পুরনো বাসের ফাঁদে পথ হারাবে ঢাকা নগর পরিবহন? আলাদাই থাকতে চান বাস মালিকরা

এক বছর পরও অন্য বাস চলছে পাল্লা দিয়ে; যাত্রী টানতে হুড়োহুড়ির সেই পুরনো চিত্র রয়েই গেছে। এতে সড়কে পরিস্থিতি পাল্টেনি; যাত্রীবান্ধবও হয়নি গণপরিবহন।

ওবায়দুর মাসুমবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 March 2023, 06:57 PM
Updated : 12 March 2023, 06:57 PM

রাজধানীর গণপরিবহনে যাত্রীদের স্বস্তির চলাচল আর শৃঙ্খলা ফেরানোর উদ্যোগ ‘ঢাকা নগর পরিবহন’ এর পথে পথে বাগড়া আসছে; বছর পেরোনোর পরও এর এগিয়ে চলায় এখনও বড় বাধা বাস মালিকদের ‘বিরোধিতা’।

নির্দিষ্ট স্থান থেকে ওঠানামা, সরকার নির্ধারিত ভাড়ায় টিকেট কেটে যাত্রী তোলা, যাত্রী টানতে বাসে-বাসে টক্কর বন্ধের মত ইতিবাচক সিদ্ধান্তে পরিবর্তনের পথ খুলবে বলে যে প্রত্যাশা ছিল তা এতে থমকে যেতে বসেছে। ফিটনেসবিহীন পুরনো বাস এনে, পারমিটবিহীন আর অন্য রুটের বাস এনে জড়ো করে ঢাকা নগর পরিবহনের বাসে যাত্রী আটকানোর কৌশল এখন নিত্যকার ঘটনা।

যে কারণে লক্কড় ঝক্কড় বাসকে বিদায় বলে বাস রুট ফ্র্যাঞ্চাইজির আওতায় একক বাস কোম্পানির ছায়াতলে আসার পদক্ষেপে সাড়া মিলছে না বাস মালিকদের। লোকসানের মুখে অনেকে বাস দিয়ে ফিরিয়েও নিয়েছেন। অন্য পরিবহন মালিকরা আগের মতই আলাদা বাস চালানোর চেষ্টা করেই যাচ্ছেন; এমনকি হস্তক্ষেপ চেয়েছেন সরকারপ্রধানের। পাশাপাশি পুরনো প্রতিযোগিতা ফিরিয়ে এনে সড়কে নগর পরিবহনের বাস চলাচলে নানা প্রতিবন্ধকতা তৈরির অভিযোগও সামনে আসতে শুরু করেছে।

এরমধ্যেও রাজধানীর বাস ব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর নতুন এ পদ্ধতির অংশ হিসেবে প্রথম চালু ঘাটারচর-কাচপুর রুটের যাত্রীরা সুফল পাওয়ার কথা বলছেন। তাদের স্বস্তির যাত্রার ধারাবাহিকতায় আরও তিন রুটে নেমেছে ঢাকা নগর পরিবহনের বাস। এসব রুটে দৈনিক প্রায় ৩০ হাজার যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে; এ পর্যন্ত আয় হয়েছে ৭ কোটি টাকার বেশি বলে গত ৬ ফেব্রুয়ারি বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটির সভার তথ্য।

তবে অন্যসব বাসের বেপরোয়া চলাচলে ঢাকা নগর পরিবহনের সেবা টিকে থাকবে, না কি মুখ থুবড়ে পড়বে সেটাই দেখার বিষয় বলে মনে করছেন এসব রুটের যাত্রীরা। তাদের মতো এ সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরানোর এ পদক্ষেপকে পেছন থেকে টেনে ধরার কৌশলও চলছে সমানতালে।

যে কারণে বিদ্যমান ব্যবস্থা আমূল পাল্টে যাত্রীবান্ধব সেবার জন্য রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার তাগিদ এসেছে এক বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে।

