সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় পর্যালোচনা ও পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করতে সহকর্মীদের নিয়ে ১১ সদস্যের কমিটি করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
Published : 20 Oct 2017, 11:46 PM
আইনি পদক্ষেপ হিসেবে রায় পর্যালোচনা ও রিভিউয়ের প্রস্তুতি নিতে এ কমিটি ইতোমধ্যে কাজ শুরু করছে জানিয়ে শুক্রবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “সাত-আটদিন আগেই কমিটি ফর্ম করেছি। আমাদের কমিটি কাজ করছে।”
অ্যাটর্নি জেনারেল জানান, তিনিসহ রাষ্ট্রের ১১ জন আইন কর্মকর্তা রয়েছেন এই কমিটিতে।
“আমি ছাড়া আছেন দুজন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল, সাতজন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও একজন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল। ড্রাফটিং ও রিভিউয়ের সমস্ত গ্রাউন্ড ঠিক করার জন্য এই কমিটি করা হয়েছে।”
কবে নাগাদ রিভিউ আবেদন করা হতে পারে জানতে চাইলে মাহবুবে আলম বলেন, “এ ব্যাপারে এখনও সিদ্ধান্ত আসেনি। সরকারের সিদ্ধান্ত পেলে যথাসময়ে পুনর্বিবেচনার আবেদন করা হবে।”
১১ সদস্যের এই কমিটির সঙ্গে যুক্ত ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একরামুল হক টুটুল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা পর্যালোচনা করছি, সংক্ষিপ্তসার তৈরি করছি। এই কমিটি সম্ভবত ৩০ তারিখ পর্যন্ত প্রত্যেক কর্মদিবসেই কাজ করবে।”
সংবিধানের ওই সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে আনা হয়েছিল। কিন্তু রায়ে তা বাতিল করে জিয়াউর রহমানের সামরিক শাসনামলে প্রতিষ্ঠিত সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল ফিরিয়ে আনে সুপ্রিম কোর্ট।
সাত বিচারপতির ঐকমত্যের ভিত্তিতে দেওয়া ৭৯৯ পৃষ্ঠার ওই রায়ে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা নিজের পর্যবেক্ষণের অংশে দেশের রাজনীতি, সামরিক শাসন, নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি, সুশাসন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে সমালোচনা করেন।
ওই রায় এবং পর্যবেক্ষণ নিয়ে খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও প্রধান বিচারপতির সমালোচনা করেন। রায়ের পর্যবেক্ষণে বঙ্গবন্ধুকে ‘খাটো করা হয়েছে’ অভিযোগ তুলে বিচারপতি সিনহার পদত্যাগের দাবি তোলেন ক্ষমতাসীন দলের অনেক নেতা।
তুমুল আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে প্রধান বিচারপতি গত ৩ অক্টোবর থেকে ছুটিতে যান। তিনি দায়িত্বে না ফেরা পর্যন্ত আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞাকে প্রধান বিচারপতির কার্যভার দেওয়া হয়।
প্রধান বিচারপতিকে ‘জোর করে’ ছুটিতে পাঠানো হয়েছে- বিএনপির এমন অভিযোগের মধ্যেই ১৩ অক্টোবর রাতে অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশ্যে দেশ ছাড়েন বিচারপতি সিনহা।
যাওয়ার আগে তিনি বলেন যান, তিনি ‘অসুস্থ নন’, ক্ষমতাসীনদের সমালোচনায় ‘বিব্রত’। তার বিশ্বাস, সরকারের একটি মহল রায় নিয়ে ‘ভুল ব্যাখ্যা’ দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী তার ওপর ‘অভিমান’ করেছেন।
প্রধান বিচারপতি দেশ ছাড়ার পরদিনই সুপ্রিম কোর্টের বিরল এক বিবৃতিতে বলা হয়, বিচারপতির সিনহার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, আর্থিক অনিয়ম, অর্থ পাচার ও নৈতিক স্খলনসহ ১১টি সুনির্দিষ্ট গুরুতর অভিযোগ জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি।
সহকর্মীরা এর ব্যাখ্যা চাইলে গ্রহণযোগ্য কোনো ব্যাখ্যা বিচারপতি সিনহা দিতে পারেননি। এ কারণে তারা অভিযোগের সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত একই বেঞ্চে বসতে রাজি নন বলে জানানো হয় বিবৃতিতে।
এপর ১৮ অক্টোবর এক সংবাদ সম্মেলনে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে যেসব দুর্নীতির অভিযোগ এসেছে, তার অনুসন্ধান হবে এবং তা দুদকের মাধ্যমে করা হতে পারে।
এদিকে রায় নিয়ে আলোচনার মধ্যেই গত ১৬ অগাস্ট ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একরামুল হক টুটুল রায়ের সত্যায়িত অনুলিপি (সার্টিফায়েড কপি) চেয়ে আবেদন করার কথা সাংবাদিকদের জানান।
এরপর ১৩ সেপ্টেম্বর ওই রায় এবং তার কিছু পর্যবেক্ষণের বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নিতে জাতীয় সংসদে একটি প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়।
রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা মাহবুবে আলম গত ১১ অক্টোবর রায়ের সত্যায়িত অনুলিপি পাওয়ার কথা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে নিশ্চিত করেন।
আইন অনুযায়ী, রায়ের সত্যায়িত অনুলিপি পাওয়া এক মাসের মধ্যে পুনর্বিবেচনার আবেদন করতে হবে।
বিএনপি ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়কে স্বাগত জানিয়ে একে ‘ঐতিহাসিক’ বললেও সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারকদের পক্ষ থেকেও ওই রায়ের সমালোচনা এসেছে।
আইন কমিশনের চেয়ারম্যান সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক আপিল বিভাগের ওই রায়কে ‘ভ্রমাত্মক’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
এই রায়ের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ যে ‘জটিলতার’ মধ্যে পড়েছে, সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে ওই রায় নতুন করে লিখতে আপিল বিভাগকে পরামর্শ দিয়েছেন আইন কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান বিচারপতি আবদুর রশীদ।
আর আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সংসদে বলেছেন, রিভিউ আবেদনে ‘কামিয়াব’ হবেন বলে তিনি আশাবাদী।