেখতে পাইনি।" 

১৯৯৯ সালের ৬ মার্চ যশোরের টাউন হল মাঠে উদীচীর দ্বাদশ জাতীয় সম্মেলনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বোমা হামলায় ১০ জন নিহত হন। আহত হন আড়াই শতাধিক। তাদের অনেকে স্থায়ী পঙ্গুত্ব বরণ করেন। 

উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি মাহমুদ সেলিম বলেন, "সংস্কৃতি মানুষকে জাগিয়ে তোলার অন্যতম হাতিয়ার; এই কথাটি উদীচী যেমন বোঝে, তেমনই ধর্মান্ধ সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীও বোঝে। সেজন্যই বারবার উদীচীসহ প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক শক্তির উপর হামলা চালায় তারা। কিন্তু সংস্কৃতির এই শক্তি সম্পর্কে স্বাধীনতার পক্ষের দাবিদার রাজনৈতিক দলগুলো কতটুকু সচেতন তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।" 

আরেক সহ-সভাপতি ইকরামুল কবির ইল্টু বলেন, "শুধু গান গাইতে গিয়ে কাউকে বোমার আঘাতে মরতে হবে- এটা কেউ স্বাধীন দেশে কল্পনাও করতে পারেনি। বোমা হামলায় নিহতদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানো এবং আহতদের পুনর্বাসনের জন্য উদীচী সাধ্যমত চেষ্টা করলেও তা যথেষ্ট নয়। রাষ্ট্রের উচিত এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া।" 

প্রশ্ন রেখে উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান বলেন, "২৪ বছরেও একটি স্বাধীন দেশে যদি সংস্কৃতিকর্মী হত্যা মামলার বিচার না হয়, তাহলে এই স্বাধীনতার কী মানে? একটি ন্যায়বিচার যদি চেয়ে নিতে হয়, তাহলে এর চেয়ে দুর্ভাগ্যজনক আর কিছু হতে পারে না। যতদিন এ হত্যাকাণ্ডের বিচার না হবে, ততোদিইনই রাজপথে সোচ্চার থাকবে উদীচীর শিল্পী-কর্মীরা।" 

অন্যদের মধ্যে উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি ইকরামুল কবির ইল্টু, জামসেদ আনোয়ার তপন ও সহ-সাধারণ সম্পাদক সঙ্গীতা ইমাম সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। 

তিন দিনের কর্মসূচিতে যা থাকছে

প্রথম দিন অনুষ্ঠিত হবে ‘রং তুলিতে প্রতিবাদ’ শীর্ষক ২৪ জন চিত্রশিল্পীর চিত্রাঙ্কন ও গ্রাফিতি অঙ্কন। 

৫ মার্চ সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও শ্রেণি পেশার বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তিবর্গের সাথে হবে মতবিনিময় সভা। 

শেষ দিন বিকাল ৩টায় যশোর টাউন হল ময়দানে নির্মিত শহীদ বেদীতে শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদন করা হবে। ওইদিন বিকাল সাড়ে ৪টা থেকে যশোর টাউন হল ময়দানে প্রতিবাদী সমাবেশ, প্রদীপ প্রজ্জ্বালন, মশাল মিছিল ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনা থাকবে। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত আলোকচিত্র নিয়ে থাকবে 'শত ছবি'র প্রদর্শনী। 

এছাড়া দেশের সব জেলা ও শাখায় যশোর হত্যা দিবস উপলক্ষে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ ও প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজ করা হবে।