বন্ধ হয়ে যাচ্ছে কাউন্টার, যেখানে সেখানে তোলা হয় যাত্রী। লোকসানের কারণে সরে গেছে বেসরকারি কোম্পানি, বিআরটিসির বাস চলছে দৈনিক চুক্তিতে।
Published : 28 Jan 2024, 12:07 AM
রাজধানীর বিশৃঙ্খল বাস চলাচলের চিত্র পাল্টে দিতে ঢাক ঢোল পিটিয়ে চালু হওয়া 'ঢাকা নগর পরিবহন' এবং বেসরকারি লোকাল বাসের মধ্যে এখন আর কোনো পার্থক্য রইল না।
নির্ধারিত স্থান ছাড়া যেখানে সেখানে যাত্রী ওঠানামা, ভাড়ার বিশৃঙ্খলা থেকে শুরু করে যে সমস্যাগুলোর অবসান হওয়ার কথা ছিল, সেগুলোর কিছুই পাল্টাতে পারেনি এ উদ্যোগ।
এখন আর স্টপেজ নেই, কাউন্টার তুলে দিয়ে বিআরটিসি বাস চালাচ্ছে দৈনিক জমার ভিত্তিতে; যে পদ্ধতিকে ঢাকায় বাস চলাচলে দুর্ভোগের অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল।
যতগুলো বাস চালু হয়েছিল, দুই বছর যেতে না যেতেই একটি রুটে বেসরকারি কোম্পানির বাস বন্ধ হয়েছে পুরোপুরি। সরকারি পরিবহন সংস্থা বিআরটিসির বাস চলছে লোকসানে। আরও কয়েকটি রুটে বাস চালুর ঘোষণা ছিল, সেটাও হয়নি।
নগর পরিবহন যখন উদাহরণ তৈরি করতে পারেনি, তখন যাত্রীরা এ উদ্যোগ আর বেসরকারি বাসের সেবার মধ্যে কোনো পার্থক্য করতে পারছেন না। ফলে গণপরিবহন ঢাকায় সেই হতাশার নাম হয়েই আছে।
ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ, ডিটিসি এবং বাস রুট র্যাশনালাইজেশন কমিটির সভাপতি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস এর দায় দিয়েছেন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ততা এবং বিরোধীদের আন্দোলনকে। বলেছেন, শিগগির এসব সমস্যা নিয়ে বসে সমাধান করবেন।
রাজধানীর গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরানোর আশা নিয়ে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে কেরানীগঞ্জের ঘাটারচর থেকে কাচপুর পর্যন্ত চালু হয় নগর পরিবহন। প্রথম কয়দিন নির্ধারিত জায়গায় যাত্রী ওঠানামা, বিআরটিএ নির্ধারিত হারে কিলোমিটারের হিসাবে ভাড়া আদায়ে যাত্রীরা সন্তুষ্টই ছিলেন।
এরপর আরও দুটি রুট চালু হয়। গত বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি বাস রুট র্যাশনালাইজেশন কমিটির সভায় জানানো হয়েছিল, পাঁচ মাসের মধ্যে আরও দুটি রুটে নামবে নতুন বাস। তবে প্রায় এক বছর হতে চললেও নতুন দুটি রুট চালু হয়নি।
কথা ছিল, এসব রুট চালু হলে আগে থেকে যে বাস চলে সেগুলো বন্ধ হয়ে যাবে, যা আর হয়নি। এ অবস্থায় বেসরকারি কোম্পানির বাসগুলো শৃঙ্খলায় আসেনি, উল্টো নগর পরিবহনের বাসগুলো বেসরকারি কোম্পানির বাসকে অনুসরণ করতে শুরু করে। ফলে কার্যত এই উদ্যোগ কোনো প্রভাবই ফেলতে পারেনি।
অথচ ঘোষণা ছিল নগর পরিবহন রাজধানীর বাস চলাচলে শৃঙ্খলা আনবে, উন্নত বিশ্বের মত মানসম্মত পরিবহন ব্যবস্থা চালু হবে, নগরবাসীকে বাড়তি ভাড়ার বিড়ম্বনা থেকে মুক্তি দেবে।
বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বাস