নতুন এ ব্যবস্থা দেখভালের দায়িত্বে থাকা ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) নির্বাহী পরিচালক এবং বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটির সদস্য সচিব সাবিহা পারভীন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, ঢাকা নগর পরিবহনের বাস যেসব রুটে চলছে সেগুলোতে অন্য পরিবহনের ‘অবৈধ বাস’ চলাচলে ভ্রাম্যমান আদালত কাজ করছে। তবে বৈধ রুট পারমিট থাকলে সেগুলোতে তারা বাধা দিচ্ছেন না।

তার ভাষ্য, “এতে তাদের (বেসরকারি পরিবহন মালিক) অসুবিধা হয়ে থাকলে তা নিয়ে কিছু বলতে পারব না। বৈধ যারা ব্যবসা করেন তাদের নিয়ে একজোট হয়েই আমরা কাজ করার চেষ্টা করছি।”

ঢাকা নগর পরিবহনে অংশ নিতে বাস মালিকদের আহ্বান জানানো হলেও তেমন সাড়া মিলছে না বলে জানান তিনি।

ঢাকা নগর পরিবহনের বাসের রুটগুলোতে পারমিট ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি নামানোসহ প্রতিবন্ধকতা তৈরির অভিযোগ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ দাবি করেন, বর্তমানে রুট রেশনালাইজেশন ঠিকভাবে হচ্ছে না। এ ব্যবস্থায় এক বছরের মধ্যে ১০০ গাড়িও যুক্ত হয়নি।

গুটিকয়েক গাড়ি এসেছে মন্তব্য করে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “নতুন গাড়ি এলে যদি পুরনো গাড়ি উঠিয়ে দেয় তাহলে আমাদের কোনো আপত্তি নাই।“

নগর পরিবহনের রুটে তারা আগের মত পুরনো বাস চালাতে চান জানিয়ে পরিবহন খাতের এই নেতা বলেন, “নতুন গাড়ি আনলে পুরান গাড়ি কী করবে- সে বিষয়ে একটা সিদ্ধান্ত দিক। বাধা দিয়ে বাসগুলো বসিয়ে রাখলে তো কোনো ভালো সিদ্ধান্ত হল না। আমরা বলতে চাচ্ছি আমাদের বাস চলাচলে বাধা যেন না দেয়।”

এমন পরিস্থিতিতে বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটির সভাপতি ঢাকা দক্ষিণের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস ১ মার্চ আবারও এক অনুষ্ঠানে রাজধানীর গণপরিবহনের নাজুক ও বিশৃঙ্খল অবস্থা কাটাতে যত বাধা-বিপত্তিই তা মোকাবিলা করার কথা জানিয়েছেন।

পাল্টাপাল্টি

খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, রাজধানীতে বাস রুট রেশনালাইজশনের আওতায় ঢাকা নগর পরিবহনের বাস চলাচলে বাধা তৈরি করতে একই রুটে নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে অবৈধ ও ফিটসেনবিহীন বাস। এমনকি অন্য রুটের বাসও এনে চালানো হচ্ছে ওই রুটে।

নতুন কোম্পানিতে গাড়ি দিয়েছেন এমন মালিক-শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নিয়ম না মানা বাসগুলো যত্রতত্র থামিয়ে যাত্রী তোলে, নামায়। তাদের বাসের সামনে গিয়ে পথ আটকে রাখে। এতে যাত্রী কম থাকায় নগর পরিবহনের বাসগুলো লোকসান গুনছে।

আশিকুর রহমান নামে নগর পরিবহনের একটি বাসের চালক তার রুটের অন্য কোম্পানির বাস চালকদের প্রতিনিয়তই ‘পাড়াপাড়ি করে’ গাড়ি চালানোর অভিযোগ করেন।

‘বাস রুট রেশনালাইনজেশন কমিটি’ এসব বাস বন্ধে কঠোর হওয়ার পর পরিবহন মালিকদের সঙ্গে কমিটির বিরোধও অনেকটা প্রকাশ্যে। এটি সামাল দিতে ইতোমধ্যে মালিকপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ঢাকার দুই মেয়র।

আর মালিক ও শ্রমিক ফেডারেশনের নেতারা ১১টি দাবি তুলে এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। তাদের অভিযোগ নগর পরিবহনের রুটে অন্য বাস চলতে দেওয়া হচ্ছে না।

