ষোড়শ সংশোধনী বাতিল: রিভিউ শুনানি ১৬ নভেম্বর

সংবিধানের এই সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে আনা হয়েছিল। কিন্তু রায়ে তা বাতিল করে জিয়াউর রহমানের সামরিক শাসনামলে প্রতিষ্ঠিত সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল ফিরিয়ে আনে সুপ্রিম কোর্ট।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Nov 2023, 03:06 PM
Updated : 9 Nov 2023, 03:06 PM

বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদ সদস্যদের হাতে দেওয়া হয়েছিল সংবিধানের যে ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে, তা অবৈধ ও বাতিল করে দেওয়া আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদনের শুনানি হবে আগামী ১৬ নভেম্বর।

রিটকারীর আইনজীবীর সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে পাঁচ বিচারকের আপিল বেঞ্চ বৃহস্পতিবার শুনানির জন্য এই দিন ধার্য করে।

ওইদিন বিষয়টি শুনানির জন্য কার্যতালিকার শীর্ষে থাকবে বলে আদালত জানিয়েছে।

রিটকারীর পক্ষে সময় আবেদন করেন অ্যাডভোকেট এম. আশরাফুজ্জামান খান। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।

২০১৬ সালের ৫ মে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী, বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্টের বিশেষ বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে।

ওই বছরের ১১ অগাস্ট এ রায় সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। পরে এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ।

২০১৭ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি আপিল শুনানিতে অ্যামিকাস কিউরি নিয়োগ দেয় আপিল বিভাগ।

আপিল শুনানিতে ১০ অ্যামিকাস কিউরির মধ্যে শুধু আজমালুল হোসেন ষোড়শ সংশোধনীর পক্ষে মত দেন।

অপর নয় অ্যামিকাস কিউরি ড. কামাল হোসেন, এম আই ফারুকী, আব্দুল ওয়াদুদ ভূঁইয়া, প্রাক্তন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এফ এম হাসান আরিফ, এম. আমিরুল ইসলাম, বিচারপতি টিএইচ খান, রোকন উদ্দিন মাহমুদ, ফিদা এম কামাল, এ জে মোহাম্মদ আলী সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর বিপক্ষে তাদের মতামত তুলে ধরেন।

ওই বছরের ৮ মে হাই কোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিল শুনানি শুরু হয়, চলে ১১ দিন।

২০১৭ সালের ৩ জুলাই তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন সাত বিচারকের আপিল বেঞ্চ ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ও বাতিলের রায় বহাল রাখে।

এরপর ১ অগাস্ট ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করে সুপ্রিম কোর্ট, যা নিয়ে ক্ষমতাসীনদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়।

সংবিধানের ওই সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে আনা হয়েছিল। কিন্তু রায়ে তা বাতিল করে জিয়াউর রহমানের সামরিক শাসনামলে প্রতিষ্ঠিত সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল ফিরিয়ে আনে সুপ্রিম কোর্ট।

সাত বিচারপতির ঐকমত্যের ভিত্তিতে দেওয়া ৭৯৯ পৃষ্ঠার ওই রায়ে তখনকার প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা নিজের পর্যবেক্ষণের অংশে দেশের রাজনীতি, সামরিক শাসন, নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি, সুশাসন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে সমালোচনা করেন।

ওই রায় এবং পর্যবেক্ষণ নিয়ে খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও প্রধান বিচারপতির সমালোচনা করেন। রায়ের পর্যবেক্ষণে বঙ্গবন্ধুকে ‘খাটো করা হয়েছে’ অভিযোগ তুলে বিচারপতি সিনহার পদত্যাগের দাবি তোলেন ক্ষমতাসীন দলের অনেক নেতা।

তুমুল আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে বিচারপতি সিনহা ছুটিতে যান। ছুটি শেষে ওই বছর ১০ নভেম্বর বিদেশ থেকেই রাষ্ট্রপতির কাছে নিজের পদত্যাগপত্র পাঠান বিচারপতি সিনহা।

পরে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিভিউ আবেদন করে আপিল বিভাগের রায় বাতিল চায়।

রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছিল, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আইনসভার কাছে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা রয়েছে। দেশের সংবিধানেও শুরুতে এই বিধান ছিল। তবে সেটি ‘ইতিহাসের দুর্ঘটনা’ মাত্র।

কমনওয়েলথভুক্ত রাষ্ট্রগুলোর ৬৩ শতাংশের অ্যাডহক ট্রাইব্যুনাল বা ডিসিপ্লিনারি কাউন্সিলরের মাধ্যমে বিচারপতি অপসারণের বিধান রয়েছে বলে পর্যবেক্ষণে উল্লেখ ছিল।

আরো বলা হয়, বাংলাদেশের সংবিধানে ৭০ অনুচ্ছেদের ফলে দলের বিরুদ্ধে সাংসদরা ভোট দিতে পারেন না। তারা দলের হাই কমান্ডের কাছে জিম্মি। নিজস্ব কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়ার ক্ষমতা নেই। ৭০ অনুচ্ছেদ রাখার ফলে সংসদ সদস্যদের সবসময় দলের অনুগত থাকতে হয়। বিচারপতি অপসারণের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েও তারা দলের বাইরে যেতে পারেন না; যদিও বিভিন্ন উন্নত দেশে সাংসদদের স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত দেওয়ার ক্ষমতা আছে।

এতে আরো বলা হয়, মানুষের ধারণা হলে বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সংসদ সদস্যদের হাতে থাকলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হবে। সেক্ষেত্রে বিচার বিভাগের প্রতি মানুষের আস্থা দুর্বল হয়ে যাবে। মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের বিধানটি তুলে দিয়ে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী পাস হয়। ওই বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর ৯৬ অনুচ্ছেদে পরিবর্তন এনে বিচারকের অপসারণের ক্ষমতা সংসদ সদস্যদের হাতে পুনরায় ফিরিয়ে দেওয়া হয়। যেটি ১৯৭২ সালের সংবিধানেও ছিল।

সংবিধানে এই সংশোধনী হওয়ায় মৌল কাঠামোতে পরিবর্তন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন করবে; এমন যুক্তিতে ওই সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে একই বছরের ৫ নভেম্বর হাই কোর্টে এই রিট মামলা হয়।

পুরনো খবর:

Also Read: ইসির বিরুদ্ধে ব্যবস্থায় সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের দাবি ‘সুজনের’

Also Read: ষোড়শ সংশোধনী: রিভিউ প্রস্তুতিতে ১১ সদস্যের কমিটি

Also Read: ষোড়শ সংশোধনীর রিভিউ শুনানি শিগগিরই: আইনমন্ত্রী

Also Read: ষোড়শ সংশোধনী: রিভিউ শুনানি নিয়ে আনিসুল, মাহবুবের দুই কথা