সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন এবং এর শুনানি নিয়ে দুই রকম বক্তব্য আসছে আইনমন্ত্রী ও অ্যাটর্নি জেনারেলের কাছ থেকে।
Published : 28 Nov 2017, 08:08 PM
আপিল বিভাগে ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় দিয়েছিল প্রধান বিচারপতি নেতৃত্বাধীন সাত বিচারকের বেঞ্চ। কিন্তু আপিল বিভাগে এখন বিচারক আছেন পাঁচজন।
এক্ষেত্রে রিভিউ শুনানিতে কোনো জটিলতা হবে কি না- সে প্রশ্নেই পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিচ্ছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা মাহবুবে আলম।
গত ১২ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টে নিজের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে মাহবুবে আলম বলেছিলেন,রায়ের সময় যে কজন বিচারক ছিলেন, তার চেয় কম বিচারক নিয়ে বেঞ্চ হল রিভিউ শুনানি সম্ভব নয়।
মঙ্গলবারও সাংবাদিকদের সামনে ওই বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি করেছেন তিনি।
তিনি বলেছেন, “এখন রিভিউ ফাইল করলেও লাভ হবে না। মূল আবেদনটি শুনেছিলেন সাতজন বিচারপতি। এখন আমাদের বিচারকের সংখ্যা পাচঁজন। রিভিউয়ের নরমাল নিয়ম হল যে কয়জন মূল মামলাটা শুনেছেন তত সংখ্যক বা তার থেকে বেশি সংখ্যক বিচারপতিরা রিভিউ শুনানি করে পুনর্বিবেচনা করতে পারবেন।”
অন্যদিকে আইনমন্ত্রী গত ২৩ নভেম্বর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সুপ্রিম কোর্ট রুলস থেকে উদ্ধৃত করে বলেছিলেন, “রিভিউ শুনানিতে সাত বিচারপতি থকতে হবে সুপ্রিম কোর্ট রুলসে এমন কোনো কথা নেই আমার জানামতে। এমন অনেক রিভিউ আছে যেখানে অনেকেই অবসরে গেছেন কিন্তু রিভিউ শুনানি হয়েছে।”
সুপ্রিম কোর্ট গত ১ অগাস্ট ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করে, যা নিয়ে ক্ষমতাসীনদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়।
সংবিধানের ওই সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে আনা হয়েছিল। কিন্তু রায়ে তা বাতিল করে জিয়াউর রহমানের সামরিক শাসনামলে প্রতিষ্ঠিত সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল ফিরিয়ে আনে সুপ্রিম কোর্ট।
সাত বিচারপতির ঐকমত্যের ভিত্তিতে দেওয়া ৭৯৯ পৃষ্ঠার ওই রায়ে তখনকার প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা নিজের পর্যবেক্ষণের অংশে দেশের রাজনীতি, সামরিক শাসন, নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি, সুশাসন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে সমালোচনা করেন।
ওই রায় এবং পর্যবেক্ষণ নিয়ে খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও প্রধান বিচারপতির সমালোচনা করেন। রায়ের পর্যবেক্ষণে বঙ্গবন্ধুকে ‘খাটো করা হয়েছে’ অভিযোগ তুলে বিচারপতি সিনহার পদত্যাগের দাবি তোলেন ক্ষমতাসীন দলের অনেক নেতা।
তুমুল আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে বিচারপতি সিনহা গত ৩ অক্টোবর থেকে ছুটিতে যান। তিনি দায়িত্বে না ফেরা পর্যন্ত আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞাকে প্রধান বিচারপতির কার্যভার দেন রাষ্ট্রপতি।
প্রধান বিচারপতিকে ‘জোর করে’ ছুটিতে পাঠানো হয়েছে- বিএনপির এমন অভিযোগের মধ্যেই ১৩ অক্টোবর রাতে অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশ্যে দেশ ছাড়েন বিচারপতি সিনহা। ছুটি শেষে ১০ নভেম্বর সিঙ্গাপুর থেকে হাই কমিশানারের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির কাছে নিজের পদত্যাগপত্র পাঠান বিচারপতি সিনহা।
এদিকে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় পর্যালোচনা ও পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করতে সহকর্মীদের নিয়ে অক্টোবরের শুরুর দিকে ১১ সদস্যের কমিটি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
তখন তিনি নভেম্বরের মধ্যে রিভিউ করার কথা বললেও এই সময়ের মধ্যে রিভিউ দাখিল করা নিয়ে মঙ্গলবার সংশয় প্রকাশ করেন।
মাহবুবে আলম বলেন, “আমি বলেছিলাম এ মাসের মধ্যে, অর্থাৎ নভেম্বরের মধ্যে রিভিউ করব। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে নভেম্বরের মধ্যে করতে পারব না। তবে গতকাল আমরা রায়ের সার্টিফায়েড কপি পেয়েছি। তাই আমাদের হাতে সময় আছে। কপি পাওয়ার পর থেকে আমরা আরও ২৭ দিন সময় পাব। এ সময়ের মধ্যে আমরা রিভিউ করব।”
এর আগেও একবার সার্টিফায়েড কপি পাওয়ার কথা বলেছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল। তাহলে সোমবার যা পেয়েছেন সেটা কী-এ প্রশ্নে তিনি বলেন, “কয়েকটি কপির জন্য আবেদন করা হয়। এখন যে সার্টিফায়েড কপি দিয়ে আবেদন করলে সময় বেশি পাওয়া যাবে সেটা দিয়েই আমরা আবেদন করব।”
মাহবুবে আলম জানান, যে ‘গ্রাউন্ডে’ রিভিউ করা হবে তা তারা সংগ্রহ করেছেন। এখন সেগুলো নিয়ে কাজ চলছে।
“গ্রাউন্ডগুলো ঘষামাজা করছি। আরও ফর্মুলেট করছি। নানা রকমভাবে এগুলোকে রিফাইন করাই হল আমাদের কাজ। তবে নভেম্বরের মধ্যে হচ্ছে না।
“রিভিউ ফাইল করা হলেও নতুন বিচারপতি নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত রিভিউ শুনানি করার সম্ভবনা নেই, এটাই আমি মনে করছি।”