কমিটি বলছে, বৈধ বাস চলাচলে কোনো বাধা দেওয়া হচ্ছে না। রুট পারমিটবিহীন বাসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

এ নিয়ে গত ১ মার্চ বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটির সভাপতি তাপস বলেছেন, ঢাকায় গণপরিবহনের নাজুক এবং বিশৃঙ্খল অবস্থার পেছনে ‘অনেক চক্র ও স্বার্থান্বেষী মহল’ রয়েছে।

রুট পারমিট-ফিটনেসবিহীন বাসের ছড়াছড়ি

রাজধানীর গণপরিবহনে ভোগান্তি কমাতে ২০২১ সালের ২৬ ডিসেম্বর একই রুটে একক কোম্পানির বাস চলাচলের নতুন ব্যবস্থা হিসেবে ঢাকা নগর পরিবহন যাত্রা শুরু করে ঘাটারচর-কাচপুর রুটে। পরে নিয়ম কিছুটা শিথিল করে বাস রুট রেশনালাইনজেশন কমিটি।

এতে ঢাকা নগর পরিবহনের বাসের সঙ্গে অন্য বাসও চলছে পাল্লা দিয়ে; ফিরে এসেছে যেখানে সেখানে বাস থামানো, ভাড়া বেশি নেওয়া ও যাত্রী টানতে হুড়োহুড়ির সেই পুরনো চিত্র। এতে সড়কে পরিস্থিতি পাল্টেনি; যাত্রীবান্ধবও হয়নি গণপরিবহন।

বাস রুট রেশনালাইজেশনের আওতায় এখন ২১, ২২ ও ২৬ নম্বর রুটে চলছে ঢাকা নগর পরিবহন। ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেশন অথরিটি (ডিটিসিএ) জানিয়েছে, এ তিন রুটে নগর পরিবহনের ১৫০টি বাস চলছে। ঘাটারচর থেকে উত্তরার দিয়াবাড়ি পর্যন্ত দুটি রুটে নগর পরিবহনের আরও ৫০টি বাস আগামী পাঁচ মাসের মধ্যে নামবে বলে গত ৭ ফেব্রুয়ারি বাস রুট র‌্যাশনালাইজেশন কমিটির সভায় জানানো হয়।

বর্তমানে এ তিন রুটে নগর পরিবহনের বাসের বাইরে চলছে আরও অনেক কোম্পানির বাস। এসব রুটের ভিন্ন ভিন্ন পথে গ্লোরি, মৌমিতা, আশিয়ান, গ্রিন বাংলা, স্বাধীন, অভিনন্দন, পরিস্তান, প্রজাপতি, আনন্দ, বোরাক, আলদী, রাইদা, মালঞ্চ, মিডলাইন, মিডওয়ে পরিবহন ও ১৩ নম্বর বাস চলাচল করতে দেখা গেছে।

ঢাকা আঞ্চলিক পরিবহন কমিটি (মেট্রো আরটিসি) শহর ও শহরতলীর বিভিন্ন রুটে বাসের অনুমোদন দেয়। কমিটির অনুমোদিত রুটের তালিকায় আশিয়ান, গ্রিন বাংলা, অভিনন্দন, আনন্দ ও আলদী পরিবহনের নাম পাওয়া যায়নি। এসব কোম্পানির কত বাস চলছে সে হিসাবও নেই।

অপরদিকে অন্য ১১টি পরিবহনের ১০১৮টি বাস চলে ঢাকা নগর পরিবহনের রুটে। এগুলোর রুট পারমিট থাকা ৫৪০টি বাসের মধ্যে চলে ৪০৬টি এবং অন্য রুটের অনুমোদন থাকা ৩১১টি বাস চলছে। এছাড়া ২১৪টি বাসের কোনো রুট পারমিট নেই এবং ৮৭টি বাস চলছে ফিটনেস ছাড়া বলে জানাচ্ছে আরটিসির তালিকা।

তবে রুট পারমিটবিহীন বাসের সংখ্যা আরও বেশি বলে জানান ঢাকা নগর পরিবহনের বাস পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত ডিটিসিএর একজন কর্মকর্তা জানান।

