“বেসরকারি খাতে অনেক বেশি সুবিধা নিয়ে স্থাপন করা হয়েছিল এ ধরনের পরিস্থিতিতে সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখার জন্য”, বলেন বিরোধীদলীয় নেতা।
Published : 09 May 2024, 10:22 PM
প্রয়োজনের সময় সরবরাহ করতে বেসরকারি খাতে বাড়তি সুবিধা দিয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্র করার বিষয়টি তুলে ধরে লোডশেডিংয়ের যৌক্তিকতা নিয়ে সংসদে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীদলীয় নেতা জিএম কাদের।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, তীব্র দাবদাহে ঢাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহে তেমন কোনো ঘাটতি না থাকছেও গ্রামে লোডশেডিং বাড়ছে।
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদের অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে অন্যান্য নানা প্রসঙ্গের সঙ্গে বিদ্যুতের ঘাটতির বিষয়টি নিয়েও কথা বলেন।
দাবদাহের সময় দেশের বিভিন্ন এলাকায় এমনকি রাজধানীর আশেপাশে ৮ থেকে ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং করতে হয়েছে জানিয়ে জি এম কাদের বলেন, “বাস্তবতা হচ্ছে প্রয়োজনের সময় বিদ্যুতের লোডশেডিং কমাতে পারেনি, নিশ্চিত করতে পারেনি নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ।
“বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা প্রয়োজনের চেয়ে বেশি। এই অতিরিক্ত উৎপাদন ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্রসমূহ বেসরকারি খাতে অনেক বেশি সুবিধা নিয়ে স্থাপন করা হয়েছিল এ ধরনের পরিস্থিতিতে সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখার জন্য।”
এপ্রিলের দাবদাহে সংকটের মধ্যে একদিনে সর্বোচ্চ ৩১০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত ঘাটতি থাকলেও সাধারণভাবে উৎপাদন ও চাহিদার মধ্যে ঘাটতি থাকছে এক থেকে দুই হাজার মেগাওয়াট, যা চাহিদার ১৩ শতাংশের মত।
কিন্তু দেশের সব এলাকায় লোড শেডিংয়ের ‘সমবণ্টন’ হয়নি। ফলে কোনো কোনো এলাকায় বিদ্যুতের যাওয়া আসা বেশ কম, কোথাও কোথাও মানুষ অতিষ্ঠ। কোথাও দিনে এক ঘণ্টা আবার কোথাও ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা লোড শেডিংয়ের তথ্য মিলছে।
গ্রামে লোডশেডিং বেশি থাকার বিষয়টি নিয়ে সংসদে এর আগে তুলে ধরেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক পলাশ। তিনি তার নির্বাচনি এলাকা কিশোরগঞ্জ-৩ আসনে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুকে নিয়ে যেতে চেয়েছেন।
সরকারি হিসাবে এই মুহূর্তে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা ৩০ হাজার ২৭৭ মেগাওয়াট। কিন্তু দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ উৎপাদন হয়েছে এপ্রিলের শেষে ১৬ হাজার ৪৭৭ মেগাওয়াট।
এপ্রিলে সরকারি হিসাবে এক দিনে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল ১৭ হাজার মেগাওয়াটের বেশি।
এই হিসাবে চাহিদা ও উৎপাদনে খুব একটা পার্থক্য নেই। তবে উৎপাদনের পুরোটা গ্রাহক পর্যায়ে বিতরণ করা যায় না।
বিদ্যুৎ খাত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, যে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়, তার ৭ শতাংশের মত গ্রাহক পর্যায়ে যায় না। কেন্দ্রগুলো নিজের জন্য লাগে, সঞ্চালনে কিছু ক্ষয় হয়, আবার সিস্টেম লসও আছে। এই হিসাবে সাড়ে ১৬ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন হলেও সরবরাহ আসলে সাড়ে সোয়া ১৫ হাজার মেগাওয়াটের কিছু বেশি।
আবার অতি গুরুত্বপূর্ণ কিছু স্থাপনা আছে, যেখানে বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করতে হয়। এসব স্থাপনায় একাধিক লাইন থাকে, একটিতে বিদ্যুৎ না থাকলে আরেকটি চালু করা হয়। এগুলো বাদ দিয়ে যে ঘাটতি দেখা দেয়, তার বেশিরভাগই যায় পল্লী বিদ্যুতের ওপর দিয়ে।
‘ভর্তুকির কারণ ক্যাপাসিটি চার্জ’
জি এম কাদের কথা বলেন বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভাড়া বা ক্যাপাসিটি চার্জ নিয়েও। তার মতে, এই চার্জের জন্যই বিদ্যুৎ ঘাতে ভর্তুকি এবং দাম বৃদ্ধির বিষয়টি আসছে।
তিনি বলেন, “বিদ্যুতের ঘাটতি কাটিয়ে উঠতে জনগণের অর্থে গঠিত সরকারি কোষাগার থেকে বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি দিতে হয়। এখন বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হচ্ছে। ক্যাপাসিটি চার্জ না দিলে দাম বাড়াতে হত না।
“দাম বাড়িয়ে গ্রাহকদের ঘাড়ে সরাসরি বোঝা চাপিয়ে ভর্তুকির অঙ্ক কমানো হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু বাড়তি দামের মাধ্যমে প্রাপ্ত অধিক অর্থের অধিকাংশ ক্যাপাসিটি চার্জ খাতে ব্যবহার হবে।”
এনআরবিসি ব্যাংক নিয়ে উদ্বেগ
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বেসরকারি খাতের এনআরবিসি ব্যাংক নিয়েও কথা বলেন জাতীয় পার্টির নেতা।
তিনি বলেন, “দেশের ব্যাংকগুলো যে রুগ্ণ ও ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে তার উদাহরণ হচ্ছে এনআরবিসি ব্যাংক। এই ব্যাংকটি দুর্নীতিতে ডুবে যাচ্ছে।”
ব্যাংকের ১৩ জন পরিচালক তাকে গত ৩০ এপ্রিল একটি চিঠি দিয়েছেন জানিয়ে বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, “ব্যাংকটি দুর্নীতিতে ডুবে যাচ্ছে। উদ্যোক্তা পরিচালকেরা বলছেন, ব্যাংক থাকবে কি না, তাঁরা তাদের টাকা পাবেন কিনা, সেটা তারা জানেন না। তারা মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।”
এ বিষয়ে তার করার না থাকায় বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে বিষয়টি সংসদে তুলে ধরেছেন বলেও জানান জি এম কাদের।