জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনায় ‘প্রধান সমন্বয়ক’ ছিলেন মেহেদী: সিটিটিসি

পুলিশ বলছে, “মেহেদী জঙ্গিদের ছিনিয়ে নেওয়ার পর তাদের পরবর্তী দিনগুলোতে চলাচল ও খরচ মেটানোর জন্য বেশকিছু টাকাও দেন; টাকাগুলো কোথা থেকে এসেছে সে তথ্যও পুলিশ জানতে পেরেছে।”

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Nov 2022, 10:01 AM
Updated : 24 Nov 2022, 10:01 AM

আদালত চত্বর থেকে জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার দিন ‘প্রধান সমন্বয়কের’ দায়িত্বে ছিলেন ওই ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া ‘আনসার আল ইসলামের সদস্য’ মেহেদী হাসান অমি ওরফে রাফি; জঙ্গিদের পালানোর পর তাদের খরচের জন্যও তিনি ‘টাকা দিয়েছিলেন’ বলে ভাষ্য পুলিশের।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামিকে ছিনতাইয়ের তিনদিন পর মেহেদীকে যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই ঘটনার সঙ্গে তার ‘জড়িত থাকার’ তথ্য বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) প্রধান মো. আসাদুজ্জামান।

তিনি বলেন, “একটি মামলায় জামিনে থেকে মেহেদী আনসার আল ইসলামের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে আসছিলেন। পরবর্তীতে আদালত চত্বর থেকে চার জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করেন। আর ঘটনার দিন প্রধান সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করেন।”

গত ২০ নভেম্বর ঢাকার আদালতপাড়া থেকে দুই জঙ্গি মইনুল হাসান শামীম ওরফে সামির ওরফে ইমরান এবং আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব ওরফে সাজিদ ওরফে শাহাবকে ছিনিয়ে নেওয়ার দিন আদালতেই ছিলেন জামিনে থাকা মেহেদী।

মইনুল ও সোহেল প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপন হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত। তবে সেদিন তাদের আদালতে হাজির করা হয়েছিল মোহাম্মদপুর থানায় করা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের এক মামলার শুনানিতে। জামিনে থাকা মেহেদীও সেদিন হাজিরা দিতে আদালত প্রাঙ্গণে গিয়েছিলেন।

দুই জঙ্গিকে ছিনতাইয়ের ঘটনায় সেদিন রাতে ঢাকার কোতোয়ালি থানায় ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে পুলিশ। সেখানে মেহেদীকে ১৪ নম্বর আসামি করা হয়।

সিটিটিসির সংবাদ সম্মেলনে আসাদুজ্জামান বলেন, “তারা চার জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল। তবে প্রধান লক্ষ্য ছিল আরাফাত রহমান (অভিজিত হত্যায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি)। কিন্তু তাকে নিতে পারেনি।

“মেহেদী জঙ্গিদের ছিনিয়ে নেওয়ার পর তাদের পরবর্তী দিনগুলোতে চলাচল ও খরচ মেটানোর জন্য বেশকিছু টাকাও দেয়। এই টাকাগুলো কোথা থেকে এসেছে সে তথ্যও পুলিশ জানতে পেরেছে।”

পুলিশ বলছে, মেহেদী নিষিদ্ধ সংগঠন আনসার আল ইসলামের শীর্ষ নেতা জিয়ার সঙ্গে সমন্বয় করে ‘আসকারি’ বিভাগের সদস্য নিয়োগ করতেন। তার বাড়ি সিলেটে।

“মেহেদী ২০১৩ সালে আনসার আল ইসলামে যোগ দেন এবং তার আগে হিযবুত তাহরীর সদস্য ছিলেন। মোহাম্মদপুর থানার সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় ২০১৭ সাল থেকে তিনি জামিনে ছিলেন এবং নিয়মিত হাজিরা দিয়ে আসছিলেন।”

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মনিটরিংয়ের ঘাটতি ছিল কিনা- এমন প্রশ্নে সিটিটিসি প্রধান আসাদুজ্জামান সংবাদ সংম্মেলনে বলেন, “মনিটরিং করা হয় কিন্তু ঘরে বসেও এমন সব প্রযুক্তি ব্যবহার করে যোগাযোগ রাখে....। দুইজন চিকিৎসককে আমরা ধরেছি। তারাও তো ঘরে বসেই জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িত ছিল। সুতরাং মনিটরিং করা হয়। তবে সবাইকে একসঙ্গে মনিটরিং করা যায় না সব সময়।”

এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশের বিশেষ ইউনিটের এই কর্মকর্তা বলেন, “জঙ্গিরা অন্য অপরাধীদের চেয়ে ভিন্ন…। জঙ্গিরা বিশেষ করে আনসার আল ইসলামের সদস্যরা 'কাটআউট' সিস্টেমে থাকে। তাই তাদেরকে ধরতে অনেক বেগ পেতে হয়।”

পুলিশ জানিয়েছে, মেহেদীর বিরুদ্ধে ২০১৬ সালে ‘রাষ্ট্র ও সরকার বিরোধী’ কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগে মোহাম্মদপুর, সূত্রাপুর, বাড্ডায় সন্ত্রাসী বিরোধী আইনে তিনটি মামলা রয়েছে। এছাড়া ২০১০ ও ২০১২ সালে সিলেটে সন্ত্রাস বিরোধী আইনে দুটি মামলা রয়েছে।

জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনায় বৃহস্পতিবার তাকে আদালতে নেওয়া হলে ঢাকা মহানগর হাকিম শফি উদ্দিন তার সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

আরও খবর:

Also Read: জঙ্গি ছিনতাইয়ে ‘জড়িত’ একজন গ্রেপ্তার

Also Read: পলাতক জিয়ার নির্দেশনায় জঙ্গি ছিনতাই: পুলিশ

Also Read: জঙ্গি ছিনতাই: তিন ডিআইজি প্রিজন্স, দুই জেল সুপার বদলি

Also Read: যাদের ছকে জঙ্গি ছিনতাই, তারা ‘চিহ্নিত’

Also Read: জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনা তদন্তে পুলিশ সদর দপ্তরের কমিটি