ঢাকার গণপরিবহনে শৃঙ্খলা আনতে কোনো বাধা মানা হবে না, এমন হুঁশিয়ারিও দেন তিনি।
Published : 01 Mar 2023, 08:45 PM
রাজধানী ঢাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা দূরপাল্লার বাসের সব কাউন্টার পর্যায়ক্রমে শহরতলীর টার্মিনালগুলোতে স্থানান্তরের কথা জানিয়েছেন শেখ ফজলে নূর তাপস।
প্রথমে আগামী ২ মে থেকে কুমিল্লা ও সিলেটগামী বাস কোম্পানির এবং আগামী বছর জানুয়ারি থেকে চট্টগ্রামগামী বাসের কাউন্টারগুলো শহরের মধ্যে থেকে সরিয়ে নেওয়ার সময়সীমা নির্ধারণের কথা জানান তিনি।
বুধবার সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি ও শ্রমিক ফেডারেশনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে ‘সর্বসম্মতিক্রমে’ এ সিদ্ধান্ত হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, যত বাধা-বিপত্তিই আসুক রাজধানীর গণপরিবহন ব্যবস্থাকে একটি শৃঙ্খলার মধ্যে আনা হবে।
এদিন সন্ধ্যায় ঢাকা দক্ষিণ নগর ভবনে সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি ও শ্রমিক ফেডারেশনের নেতাদের সঙ্গে ঢাকার দুই সিটি মেয়রের এ বৈঠক হয়।
আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে কাঁচপুরের আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল ব্যবহার উপযোগী হবে জানিয়ে মেয়র তাপস বলেন, জানুয়ারি থেকে চট্টগ্রাম, সিলেট ও কুমিল্লাসহ ওই এলাকার সকল জেলার বাস কাউন্টার সেখানে স্থানান্তর করতে হবে। ঢাকার অভ্যন্তরে তখন সেসব এলাকার আর কোনও কাউন্টার রাখা যাবে না।
এর আগে খিলগাঁওয়ে এক অনুষ্ঠান শেষে তিনি একটি মহল ঢাকার গণপরিবহনে শৃঙ্খলা আনতে চায় না দাবি করে বলেন, সব বাধা কাটিয়ে এ ব্যবস্থার পরিবর্তনে কাজ চলছে।
ইতোমধ্যে এ কার্যক্রম শুরু হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “যেখানে-সেখানে কাউন্টার এবং সেই কাউন্টার ঘিরে রাস্তার উপর গাড়ি রেখে যানজট সৃষ্টি করতে দেওয়া হবে না। এজন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়ন করা হচ্ছে।
“সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের আধুনিকায়ন করেছি এবং সেটার পরিসর বাড়িয়েছি। এই মার্চ মাসের মধ্যেই আমরা কাজ শেষ করতে পারব। সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল আধুনিক হওয়ার পরে বাইরে যত্রতত্র কাউন্টারের আর প্রয়োজন হবে না।”
আগামী এপ্রিলেই সব কাউন্টার টার্মিনালের ভেতরে নিয়ে যেতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
সমন্বয় সভায় দুই মেয়র
এরপর সন্ধ্যায় ঢাকা দক্ষিণের মেয়র তাপস ও উত্তর সিটির মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম নগর ভবনে সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি ও শ্রমিক ফেডারেশনের নেতাদের সঙ্গে একটি সমন্বয় সভা করেন।
বৈঠকে বাস মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের নেতারা বাস রুট রেশনালাইজেশনের আওতায় আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালগুলো ব্যবহার উপযোগী হওয়ার পরই ঢাকা শহরের ভেতর থেকে বাস কাউন্টার বন্ধ করা, দক্ষিণাঞ্চলের যেসব বাসের রুট পারমিট বন্ধ রয়েছে সেগুলো আবার সচল করতে প্রস্তাব দেন।
এ বিষয়ে তাপস বলেন, “যেসব প্রস্তাব রয়েছে তা যদি পুরোপুরি বিবেচনা করা হয় তাহলে বিষয়টা দাঁড়ায় যে, দিন শেষে তালগাছ আমার! আমাদেরকে এটা (ঢাকার অভ্যন্তরে বাস কাউন্টার বন্ধ) করতেই হবে। টার্মিনালে ঢুকতেই হবে। না হলে গণপরিবহনের শৃঙ্খলা আসবে না।
“অবশ্যই আমরা অনুধাবন করি যে, বাস্তবতা এটাই- সব একসাথে করা সম্ভব না। এজন্য আমরা পর্যায়ক্রমে, ধীরে-ধীরে, ধাপে-ধাপে আমরা আগাব।”
তিনি বলেন, “আজকের সমন্বয় সভায় সামগ্রিক পর্যালোচনা ও সামনের পবিত্র ঈদ-উল-আযহার সময় বিবেচনায় নিয়ে পর্যায়ক্রমে আমরা ১ এপ্রিলের পরিবর্তে ২ মে (১ মে ঈদের বন্ধ) থেকে সিলেট ও কুমিল্লাগামী বাসের সব কাউন্টার সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে স্থানান্তর করতে বলেছি।”
এদিকে গত ২২ ফেব্রুয়ারি সড়ক পরিবহন মালিক এবং শ্রমিক ফেডারেশনের পক্ষে প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি চিঠি দেওয়া হয়। এতে বাইরের কাউন্টার সরিয়ে না দেওয়া এবং নগর পরিবহনের পাশাপাশি অন্য পরিবহন মালিকদের বাস চলাচলে যেন বাধা না দেওয়া হয় সেজন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাওয়া হয়।
সভায় মেয়র আতিকও রাজধানীর যানজট কমাতে আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালগুলো শহরের বাইরে নিতে কার্যক্রম শুরু করার কথা জানান। তিনি বলেন, মেট্রো রেলের স্টেশনগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। এর আগে শিগগির মহাখালী বাস টার্মিনালের পেছনের অংশ বাড়ানো হবে। এতে টার্মিনালে বাস রাখার সংখ্যা বাড়বে, কিছুটা শৃঙ্খলা ফিরবে।
সভায় সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শাজাহান খান উপস্থিত ছিলেন।