সেখান থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কয়েকজন সমন্বয়ক বঙ্গভবনে গিয়ে রাষ্ট্রপতিকে স্মারকলিপি দেবেন বলে আন্দোলনকারীদের তরফে জানানো হয়েছে।
Published : 14 Jul 2024, 02:48 PM
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের এক দফা দাবিতে রাষ্ট্রপতিকে স্মারকলিপি দিতে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে গণপদযাত্রা নিয়ে বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেইটে পৌঁছেছেন আন্দোলনকারীরা।
সেখান থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কয়েকজন সমন্বয়ক বঙ্গভবনে গিয়ে রাষ্ট্রপতিকে স্মারকলিপি দেবেন বলে আন্দোলনকারীদের তরফে জানানো হয়েছে।
রোববার বেলা ১২টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে 'বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন' ব্যানারে এই পদযাত্রা শুরু হয়।
শাহবাগ, মৎসভবন হয়ে সচিবালয়ের সামনে দিয়ে বঙ্গভবনে যাওয়ার চেষ্টা করেন আন্দোলনকারীরা। গণপদযাত্রাটি শিক্ষা ভবনের সামনে পোঁছালে পুলিশ প্রথম দফায় তাদের বাধা দেয়।
সে সময় পুলিশের বাধা পেরিয়ে পদযাত্রাটি গুলিস্তান জিরো পয়েন্টে পৌঁছে যায়। কিন্তু সেখানেও পুলিশের ব্যারিকেডের সামনে পরে পদযাত্রাটি।
এ সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও চাকরি প্রত্যাশীরা পুলিশকে উদ্দেশ্য করে ‘ভুয়া’, ‘ভুয়া’ স্লোগান দিতে থাকেন এবং তাদের মধ্যে উত্তেজনাও দেখা যায়।
পরে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে বঙ্গভবন অভিমুখে এগিয়ে যায় পদযাত্রা। আন্দোলনকারীরা গুলিস্তান পেরিয়ে বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেইট ও স্টেডিয়াম এলাকায় অবস্থান নেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজধানীর সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার্থীরাও এ পদযাত্রায় অংশ নিচ্ছেন।
কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীরা 'দফা এক দাবি এক, কোটা নট কাম ব্যাক', 'কোটা না মেধা, মেধা মেধা', ' সারাদেশে হামলা কেন, প্রশাসননজবাব চাই', 'হামলা করে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না', ' মামলা দিয়ে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না', 'কোটা প্রথা নিপাত যাক, মেধাবীরা মুক্তি পাক' ইত্যাদি স্লোগান দিচ্ছেন।
এদিকে ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মীকেও সকালে দোয়েল চত্বর ও কার্জন হল এলাকায় অবস্থান নিতে দেখা যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের নেতাকর্মীরা ছিলেন সেখানে।
এর আগে শনিবার বিকেলে 'বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন' এর সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল, রোববার দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও গণপদযাত্রা করে নিজ নিজ জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি দেবেন।
কোটা সংস্কার: বঙ্গভবন অভিমুখে গণপদযাত্রায় আন্দোলনকারীরা
সারাদেশে সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে ছাত্র ধর্মঘট অব্যাহত রাখারও ঘোষণা দেওয়া হয় সেখানে।
হাই কোর্টে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহালের রায়ের পর নতুন করে এই আন্দোলন শুরু হয়। গত ১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে শুরু হওয়া এই বিক্ষোভ ক্রমে ছড়িয়ে পড়ে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে।
শুরুতে মানববন্ধন, সমাবেশের মত কর্মসূচি থাকেলেও গত সপ্তাহে সারা দেশে তাদের অবরোধ কর্মসূচি শুরু হয়, যার নাম তারা দিয়েছেন ‘বাংলা ব্লকেড’। গত বুধবার দিনভর অবরোধে নাকাল হতে হয় সাধারণ মানুষকে।
কোটার বিরোধিতায় চার দফা দাবিতে শুরু হওয়া এ আন্দোলন এখন এক দফায় এসে ঠেকেছে।
আন্দোলনকারীদের এক দফা দাবি হল- সকল গ্রেডে সকল প্রকার ‘অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক’ কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লিখিত অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য কোটাকে ন্যূনতম পর্যায়ে এনে সংসদে আইন পাস করে কোটা পদ্ধতিকে সংশোধন করতে হবে৷
র মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ কোটা নিয়ে হাই কোর্টের রায়ের ওপর স্থিতাবস্থা জারির আদেশ দিলেও আন্দোলনকারীরা কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন।
হাই কোর্টের যে রায়ের পর এই আন্দোলন শুরু হয়েছিল, সেই রায়ের বাস্তবায়নের অংশও ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। ২০১৮ সালের আগে থাকা সব কোটা ফিরিয়ে এনে আদালত বলেছে, সরকার প্রয়োজন মনে করলে কোটার হার বা অনুপাত পরিবর্তন করতে পারে।
হাই কোর্টের এই রায়ের ফলে কোটা সংস্কারের পথ খুললেও আন্দোলনকারীরা তাদের অবস্থানে অটল। তারা বলছেন, কেবল অনগ্রসরদের জন্য ৫ শতাংশ পর্যন্ত কোটা মানতে তারা রাজি আছেন, অন্য কোনো কোটা নয়। আর এ বিষয়টি আইন করে বাস্তাবয়নের বিষয়ে সরকারের প্রতিশ্রুতি চাইছেন তারা।