“আমাদের মধ্যে সম্পর্কের পুনরুজ্জীবন খুবই প্রয়োজন,” বলেন শাহবাজ শরিফ।
Published : 25 Sep 2024, 11:53 PM
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সঙ্গে বৈঠক করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস, যেখানে উভয় নেতাই দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক জোরদার করার বিষয়ে সম্মত হয়েছেন।
জাতিসংঘের ৭৯তম সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে বুধবার নিউ ইয়র্কে তাদের মধ্যে এই বৈঠক হয় বলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, বৈঠকে দক্ষিণ এশিয়ায় আঞ্চলিক সহযোগিতার সর্বোচ্চ পরিসর হিসেবে সার্ক-কে পুনরুজ্জীবিত করার কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে এবার জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে বাংলাদেশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন মুহাম্মদ ইউনূস।
৮ অগাস্ট সরকার গঠনের পর এটিই তার প্রথম আন্তর্জাতিক সফর। এই সফরে এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনসহ একাধিক বিশ্বনেতার সঙ্গে বৈঠক করেছেন তিনি।
এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার শাহবাজ শরিফের সঙ্গে বৈঠক করলেন, যেখানে মূলত পারস্পরিক ও আঞ্চলিক সহযোগিতার নানা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে এসেছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।
গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে নানা চেষ্টা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বর্তমান সরকারের পক্ষ থেকেও এই আগ্রহ প্রকাশ করা হয়েছে। এর মধ্যে দুই দেশের সরকার প্রধানের মধ্যে এই বৈঠক হল।
বৈঠকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীকে ইউনূস বলেন, সার্ককে আবার সচল করতে এর পুনর্যাত্রা শ্রেয় উপায় হতে পারে। এ ক্ষেত্রে তিনি পাকিস্তানের সমর্থন প্রত্যাশা করেন।
দক্ষিণ এশিয়ার আট দেশের আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা-সার্ক; যেটি ১৯৮০ সালে ঢাকায় এক সম্মেলনের মধ্য দিয়ে গড়ে উঠে। ভূরাজনীতি, অর্থনীতি, বৈশ্বিক কূটনীতিসহ আঞ্চলিক সহযোগিতার উন্মুক্ত দ্বার হিসেবে সংস্থাটি এগিয়ে গেলেও এখন কার্যক্রম স্থগিত।
ভারত-পাকিস্তানের সম্পর্কের অবনতি ও আফগানিস্তান পরিস্থিতির কারণেই সার্কের অগ্রযাত্রা থমকে আছে বলে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর পররাষ্ট্রনীতির বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে মুহাম্মদ ইউনূস সার্ককে আবার জাগানোর প্রসঙ্গ সামনে এনেছেন। এ ক্ষেত্রে সব দেশের সহযোগিতাও চেয়েছেন তিনি।
সার্কের পুনরুজ্জীবন ঘটানোর উদ্যোগে তার সমর্থন জানিয়ে শাহবাজ বলেন, এই কাজে সদস্য দেশগুলোর সঙ্গে ধাপে ধাপে কাজ এগিয়ে নিতে হবে।
দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কোন্নয়নের বিষয়ে শাহবাজ বলেন, বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা ঝাঁঝিয়ে নিতে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের সম্পর্কের ‘নতুন পাতা’ উন্মোচন করা উচিত।
“আমাদের মধ্যে সম্পর্কের পুনরুজ্জীবন খুবই প্রয়োজন,” বলেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টার কাছে বাংলাদেশের টেক্সটাইল ও চামড়া শিল্পে বিনিয়োগে পাকিস্তানের আগ্রহের কথা তুলে ধরেন শাহবাজ শরিফ।
এ সময় প্রধান উপদেষ্টা দুই দেশের তরুণদের মধ্যে বিভিন্ন কার্যক্রম বিনিময়ের প্রস্তাব দেন।
পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে আলোচনা এবং যৌথ কমিশন পুনরায় চালুর বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা হয় বলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে বলা হয়েছে।
বৈঠকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক হলেও জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দেওয়া বাংলাদেশের বৃহত্তম প্রতিবেশী ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বসা হয়নি।
তবে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে সোমবার বৈঠক করেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর এটিই দুই দেশের মধ্যে কোনো শীর্ষ বৈঠক।
ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে দিল্লির সম্পর্ক কেমন হবে, তা নিয়ে নানা ধরনের আলোচনা আছে।
এর মধ্যে ‘ন্যায্যতা এবং সমতার’ ভিত্তিতে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সুসম্পর্ক দরকার বলে মন্তব্য করেন মুহাম্মদ ইউনূস।
নিউ ইয়র্কে তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে বৈঠকের পর ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জয়শঙ্কর বলেন, প্রতিবেশী হিসেবে বাংলাদেশের সঙ্গে ‘স্থিতিশীল সম্পর্ক অব্যাহত’ রাখতে ভারত ‘আগ্রহী’।
দুই দেশের সম্পর্কের প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে ‘প্রতিবেশীরা এক অপরের ওপর নির্ভরশীল’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলি দেশটির ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়’, সেসব নিয়ে কোনো মন্তব্য করা ‘সমীচীন নয়’।