দুপুরের পর ঢাকেশ্বরী মন্দির থেকে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের উল্টো রথযাত্রা বের হওয়ায় গুলিস্তান, বঙ্গবাজার, ফুলবাড়িয়া এলাকায় দেখা গেছে যানজট।
Published : 15 Jul 2024, 09:19 PM
কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনের শুরুর সঙ্গে রাজধানীর রাস্তায় মানুষের যে ভোগান্তি শুরু হয়েছিল, তা দীর্ঘায়িত হল আরেকদিন।
এর সঙ্গে সোমবার যুক্ত হয় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের উল্টো রথযাত্রা। ফলে কোথাও যানজট, কোথাও গাড়ির সঙ্কটে পড়ে পেরেশানির আরেকটি দিন পার করল রাজধানীবাসী।
কোটা আন্দোলনকারী অবস্থানের ঢাকার একদিকের রাস্তা ছিল যানশূন্য, আবার বড় ধরনের ঘটনার শঙ্কায় কিছু রাস্তায় হাতেগোনা গাড়ি দেখা গেছে।
দুপুরের পর ঢাকেশ্বরী মন্দির থেকে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের উল্টো রথযাত্রা বের হওয়ায় গুলিস্তান, বঙ্গবাজার, ফুলবাড়িয়া এলাকায় দেখা গেছে যানজট।
সোমবার দুপুরে মিরপুর ১০ নম্বর থেকে আগারগাঁও, মহাখালী, তেজগাঁও, মগবাজার, বেইলি রোড, মৎস্য ভবন, কদম ফোরায়া এলাকা ঘুরে সড়কে যানজট দেখা যায়নি।
বেইলি রোডে হাবিবুর রহমান নামের ট্রাফিক পুলিশ সদস্য বলেন, “ছাত্র আন্দোলনের কারণে কিছু জায়গায় ব্লক করে দিয়েছে। এছাড়া গোলমালের আশঙ্কায় প্রাইভেটকারও কম দেখা যাচ্ছে। এজন্য আজ সড়কে গাড়ি কম।”
নতুন বাজার, কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায় বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করলে কুড়িল বিশ্বরোড থেকে প্রগতি সরণী হয়ে বাড্ডা-রামপুরামুখী যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। যানবাহনের জটলা চলে যায় খিলক্ষেত পর্যন্ত। এতে বিমানবন্দর সড়কে যানজটে সৃষ্টি হলে বনানীমুখী যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে।
মহাখালী বাস টার্মিনালের সামনেও সোমবার যানবাহনের ভিড় ছিল কম। মগবাজার, সাতরাস্তা, তিব্বত, নাবিস্কো, মহাখালীর বিভিন্ন স্টপেজে বাসের অপেক্ষায় থাকা যাত্রীদের ভিড় দেখা গেছে।
টঙ্গীর কলেজ গেট যেতে মহাখালী রেলক্রসিংয়ের কাছে বাসের অপেক্ষায় ছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান নামে একজন।
তিনি বলেন, “প্রায় ৪০ মিনিট ধরে এখানে বসে আছি। কোনো বাস পাচ্ছি না। দুয়েকটা আসে তা যাত্রীতে ভর্তি, ওঠা যায় না।”
মহাখালী আন্তঃজেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি আবদুল মালেক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কুড়িলে ব্লকেডের কারণে খিলক্ষেত পর্যন্ত যানজট তৈরি হয়েছে। ফলে টার্মিনালে এবং এই সড়ক ধরে গুলিস্তান, সায়েদাবাদ রুটের বাস আসতে দেরি হয়েছে। তবে ছয়টার দিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে।”
দুপুর সাড়ে ১২টার পর থেকেই বিক্ষোভ সমাবেশের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে জড়ো হতে থাকেন কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা। তাদের অবস্থানের কারণে ওই এলাকা এড়িয়ে চলে বিভিন্ন যানবাহন। ফলে আশপাশের সড়কগুলোয় ভিড় দেখা যায়।
এ কারণে দুপুরের পর বেলা তিনটার দিকে ঢাকেশ্বরী মন্দির থেকে উল্টোরথ যাত্রা শুরু করেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। শতশত মানুষ রথ নিয়ে বকশিবাজার, চাঁনখারপুল, গুলিস্তান হয়ে স্বামীবাগে ইসকন মন্দিরে যান। রথযাত্রার জন্য ওইসব এলাকায় দুইপাশের সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। যার প্রভাব পড়ে আশপাশের রাস্তায়।
এর প্রভাব পড়ে মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারেও। ফ্লাইওভার হয়ে গুলিস্তান, চাঁনখারপুলগামী যানবাহন দীর্ঘসময় আটকে থাকে। আটকে পড়া যানবাহনের সারি সায়েদাবাদ থেকে যাত্রীবাড়ী পর্যন্ত চলে যায়।
অন্যদিকে ডিএমপির ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে জানানো হয়, আফতাবনগরের সামনে ও নতুনবাজার ক্রসিংয়ে শিক্ষার্থীদের অবরোধের কারণে আশপাশের কিছু সড়কে যানজট তৈরি হয়।
ট্রাফিক পুলিশের গুলশান বিভাগের এডিসি হাফিজুর রহমান জানান, কিছু শিক্ষার্থী সড়ক অবরোধ করায় যান চলাচল ব্যাহত হয়।
ট্রাফিক পুলিশের গুলশান বিভাগ জানিয়েছে, বেলা ২টার দিকে আফতাবনগরের সামনের সড়ক অবরোধ করেন ব্র্যাক ও ইস্টওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বেলা ৪টার দিকে নতুন বাজারে সড়কে নেমে যান চলাচল আটকে দেন কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। পৌনে ৫টায় নতুন বাজারের অবরোধকারীরা সড়ক ছেড়ে দেন। আর সোয়া ৬টার দিকে রামপুরা-কুড়িল সড়কের সব স্থান থেকেই সরে যান আন্দোলনকারীরা।
ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মুনিবুর রহমান রাত ৮টায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, শিক্ষার্থীদের অবরোধ এবং উল্টোরথ যাত্রার কিছুটা প্রভাব পড়েছে।
“নতুন বাজারে শিক্ষার্থীরা রাস্তা অবরোধের প্রভাবে পড়েছে রামপুরা থেকে কুড়িল বিশ্বরোড ফ্লাইওভার পর্যন্ত। এতে প্রগতি সরনীতে তিন ঘণ্টার মতো যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। ফলে সড়কে চাপ পড়েছে, এখনও কিছুটা চাপ আছে।
“আর উল্টোরথের কারণে পুরান ঢাকার বিভিন্ন সড়কসহ মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারেরও যানজট লাগে। কিছুটা কমে এলেও যানজট এখনও কিছুটা আছে।”