“আমার বড়দিন উদযাপনে আধ্যাত্মিকভাবে ও বাহ্যিকভাবে প্রস্তুত।”
Published : 24 Dec 2024, 11:44 PM
খ্রিষ্টানদের সবচেয়ে ধর্মীয় উৎসব বড়দিন উপলক্ষে বর্ণিল সাজে সেজেছে গির্জা, পাঁচ তারকা হোটেল আর খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের বাড়িঘর।
বিশ্বের অন্যান্য স্থানের মত বাংলাদেশেও খ্রিষ্ট ধর্মের অনুসারীরা নানা আয়োজনে বুধবার উদযাপন করবে যিশু খ্রিস্টের জন্মতিথি। তবে মঙ্গলবার রাত থেকে গির্জায় গির্জায় শুরু হয়েছে বড়দিনের প্রার্থনা।
যিশু খ্রিস্টের জন্মের সময়কে স্মরণ করতে গির্জাগুলো সেজেছে বর্ণিলভাবে। বড় হোটেলগুলোও সাজানো হয়েছে বড়দিনের আমেজে। আয়োজন করা হয়েছে নানা অনুষ্ঠানের। সেখানে শিশুদের জন্য নানা উপহারের ডালি সাজিয়ে আসবেন ‘সান্তা ক্লজ’।
বড়দিন উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে দেশ ও জনগণের কল্যাণে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তার বাণীতে বলেন, “একটি বৈষম্য ও দুর্নীতিমুক্ত এবং ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বন্ধনকে আরো মজবুত করতে হবে। আমি জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলকে একটি আধুনিক, উন্নত বাংলাদেশ গড়ার অগ্রযাত্রায় সামিল হওয়ার আহ্বান জানাই।”
গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ‘বৈষম্যহীন সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে অঙ্গীকারবদ্ধ’ জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস তার বাণীতে সবাইকে দেশের উন্নয়নে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। হাজার বছর ধরে এদেশে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব ধর্মের মানুষ একসাথে মিলেমিশে বসবাস করছে। এখানে রয়েছে সকল ধর্ম ও সম্প্রদায়ের মানুষের নিজস্ব ধর্ম পালনের পূর্ণ স্বাধীনতা। বড়দিন দেশের খ্রিষ্টান ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের মধ্যকার বিরাজমান সৌহার্দ ও সম্প্রীতিকে আরো সুদৃঢ় করবে বলে আমি আশা করি।”
বড়দিন উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টা মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন।
খ্রিষ্টানদের এই উৎসব ঘিরে রাজধানীতে নিরাপত্তা জোরদারের কথা জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম) মো. মাসুদ করিম।
মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর রমনার কাকরাইলে অবস্থিত সেন্ট মেরী’স ক্যাথেড্রাল চার্চে বড়দিনের সার্বিক নিরাপত্তা মহড়া পরিদর্শন শেষে তিনি বলেন, “নগরীর প্রতিটি চার্চে সাদা পোশাকে ও ইউনিফর্মে পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়াও এই উৎসবকে ঘিরে সোয়াট, বোম্ব ডিসপোজাল টিমসহ স্পেশালাইজড ইউনিটগুলো দায়িত্ব পালন করবে। বর্তমানে সেনাবাহিনী আমাদের সাথে আছে। তারাও মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে। সকলের সহযোগিতায় অত্যন্ত আনন্দঘন পরিবেশে বড়দিন উদযাপন হবে।”
বড়দিন উপলক্ষে ‘নিরাপত্তা ঝুঁকি’ নেই দাবি করে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমরা অত্যন্ত সতর্ক রয়েছি।”
বড়দিন উপলক্ষে মঙ্গলবার রাত ১২টা থেকে বুধবার রাত ১২টা পর্যন্ত রাজধানীতে আতশবাজি, পটকা ফোটানো এবং ফানুস উড়ানো নিষিদ্ধ করেছে পুলিশ।
খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের প্রধান উৎসব বড়দিন উদযাপনে ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা অনুদান দিয়েছে সরকার।
উৎসবের আমেজ গির্জায়
বড়দিন উপলক্ষে রাজধানীর গির্জাগুলো সাজানো হয়েছে উৎসবের আমেজে। সবগুলো গির্জায় পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মত।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তেজগাঁওয়ের পবিত্র জপমালা রাণী গির্জা সাজানো ছিল বর্ণিল আলোকসজ্জায়। প্রার্থনার জন্য সাজানো হয়েছে উপসনালয়। আছে একাধিক ক্রিসমাস ট্রি, যিশু খ্রিষ্ট্রের জন্মতিথী স্মরণে সাজানো হয়েছে গোশালা। গির্জা প্রাঙ্গণ ও আশপাশের এলাকায় ছিলেন পুলিশ সদস্যরা।
সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বড়দিনের প্রথম প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয় এ গির্জায়। আর রাত ১০টায় দ্বিতীয় উপাসনার আয়োজন করা হয়। বড়দিনের দিন সকাল সাড়ে ৬টা ও ৯টায় এখানে প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে গির্জা কর্তৃপক্ষ।
ইস্কাটনের সেন্ট থমাস চার্চ নতুন কেন্দ্রে সাজসজ্জার আয়োজন দেখা গেলেও প্রবেশের অনুমতি মেলেনি।
কাকরাইলের সেন্ট মেরীস ক্যাথিড্রাল গির্জার পুরো প্রাঙ্গণ আলোকজসজ্জা করা হয়েছে। উপাসনালয়ও সুসজ্জিত। সেখানেও চোখে পড়ে ছোট্ট যিশুর প্রতিকৃতিসহ গোশালা, একাধিক ক্রিসমাস ট্রি।
গির্জার প্রধান পুরোহিত ফাদার অ্যালবার্ট রোজারিও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সোমবার রাত সাড়ে ৮টায় গির্জা প্রাঙ্গণে প্রার্থনা আয়োজন করা হয়েছে; এটি বাংলায় হবে। আমাদের কিছু বিদেশি অতিথি আছেন, তাদের জন্য রাত ১১টায় ইংরেজিতে প্রার্থনা আছে। আর বুধবার সকাল সাড়ে ৮টায় বড়দিনের প্রার্থনা হবে। এরপর রাত পর্যন্ত মেলার আয়োজন থাকবে গির্জা প্রাঙ্গণে।
“আমার বড়দিন উদযাপনে আধ্যাত্মিকভাবে ও বাহ্যিকভাবে প্রস্তুত।”
প্রস্তুত পাঁচ তারকা হোটেলগুলো
দুপুরে গুলশানের ওয়েস্টিন হোটেলে গেলে চোখে পড়ে বড়দিনের সাজসজ্জা। লবিতে সাজানো ছিল ক্রিসমাস ট্রি। একই দৃশ্য দেখা যায় বনানীর হোটেল শেরাটনেও।
এ দুই হোটেলের ক্লাস্টার পাবলিক রিলেশন ম্যানেজার তুহিনুর সুলতানা বলেন, “বড়দিনে ওয়েস্টিনে শিশুদের জন্য থাকছে বিশেষ আয়োজন। শিশুরা সান্তার সঙ্গে বড়দিন উদযাপন ও উপহার নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। থাকছে মনোমুগ্ধকর জাদু এবং পাপেট শোয়ের লাইভ পারফরমেন্স। বুধবার সকাল থেকে কিডস পার্টি শুরু হবে।
“মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকেই ক্রিসমাস ক্যারোল শুরু হচ্ছে এখানে। এর সঙ্গে বুধবার সকালে আয়োজন করা হয়েছে ক্রিসমাস ব্রাঞ্চ ও রাতে বিশেষ ডিনার।”
তিনি বলেন, “শেরাটনেও শিশুদের জন্য থাকছেন সান্তা। সেতো সবার জন্য উপহার নিয়েই আসবেন। এখানে বুধবার সকাল থেকে শুরু হবে ক্রিসমাস গার্ডেন থিমের কিডস পার্টি। আর এদিন জাদু, ক্রিসমাস থিমের ব্যুফে ডিনার ও ব্রাঞ্চ থাকছে।”
বিমানবন্দর সড়কের র্যাডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেনেও নেওয়া হয়েছে বড়দিনের প্রস্তুতি।
এ হোটেলের মার্কেটিং কমিউনিকেশনস এক্সিকিউটিভ শ্বাসতি মধুরিমা হুদা বলেন, মঙ্গলবার রাতে টার্কি থিম ডিনারের আয়োজন থাকছে। বুধবার থাকছে একই থিমের লাঞ্চ ও ডিনার। এদিন শিশুদের জিঙ্গেল ও জয় কিডস পার্টির আয়োজন করা হয়েছে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকেই রমনার হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালে শুরু হয় ক্রিসমাস ক্যারল। সাজানো হয়েছে পুরো হোটেল।
হোটেলের কর্মী ফাতেমা আক্তার বলেন, “মঙ্গলবার রাত থেকেই বড়দিনের আয়োজন শুরু হচ্ছে। বুধবার সকাল থেকে শুরু হবে শিশুদের অনুষ্ঠান। সেখানে থাকছে সান্তা। এছাড়া বিভিন্ন রাইডের আয়োজন করা হয়েছে।
সন্ধ্যায় কারওয়ান বাজার এলাকায় প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে গিয়েও পাওয়া যায় বড়দিনের আমেজ। প্রবেশ পথেই দেখা যায় সান্তাক্লজের প্রতিকৃতি।
হোটেলের ফ্রন্ট ডেস্ক এক্সিকিউটিভ ফারহানা আকমান বলেন, মঙ্গলবার রাত থেকে শুরু হবে বড়দিনের আয়োজন। মঙ্গল ও বুধবার রাতে থাকছে বারবি কিউ ও ডিজে নাইট। বুধবার সকালে থাকবে শিশুদের জন্য আয়োজন। এছাড়া বড়দিনের স্পেশাল লাঞ্চ ও ডিনার থাকছে।
আরো পড়ুন