নাম না জানিয়ে এ সংস্থার আরেক কর্মকর্তা বলেন, “এখনও নতুন নতুন বাস নামিয়ে দিচ্ছে, অন্য রুটের বাস আনছে। এদের বেশিরভাগ বাসেরই রুট পারমিট নেই। অবৈধ বাস বন্ধ করতে আমরা হিমশিম খাচ্ছি। আমাদের বাস চলতে দেওয়া হয় না, নানাভাবে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয়।”

এমন অবস্থায় রুট রেশনালাইজেশন কমিটি অনুমোদনবিহীন বাস তুলে দিতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা শুরু করেছে। এতেই পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা এবার প্রকাশ্যে এর বিরোধিতায় নেমেছেন বলে কর্মকর্তাদের ভাষ্য। এর সূত্র ধরেই ২২ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়ে চিঠি দেন বাস মালিকরা।

বাস না দেওয়ার কারণ

ঢাকা নগর পরিবহনে যুক্ত না হওয়ার অন্যতম কারণ বিদ্যমান কোম্পানি বা পরিবহনগুলোর পুরনো বাস। একই রুটে চলাচলকারী অন্য বাসগুলোর বড় অংশ ২০১৯ সালের আগে তৈরি বলে সেগুলোর নতুন সেবায় যুক্ত হওয়ার সুযোগ নেই।

বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ঢাকা নগর পরিবহনে যুক্ত হতে হলে বাসগুলোকে ২০১৯ সালের পরের হতে হবে। যে কারণে বারবার আহ্বানের পরও বেসরকারি বাসের মালিকরা এতে যুক্ত হচ্ছেন না। তারা আগের মতই জোড়াতালি দিয়ে, নানাবিধ অনুমোদনকে পাশ কাটিয়েই পথে থাকতে চাচ্ছেন, বলে জানান এক বাস মালিক।

বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক শামসুল হক বলেন, “বাস রুট ফ্র্যাঞ্চাইজি মানে ভদ্র বাস পরিবহন, ভদ্রের পাশে যদি অভদ্র চলে তাহলে ইউজার কখনোই ভদ্রের কাছে যাবে না। কারণ আমি হাত উঠালেই যদি বাস থেমে যায় তাহলে কষ্ট করে নগর পরিবহনের যাত্রী ছাউনিতে যাব না। ফলে যারা বিনিয়োগ করবেন তারা কোনো প্রাপ্তি দেখছেন না। বাসও এ কারণে দিচ্ছেন না।”

মালিকদের যত দাবি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে চিঠিতে মালিকপক্ষ দাবি করে, “বাস রুট রেশনালাইজেশনের নামে ঢাকা শহরে অন্যান্য রুটের সকল মালিকের গাড়ি চলাচলে বাধা দেওয়া হচ্ছে। এমনকি নতুন রুট পারমিট দেওয়াও বন্ধ রাখা হয়েছে।“

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে একই কথা বলেন। নগর পরিবহনের রুটে তারা আগের মত পুরনো বাস চালাতে চান বলে তিনি জানান।

তিনি বলেন, ঢাকায় পরিবহন ব্যবসা অলাভজনক। এখানে প্রতি ঘণ্টায় গতি সর্বোচ্চ ছয় কিলোমিটার। সারাদিনে দুই ট্রিপ মারতেও কষ্ট হয়। বাস রুট রেশনালাইজেশনে যেতে মালিকদের আগ্রহ নেই।

“কাজেই লাভ না হওয়ায় এখানে কেউ ইনভেস্ট করে না। উনারা (বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটি) বিজ্ঞাপন দিয়েও দেখেছেন, কেউ আসে না।”

‘প্রয়োজন রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত’