প্রথম চালু হওয়া ২১ নম্বর রুটের (কেরানীগঞ্জের ঘাটারচর থেকে কাচপুর) ৫০টি বাসের মধ্যে বিআরটিসির ৩০টি, ট্রান্স সিলভার ২০টি বাস পরিচালনার কথা ছিল। কিন্তু চলত বিআরটিসির ১৮টি এবং ট্রান্স সিলভার ১৫টি। গত বছরের এপ্রিল ও মে মাসে দুই ধাপে ট্রান্স সিলভা তাদের সব বাস বন্ধ দেয়।
গত বছরের ৯ মে ঢাকার দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেছিলেন, ট্রান্স সিলভার রুট পারমিট বাতিল করা হয়েছে।
তবে ট্রান্স সিলভা বিডির চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম খোকনের দাবি, ঢাকা নগর পরিবহনে গাড়ি চালিয়ে এক বছর চার মাসে তাদের দেড় কোটি টাকার বেশি লোকসান হয়েছে।
“গাড়ির তেল, চালকের বেতন, অপারেটিং খরচ, অপারেটিং স্টাফদের খরচ, নিয়মিত লাগে। নগর পরিবহনে ভাড়া হিসেবে যা টাকা আদায় হত, তা দিয়ে এসব খরচ মেটানোর টাকাও ওঠেনি। গাড়িগুলোর রুট পারমিট বাতিল করে দেওয়ায় এগুলো এখন কোনো রুটে চলতে পারবে না। এই অর্থ লোকসানের সঙ্গে যোগ করলে সংখ্যাটি আরও বাড়বে।”
তিনি বলেন, “ওই রুট পরিচালনা করা হচ্ছিল বিআরটিসির নেতৃত্বে। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনায় ঘাটতি ছিল, এতে লোকসান হচ্ছিল মালিকদের। তাই বাস বন্ধ করে দিয়েছি।”
এই রুটের সমস্যাগুলো নিয়ে বাস রুট র্যাশনালাইজেশন কমিটিতে অনেকবার চিঠি দেওয়া হয়েছিল মালিকদের পক্ষ থেকে। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ ট্রান্স সিলভার চেয়ারম্যানের।
তিনি বলেন, “কমিটি আমাদের কোনো পরামর্শ শোনেনি, ওইখানে বাস অপারেশন হচ্ছিল বিআরটিসির নেতৃত্বে। বিআরটিসির ইতিহাস বলে তারা কখনও কোনো রুট ভালোভাবে পরিচালনা করতে পারে নাই। আমাদেরকে নামিয়ে দিয়ে নিজেদের মত কাজ করতে দেওয়া হল না। আমরা আবার চাঁদাবাজদের কাছে জিম্মি হয়ে গেলাম।”
২০২২ সালের ১৩ অক্টোবর চালু হওয়া ২২ নম্বর রুটেও (ঘাটারচর থেকে ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার পর্যন্ত) একই চিত্র। পথে হানিফ পরিবহনের ৫০টি বাস চালানোর কথা থাকলেও তারা ৩০টি বাস দিয়েছিল। এর মধ্যে গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে ১৫টি বাস বন্ধ করে সেগুলো আমিনবাজারে হানিফের গ্যারেজে নিয়ে রাখা হয়। অথচ ঘোষণা ছিল, বাসের সংখ্যা বেড়ে হবে ১০০টি।
গত মঙ্গলবারও ওই রুটে গিয়ে হানিফের কোনো বাস দেখা যায়নি। ঘাটারচর গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে কোনো বাস নেই। কাউন্টারে কর্মীরা নেই।
সেখানে থাকা বিআরটিসির কর্মীরা জানালেন, নির্বাচনের আগে থেকেই হানিফের বাসগুলো বন্ধ হয়ে গেছে।
হানিফ পরিবহন কফিল উদ্দিন গ্রুপের একটি উদ্যোগ। কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সিরাজুল ইসলাম রিকু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তাদের ‘পোষাচ্ছে না।’
“এই রুটে ফার্মগেটের পর আর যাত্রী পাওয়া যায় না। গুলিস্তান হয়ে যেতে পারলে কিছু যাত্রী পাওয়া যেত। আমরা সে প্রস্তাব দিয়েছিলাম। কিন্তু তা কার্যকর হয়নি। এজন্য আমরা লোকসানে আছি।”
