সারা দেশে বোমা হামলার ঘটনায় ঝিনাইদহের এক মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন তুহিন।
Published : 23 Jun 2023, 02:48 PM
সারা দেশে একযোগে বোমা হামলার ঘটনায় যাবজ্জীবন সাজা মাথায় নিয়ে পালিয়ে বেড়ানো এক জেএমবি সদস্য র্যাবের হাতে ধরা পড়েছেন, এই সময়ে ভিডিও এডিটর হিসেবে তিনি কাজ করেছেন বেসরকারি টেলিভিশন স্টেশনেও।
ঢাকার তেজগাঁও এলাকার একটি বাসা থেকে বৃহস্পতিবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করার কথা জানিয়েছেন র্যাব-৩ অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দীন আহমেদ।
গ্রেপ্তার তুহিন রেজা (৪২) দেড়যুগ আগে ২০০৫ সালে সারা দেশে বোমা হামলার ঘটনায় ঝিনাইদহে দায়ের করা মামলার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া আসামি। মামলার পর থেকেই তিনি পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন।
র্যাব বলছে, একটি বেসরকারি টেলিভিশন স্টেশনে ভিডিও এডিটিংয়ের কাজ করছিলেন তুহিন। হামলার সময় পর্যন্ত জেএমবি সদস্য হিসেবে কাজ করলেও ২০০৫ সালের পর থেকে সংগঠনটির সঙ্গে তার জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে নিশ্চিত হতে তার ফোন আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা প্রয়োজন।
তুহিনকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে জানাতে শুক্রবার দুপুরে কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে আসেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দীন।
নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ-জেএমবি ২০০৫ সালের ১৭ অগাস্ট সারা দেশে একযোগে বোমা হামলা চালায়। ৬৩ জেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার পাশাপাশি ঢাকার ৩৪ স্থানসহ মোট সাড়ে ৪০০ জায়গায় প্রায় ৫০০ বোমার বিস্ফোরণ ঘটায় জঙ্গিরা।
আরিফ মহিউদ্দীন বলেন, ঝিনাইদহের ডিসি অফিস, জজ কোর্ট ও পায়রা বন্দরসহ কয়েকটি জায়গায় ওই সময়ে বোমা হামলা হয়। ওই ঘটনায় ঝিনাইদহ সদর থানায় অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে একটি মামলা হয়। পরে তদন্তে জেএমবির সংশ্লিষ্টতার তথ্য মেলে।
ঝিনাইদহে হামলার ঘটনায় ২১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়ার পর বিচার শেষে সবাইকে মৃত্যুদণ্ড দেয় সেখানকার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল। পরে উচ্চ আদালতে আসামিদের করা আপিলে ১৪ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং সাতজনকে খালাস দেওয়া হয়।
আরিফ মহিউদ্দীন বলেন, যাবজ্জীবন সাজার আদেশ পাওয়া ১৪ জনের মধ্যে এর আগে ১২ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন। পলাতক দুজনের মধ্যে তুহিন ছিলেন ১০ নম্বর আসামি। সাত নম্বর আসামি মোহন এখনও পলাতক।
তুহিনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, “ঝিনাইদহ শহরে ডিসি অফিস, জেলা জজ আদালত চত্বর, বাস টার্মিনাল ও কলেজ মোড়সহ বেশ কয়েকটি স্থানে একযোগে বোমা হামলা ও নিষিদ্ধ লিফলেট ছড়ানোর কার্যক্রমে তুহিন জড়িত ছিলেন।
“২০০৪ সালে জেএমবির ঝিনাইদহ সদর শাখায় সদস্য হিসেবে যোগদান করেন তুহিন। ওই শাখার লিফলেট তৈরি, প্রচার, নাশকতমূলক খবরাখবর রাখা এবং ভিডিও এডিটিংয়ের মাধ্যমে বিভ্রান্তিমূলক তথ্যচিত্র দিয়ে তরুণদের পথভ্রষ্ট করতেন।”
বোমা হামলার পর তুহিন ঝিনাইদহ সদরে কিছুদিন গা ঢাকা দিয়ে ছিলেন জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, “মামলার পর পালিয়ে তিনি ঢাকায় চলে আসেন। প্রথমে যাত্রাবাড়ী, পরে খিলগাঁও, উত্তরা ও মহাখালীসহ বিভিন্ন জায়গায় স্থান পরিবর্তন করে বসবাস শুরু করেন। ২০২১ সাল থেকে তিনি তেজগাঁও এলাকায় একটি বাসা ভাড়া নিয়ে থাকছিলেন এবং সেখান থেকেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।”
এক প্রশ্নের জবাবে র্যাব-৩ অধিনায়ক আরিফ মহিউদ্দীন বলেন, প্রথমে তুহিন রেজা মহাখালীর একটি দোকান দিয়ে ভিডিও এডিটিং এর কাজ করতেন। পরে একটি বেসরকারি টেলিভিশনে ভিডিও এডিটর হিসেবে কাজ করছিলেন।
ওই টেলিভিশনের নাম প্রকাশ না করে তিনি বলেন, “এ পর্যন্ত দুটি প্রতিষ্ঠানে ভিডিও এডিটরের কাজ করেছেন। নিরাপদ মনে করায় এই পেশায় থেকে আত্মগোপনে ছিলেন।”
আরিফ মহিউদ্দীন বলেন, “২০০৫ সালের পর থেকে জেএমবি কার্যক্রমে তুহিনের জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে তুহিনের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে।”