মেট্রো রেল, বাস রুট ফ্র্যাঞ্চাইজিসহ নগর পরিবহন নিয়ে কাজ করা অধ্যাপক শামসুল হক মনে করেন নগর পরিবহন ব্যবস্থা চালু হলে পরিবহন মালিকদের সংগঠন দুর্বল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় তারা এর বিরোধিতা করছেন। শৃঙ্খলা ফেরানো উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে হলে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরামর্শ তার।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “বাস রুট রেশনালাইজেশন হলে পাঁচ-সাতটা কোম্পানির বাইরে আর কেউ থাকবে না। কিন্তু তারা (পরিবহন মালিকরা) হাজার হাজার মালিক চান, পদ আর প্রাপ্তি চান। পদ পেলে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক যে পাওয়ার (ক্ষমতা) তারা পান, সেটা থাকবে না। সঙ্গত কারণেই যারা এখানে আছেন তারা সরতে চাইবেন না।”

তার মতে, “নতুন শতাব্দীর বাস রুট হলে এই ঢাকার চেহারা চেঞ্জ হয়ে যাবে। সরকারকে বলতে হবে ‘আপনারা যারা যারা এতদিন সেবা দিয়েছেন আমরা কৃতজ্ঞ। কিন্তু এখন চলে যেতে হবে। আমি ক্ষতিপূরণ দিয়ে দিব।’ এটা সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে এই সিদ্ধান্ত আসতে হবে। নইলে হবে না।”

তবে বর্তমান রুটগুলো রেখে বাস রুট ফ্র্যাঞ্চাইজি করার চেষ্টায় শৃঙ্খলা আসবে না বলে মনে করেন তিনি। সুশৃঙ্খল গণপরিবহনের নিয়ম অনুযায়ী একটা রুটে একটাই বাস চালানোর পরামর্শ তার।

নগর পরিবহনের রুটে এক বেলা

ঘাটারচর থেকে মোহাম্মদপুর পর্যন্ত গিয়ে দেখা গেছে, নগর পরিবহনের

বাসগুলো ঘাটারচর থেকে ছেড়ে আসার পর বসিলা কাউন্টারে থামে। এরপর চলে আসে মোহাম্মদপুর কাউন্টারে। আর এ পথে অন্য পরিবহনের বাসগুলো যাত্রীরা হাত ইশারা করলেই যেখানে সেখানে থামিয়ে যাত্রী তুলছিল।

মোহাম্মদপুরে নগর পরিবহনের কাউন্টার মোড় থেকে কিছুটা

দূরে। অথচ অন্য বাসগুলো মোড়েই দাঁড়িয়ে যাত্রী নিচ্ছে। সোমবার বিকালে গিয়ে দেখা গেছে, নগর পরিবহনের ওই কাউন্টারের সামনে

যখন যাত্রীরা বাসের অপেক্ষায় ছিলেন, তখন মিডওয়ে পরিবহনের একটি বাস সেখানে থামিয়ে যাত্রী তোলার চেষ্টা করছিল।

ওই কাউন্টারের টিকেট বিক্রেতা আবদুল খালেক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর

ডটকমকে বলেন, “বেসরকারি বাস প্রায়ই এমন করে। তাদের কোনো কাউন্টার

নাই, মোড়ে দাঁড়াইয়া যাত্রী তোলে। আবার যাওয়ার সময় এখানে থামায়। দুইদিন এইটা নিয়া ঝগড়াও করছি। কিন্তু কোনো কাম হয় না।”

ওই কাউন্টারে মতিঝিলগামী যাত্রী রোকন ভূঁইয়া বলেন, “নগর পরিবহনের এই বাসগুলোয় চড়া অনেকটা স্বস্তির। তবে বাসের সংখ্যা কম। আরও বাস নামাতে হবে। বেশি বাস নামলে বেসরকারি বাস এমনিতেই উঠে যাবে। ওই গাড়িগুলো বহু পুরোনো, নোংরা, ভাঙাচোরা এসব বাস জোর করে চালাচ্ছে।”

Also Read: শুরু হচ্ছে নগর পরিবহনে ‘শৃঙ্খলা ফেরানোর’ পরীক্ষা

Also Read: ঢাকায় নগর পরিবহনের আরও দুই রুট

Also Read: ঢাকা নগর পরিবহনের বাস অক্টোবরে আরও ৩ রুটে

Also Read: টার্মিনালে সরবে ঢাকার সব কাউন্টার: তাপস