রুটটি ঠিক করা হয়েছে ঘাটারচর থেকে বসিলা ও মোহাম্মদপুর বাস স্ট্যান্ড হয়ে আসাদগেট, ফার্মগেট হয়ে শাহবাগ, কাকরাইল ও ফকিরাপুল দিয়ে মতিঝিল, টিকাটুলি, কাজলা, কোনাপাড়া হয়ে স্টাফ কোয়ার্টার। এর মধ্যে টিকাটুলি থেকে কাজলা পর্যন্ত ফ্লাইওভারের ওপর দিয়ে বাস চলাচল করার কথা।
বাস না থাকলেও সেগুলোর চলাচল বন্ধ করার বিষয়টি স্বীকার করতে চান না কফিল উদ্দিন গ্রুপের কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম রিকু। তিনি বলেন, “মেরামতের জন্য গ্যারেজে আনা হয়েছে। গাড়িগুলোর কাজ করতে হবে। কাজ শেষে আবার ৩০টি বাস চালানো হবে।”
এক সঙ্গে ৩০টি বাসই বিকল হয়ে যাওয়ার কোনো ব্যাখ্যা অবশ্য এই কর্মকর্তার কাছে পাওয়া যায়নি।
ডেকে যাত্রী তোলে বিআরটিসি
২২ নম্বর রুটের সঙ্গেই চালু হয় ২৬ নম্বর রুট যেটি কেরানীগঞ্জের ঘাটারচর থেকে মোহাম্মদপুর গিয়ে, আসাদ গেট-মিরপুর রোড হয়ে নিউ মার্কেট আজিমপুর, পলাশী, চাঁনখারপুল, পোস্তগোলা হয়ে পাগলা (কদমতলী থানা) পর্যন্ত বিস্তৃত।
চাঁনখারপুল থেকে পোস্তগোলা পর্যন্ত ফ্লাইওভারের ওপর দিয়ে বাস চলাচল করবে।
এই রুটে বিআরটিসির ৫০টি বাস চালানোর কথা। তবে সড়কে ওই পরিমাণ বাস নেই এমন অভিযোগ রয়েছে।
আবার কাউন্টার তুলে দিয়ে বিআরটিসির বাসগুলো এখন চলছে দৈনিক ‘জমা’ ভিত্তিতে। অর্থাৎ একটি নির্ধারিত অঙ্ক দিতে হবে, এমন চুক্তিতে সেগুলো ভাড়া দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার ঘাটারচর থেকে সায়েন্স ল্যাবরেটরি পর্যন্ত ঘুরে দেখা গেছে, এসব এলাকায় কোনো কাউন্টার নেই।
মোহাম্মদপুর থেকে সায়েন্স ল্যাবটেরি পর্যন্ত বিআরটিসির একটি দ্বিতল বাস অনুসরণ করে দেখা গেছে, মোহাম্মদপুর থেকে ছাড়ার পর মোহাম্মদপুর থানা, ধানমণ্ডি ২৭, শঙ্কর, আবাহনী মাঠ, ধানমণ্ডি ১৫ নম্বর বাসস্ট্যান্ড, আনাম-র্যাংগস প্লাজা, জিগাতলা, রাইফেলস স্কয়ার, স্টার কাবাব, সিটি কলেজের সামনে যাত্রী তোলার জন্য বাসটি থেমেছে। এসব স্থান থেকে যাত্রী তুলেছে, নামিয়েছে।
ওই বাসের চালকের সহকারীর ভাষ্য, নির্বাচনের আগে থেকেই দৈনিক চার হাজার জমায় গাড়ি চালাচ্ছেন তারা। তবে তিনি তার নাম বলেননি।
বিআরটিসির একটি ডিপোর একজন কর্মকর্তার সঙ্গে গত সপ্তাহে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে কথা হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা বলেন, বেসরকারি পরিবহনের বাসগুলোর কারণে বিআরটিসি যাত্রী পাচ্ছে না। ফলে লোকসানে চালাতে হচ্ছে বাসগুলো।
“একদিন গড়ে গাড়িগুলোর জমা পড়েছে ১৬শ টাকা। অথচ দৈনিক একটি গাড়ির তেল খরচ হয় ২৮শ টাকার। বেসরকারি গাড়িগুলো যেখানে সেখানে যাত্রী তুলে নেয়, ফলে বিআরটিসির কাউন্টারে যাত্রী যায় না। কাউন্টার তুলে দেওয়ার পর আয় কিছুটা বেড়েছে। তবে কাউন্টারগুলো আবার দেওয়া হবে।”
বাস রুট ফ্রাঞ্চাইজির পরীক্ষামূলক রুটে রুট পারমিটবিহীন এবং অন্য রুটের বাস পর্যায়ক্রমে তুলে দেওয়ার কথা ছিল। নগর পরিবহন চলাচলের শুরুতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে বাসও জব্দ করা হয়েছিল। তবে এখনও ওই দুটি রুটে বেসরকারি পরিবহনের বাস চলছে।
বিষয়টি নিয়ে গত বছরের ৯ নভেম্বর ডিটিসিএর নির্বাহী পরিচালকের কাছে একটি চিঠি পাঠায় বিআরটিসি।
