পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর সড়ক পথে আড়াই থেকে তিন ঘণ্টায় চলে যাওয়া যাচ্ছে বরিশালে। তাই যাত্রীরা নৌ পথ ব্যবহার করছে কমই।
Published : 14 Jun 2024, 09:58 PM
পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে যাত্রী খরায় ভোগা বরিশালের লঞ্চগুলো ঢাকা থেকে ঈদের আগেও যাত্রী পাচ্ছে না। তবে দক্ষিণের অন্যান্য রুটে ঠাসা যাত্রী নিয়েই সদরঘাট থেকে ছাড়ছে নৌযান।
টার্মিনাল আবার সরগরম হয়ে উঠেছে, ফিরে এসেছে যাত্রীতে ঠাসাঠাসির রূপ।
শুক্রবার দিনভর দক্ষিণের পথে ভরপুর যাত্রী নিয়ে ছেড়ে গেছে একের পর এক লঞ্চ।
ভোলা, চরফ্যাশন, মনপুরা, পটুয়াখালী, বরগুনা, পিরোজপুরের হুলারহাট, ভান্ডারিয়া, নোয়াখালীর হাতিয়াসহ আরও কিছু এলাকায় যাত্রীর চাপ বেশি।
এমনিতে এসব রুটে দিনে একটি করে লঞ্চ চলে। তবে ভোলা, মনপুরা, হাতিয়া রুটে শুক্রবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তিনটি লঞ্চ ছেড়ে গেছে। যাত্রীর উপস্থিতি বেশি থাকলে রাতেও লঞ্চ ছাড়ার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে মালিকপক্ষ।
বিপরীত চিত্র বরিশালের পথে। বিকাল সাড়ে ৪টার দিকেও এই পথের লঞ্চগুলো ফাঁকাই পড়েছিল।
ঢাকা-মুলাদি রুটে চলাচলকারী অভিযান-৫, ঢাকা-ভাষানচর রুটের সম্রাট-২ লঞ্চের। কর্মীরা জানান, তারা মাসে ছয়টি করে ট্রিপ মারলেও ঈদ উপলক্ষে প্রতিদিনই লঞ্চ চালাতে চাচ্ছেন। কিন্তু পদ্মাসেতুর কারণে সড়কপথেই যাত্রী বেশি চলে। লঞ্চে তারা পাচ্ছেন না।
“রাত ৯টায় আমাদের লঞ্চ ছেড়ে যাবে। ততক্ষণে যাত্রী চলে আসবে বলে আশা করছি। কিছু কেবিন বুকিং হলেও এখনও অনেক কেবিন খালি আছে”, বলেন সম্রাট-২ এর কর্মী সেলিম।
পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর সড়ক পথে আড়াই থেকে তিন ঘণ্টায় চলে যাওয়া যাচ্ছে বরিশালে। তাই যাত্রীরা নৌ পথ ব্যবহার করছে কমই।
কেবিন পেতে হন্যে
যেসব রুটে যাত্রী বেশি, সেসব রুটে কেবিন বুকিং করতে হিয়ে হিমশিম খাচ্ছে যাত্রীরা।
বিকালে হাতিয়াগামী তাসরিফ-১ লঞ্চের যাত্রী রকিব হাসান বলেন, “গত দুই দিন ধরে চেষ্টা করেও কোনো লঞ্চের অফিসিয়াল ফোন নম্বরে কল করে কেবিন বুকিং করতে পারিনি। বউ-বাচ্চাসহ যাচ্ছি, কেবিন ছাড়া উপায়ও ছিল না। পরে স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধির সুপারিশে একটি কেবিন পেয়েছিলাম।
“এখন লঞ্চে এসে দেখি সেই কেবিনটাও তমুরদ্দি ঘাটের এক ইজারাদারের কথায় বাতিল হয়ে গেছে। এখন ছোট ছোট বাচ্চা, অনেকগুলো ব্যাগ আর মহিলা মানুষ নিয়ে বিপদে পড়ে গেছি। লঞ্চের ডেকে বসে যাওয়ার উপায় নেই। দুপুরের মধ্যেই সব দখল হয়ে গেছে।“
কেবিন নিয়ে একাধিক যাত্রীর এমন অভিযোগের বিষয়ে তিনটি লঞ্চের দায়িত্বরত কর্মীদের সঙ্গে কথা বললে তারাও একই কথা জানান।
“আমাদের কিছু করার নেই। লঞ্চের সব কেবিন তমুরদ্দি ঘাটের মিরাজ সর্দার বুকিং করেন। মিরাজ ভাই ফোন দিলে আমরা কেবিন দিতে পারব”, বলেন ফারহান-১০ লঞ্চের একজন কাউন্টার কর্মী।
‘ঝামেলা এড়াতে’ নাম বলতে চাননি তিনি।
অভিযোগের বিষয়ে মিরাজের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।
ঈদে যাত্রীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় লঞ্চে মোটরসাইকেলসহ ভারী মালামাল পরিবহন বন্ধ রেখেছে নৌচলাচল কর্তৃপক্ষ। অনেক যাত্রী মোটরসাইকেলসহ লঞ্চে ভ্রমণ করতে এসে পড়েছেন বিপাকে।
পিরোজপুরের সালাউদ্দিন মুকুল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কয়েক ঘণ্টা ধরে পন্টুনে বসে আছি। তারা লঞ্চের কাছে ভিড়তেই দিচ্ছে না। কর্তৃপক্ষের নিষেধ আছে বলে শুনেছি। আমার বাড়ি পিরোজপুরের লঞ্চ ঘাট থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে। তাই ভাবলাম মোটরসাইকেলটা নিয়েই যাই।”
ঢাকায় ছোটখাটো একটি প্লাস্টিক কারখানার মালিক সালাউদ্দিন মুকুল। গার্মেন্টস এক্সেসরিজের পাশাপাশি বিভিন্ন ওষুধের বোতল তৈরি করেন তিনি।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের নৌ নিরাপত্তা ও ট্র্যাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম পরিচালক মো. ইসমাইল হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বৃহস্পতিবার সদরঘাট থেকে ৯৪টা লঞ্চ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে গেছে। শুক্রবার সেটি একশর বেশি হবে।
ঈদের এই মৌসুমে সময়সূচির কোনো হিসাব করা হচ্ছে না জানিয়ে তিনি বলেন, “যাত্রী পূর্ণ হয়ে গেলেই লঞ্চগুলো ছেড়ে হচ্ছে। যেসব রুটে যাত্রীর চাপ বেশি, সেখানে প্রয়োজনে একাধিক বা দুইয়ের অধিক লঞ্চ চলাচল করতে দেয়া হচ্ছে।
আগামী ২২ জুন পর্যন্ত এই বিশেষ ব্যবস্থা চলমান থাকবে বলেও জানান তিনি।