আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে বিরোধী মতের বহু মানুষকে তুলে নিয়ে বিচার বহির্ভূতভাবে অজ্ঞাত স্থানে আটক রাখার অভিযোগ ওঠে, সেইসব বন্দিশালার প্রতীকী নাম রাখা হয়েছে ‘আয়নাঘর’।
Published : 12 Feb 2025, 05:08 PM
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সামনের সারিতে থাকা মো. নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াকে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর যে নির্যাতনকেন্দ্রে বন্দি করে রাখা হয়েছিল, সেই ‘টর্চার সেল’ পরিদর্শনে গিয়ে কক্ষগুলো শনাক্ত করেছেন তারা।
তখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হিসেবে আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা নাহিদ ইসলাম এখন অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা। আর আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বুধবার ঢাকার তিনটি স্থানে এরকম তিনটি গোপন বন্দিশালা ঘুরে দেখেন, যেগুলো বিগত সরকারের আমলে ‘আয়নাঘর’ নামে কুখ্যাতি পায়।
রাজধানীর আগারগাঁও, কচুক্ষেত ও উত্তরা এলাকায় ওই তিনটি স্থান পরিদর্শনের সময় কয়েকজন ভুক্তভোগী এবং সাংবাদিকরাও প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ছিলেন।
প্রধান উপদেষ্টার সহকারী প্রেস সচিব শুচিস্মিতা তিথি পরে ফেইসবুকে বেশ কিছু ছবি শেয়ার করেন, যেখানে দুই তরুণ উপদেষ্টা নাহিদ ও আসিফকে আয়নাঘরের দুটি কক্ষে দেখা যায়।
একটি পোস্টে তিথি লেখেন, “গত জুলাইয়ে সাদা পোশাকে তুলে নেওয়ার পর ডিজিএফআইয়ের এই ‘টর্চারসেলে’ রাখা হয়েছিল নাহিদ ইসলামকে। আজ সেখানে পরিদর্শনে গিয়ে কক্ষটি ‘আইডেন্টিফাই’ করেন নাহিদ। এই কক্ষের একপাশে টয়লেট হিসেবে একটি বেসিনের মতো ছিল বলে জানান তিনি। ৫ অগাস্টের পর এই সেলগুলোর মাঝের দেয়াল ভেঙে ফেলা হয়, দেয়াল রং করা হয়।”
আরেকটি পোস্টে আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার একটি ছবি এবং বন্দিশালার দুটি ছবি দিয়ে তিথি লেখেন, “গত জুলাইয়ে সাদা পোশাকে তুলে নেওয়ার পর ডিজিএফআইয়ের এই ‘টর্চারসেলে’ রাখা হয়েছিল আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াকে। আজ সেখানে পরিদর্শনে গিয়ে কক্ষটি চিনতে পেরেছেন তিনি। দেয়ালের উপরের অংশের খোপগুলোতে ‘এক্সস্ট ফ্যান’ ছিল বলে জানান তিনি।
নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ছাড়াও আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান আয়নাঘর পরিদর্শনের সময় উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস অফিস বলছে, মুহাম্মদ ইউনূসকে ঢাকার আগারগাঁওয়ের একটি নির্যাতনকেন্দ্রে ব্যবহৃত একটি বৈদ্যুতিক চেয়ার দেখানো হয়। একজন গুমের শিকার ব্যক্তি কচুক্ষেত এলাকায় প্রধান উপদেষ্টাকে নির্যাতন সেলের দেয়াল দেখান।
আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে বিরোধী মতের বহু মানুষকে তুলে নিয়ে বিচার বহির্ভূতভাবে অজ্ঞাত স্থানে আটক রাখার অভিযোগ ওঠে, সেইসব বন্দিশালার প্রতীকী নাম রাখা হয়েছে ‘আয়নাঘর’।
তুলে নেওয়া সেসব মানুষদের কেউ কেউ বহু দিন পর পরিবারের কাছে ফিরে বীভৎস নির্যাতনের বিবরণ দিলেও অনেকের খোঁজ এখনও মেলেনি। বিভিন্ন বাহিনীর আওতাধীন এমন আয়নাঘরের সন্ধান পাওয়ার কথা বলেছে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত ‘গুম তদন্ত কমিশন’।
আরও পড়ুন