সংস্থার চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলামের পাঠানো ওই চিঠিতে বলা হয়, ১১ অক্টোবর থেকে ২১ নম্বর রুটে (ঘাটারচর থেকে কাচপুর) বিআরটিসির বাসের পাশাপাশি রমজান পরিবহনের অন্তত ৬০টি বাস চলাচল করছে। এতে বিআরটিসির রাজস্ব আহরণ ব্যাহত হচ্ছে।
ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে ওইসব বাস বন্ধের অনুরোধ করেন তিনি।
যাত্রী সেবার মানেও ধপাস
মোহাম্মদপুরে নগর পরিবহনের যাত্রী ছাউনিতে বাসের অপেক্ষায় থাকা তৌসিফ হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নগর পরিবহনের বাসের সেবা ভালো ছিল, মানুষের আস্থা অর্জন করছিল। কিন্তু এখন সে অবস্থা আর নাই।
“এখন বাসগুলো যে কোনো জায়গায় থামায়। রাস্তায় দাঁড়িয়ে যে কেউ হাত তুললেই দাঁড়িয়ে যায়। আগে এটা ছিল না, বাসগুলো নির্দিষ্ট কাউন্টারে থামাইত।”
জিগাতলায় বাসের অপেক্ষায় থাকা ঋত্বিক আচার্য বলেন, “নগর পরিবহনের বাসগুলো কাউন্টার থেকে ছাড়ে, ভাড়া নিয়ে টিকেট দেয় এজন্য অন্য বাসের চেয়ে ভালো ছিল। কিন্তু এখন বাস ঠিকমতো পাওয়া যায় না। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়।
“বাস কম। মতিঝিল যেতে অনেকক্ষণ ধরে বসে আছি। যদি সময়মতো চলাচল করত তাহলে মানুষের অনেক উপকার হত, পরিবহনে বিশৃঙ্খলা কমত।”
শিক্ষার্থী মালিহা নুর বলেন, “নগর পরিবহনের বাসগুলোয় ঝামেলা কম, জঞ্জাল কম, ভিড় কম। কিন্তু এখন তো বাসই তেমন নাই।”
আশা দেখিয়েই যাচ্ছে কর্তৃপক্ষ
নগর পরিবহনের এই দশার পরেও ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ, ডিটিসি বলছে আগের কথাই।
সংস্থাটির এর নির্বাহী পরিচালক এবং বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটির সদস্য সচিব সাবিহা পারভিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আগামী কয়েক মাসের মধ্যে নগর পরিবহনে পরিবর্তন আসবে। নতুন সরকার হয়েছে, হয়ত নতুন অঙ্গীকারে অগ্রসর হবে। বিষয়টি নিয়ে মেয়র মহোদয়ের অঙ্গীকার আছে এবং সরকারেরও আছে।”
নগর পরিবহন যদি বেসরকারি লোকাল বাসের মতই চলবে, তাহলে এত বছরের চেষ্টা কেন- এই প্রশ্নে তিনি বলেন, “নগর পরিবহনের নিয়ম হলো ভদ্র, কাউন্টার থেকে যাত্রী ওঠাতে হবে। কাউন্টার বন্ধ করে যেখানে সেখানে যাত্রী ওঠা-নামানো করা হলে বিআরসিটি রুল ব্রেক করেছে। আমাদের মনিটরিং টিম এখন যাচ্ছে না। আমি লোক পাঠাব, নিয়ম ভাঙলে ব্যবস্থা নেব।”
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র এবং বাস রুট র্যাশনালাইজেশন কমিটির সভাপতি শেখ ফজলে নূর তাপস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা শিগগির বৈঠকে বসব যেন যেসব অনিয়ম হচ্ছে সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায়।”
নগর পরিবহনের রুটে চলাচলকারী রুট পারমিটবিহীন বাসের বিরুদ্ধে প্রায়ই অভিযান চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, “অনেকগুলো বাস জব্দ করা হয়েছে, বেসরকারি পরিবহনকে জরিমানা করেছি। এটা আমাদের নিয়মিত কার্যক্রম।”
নতুন তিন রুট কবে চালু?
২০২৩ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নগর ভবনের বাস রুট র্যাশনালাইজেশনের সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে আরও দুটি রুটে ঢাকা নগর পরিবহন চালুর ঘোষণা দেওয়া হয়।
সেদিন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, “মেট্রোরেলের যাত্রীদের সার্ভিস দেওয়ার জন্য আমরা ২৪ ও ২৫ নম্বর যাত্রাপথ চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যাত্রীরা যেন বাস থেকে নেমে মেট্রোরেলে উঠতে এবং মেট্রোরেল থেকে নেমে বাস ব্যবহার করতে পারেন সেটা বিবেচনা করে এই দুই রুট। দুটি রুটে প্রাথমিকভাবে ৫০টি বাস চলবে।”
২৪ নম্বর রুটটি ঠিক করা হয়েছে ঘাটারচর থেকে মোহাম্মদপুর বাস স্ট্যান্ড ও জাপান গার্ডেন সিটি হয়ে শ্যামলী-শিশুমেলা-আগারগাঁও-শেওড়াপাড়া-মিরপুর-১০ হয়ে পল্লবী-কালশী- খিলক্ষেত- বিমানবন্দর হয়ে আবদুল্লাহপুর।
২৫ নম্বর রুটটি ঠিক করা হয়েছে ঘাটারচর-মোহাম্মদপুর-আসাদগেট-খামারবাড়ী-বিজয় সরণি-জাহাঙ্গীর গেইট-মহাখালী-কাকলী-খিলক্ষেত-আবদুল্লাহপুর।
ঘাটারচর থেকে মোহাম্মদপুর-জাপান গার্ডেন সিটি-শ্যামলী থেকে আসাদগেইট হয়ে সায়েন্সল্যাব-শাহবাগ-গুলিস্তান-দৈনিক বাংলা হয়ে কমলাপুর-ধলপুর-যাত্রাবাড়ী-শনির আখড়া হয়ে চিটাগাং রোড পর্যন্ত ২৩ নম্বর রুট চালুর ঘোষণা ছিল আরও আগে। সেগুলো কবে চালু হবে সে বিষয়ে এখন আর কোনো ঘোষণা নেই।
এ বিষয়ে এক প্রশ্নে মেয়র তাপস বলেন, “গত বছরের (২০২৩) অক্টোবর মাস থেকে নির্বাচন পর্যন্ত বিরোধীদলের অবরোধ থাকায় কমিটির কাজ এগুনো যায়নি। তবে শিগগিরই শুরু হবে।
“আমরা শিগগিরই একটা সভা করব যাত্রাপথগুলো যেন চালু করা যায়। এসব রুটে বাস চালাতে আগ্রহী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে আবেদন চেয়ে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে আবেদন করতে হবে।”
যে স্বপ্ন দেখানো হয়েছিল
মানহীন বাসে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় নিয়ে ত্যক্ত বিরক্ত নগরবাসীর সড়কে চলাচলের অভিজ্ঞতা পাল্টে দেওয়ার ঘোষণা ছিল বাস রুট র্যাশনালাইজেশন নামে উদ্যোগের।
রাজধানীজুড়ে বিভিন্ন রুটে পরিবহন সংস্থাগুলোর বাসের মধ্যে ‘অসুস্থ প্রতিযোগিতা’ বন্ধ করতে এবং পুরনো বাস তুলে নিতে এমন পদক্ষেপের চিন্তাভাবনা শুরু হয় বহু বছর আগে।
২০১৬ সালে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক ফ্রাঞ্চাইজের আওতায় বাস পরিচালনার উদ্যোগ নেন। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে এ কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য বাস রুট র্যাশনালাইজেশন কমিটি গঠন করা হয়।
এ কমিটির কাছে রাজধানীতে নয়টি ক্লাস্টারের মাধ্যমে ২২টি কোম্পানির ৪২টি রুটে বাস রুট র্যাশনালাইজেশনের প্রস্তাব দেন বিশেষজ্ঞরা।
বর্তমানে কমিটির সভাপতি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র, বিআরটিএ, বিআরটিসি, রাজউক, ঢাকা মহানগর পুলিশ, সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি, ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি, শ্রমিক ফেডারেশনের প্রতিনিধিরা কমিটিতে আছেন।
আরো পড়ুন:
পুরনো বাসের ফাঁদে পথ হারাবে ঢাকা নগর পরিবহন? আলাদাই থাকতে চান বাস মালিকরা
শুরু হচ্ছে নগর পরিবহনে ‘শৃঙ্খলা ফেরানোর’ পরীক্ষা