সাংবাদিক নাদিমকে পেটানোর সময় পাশে থেকে পুরো ঘটনার নেতৃত্ব দেন বাবু, বলছে র্যাব।
Published : 17 Jun 2023, 08:32 PM
মামলা করেও সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিমকে আটকাতে না পেরে তাকে শায়েস্তা করতে হামলার পরিকল্পনা করেছিলেন জামালপুরের ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবু; আর সেই হামলায়ও পেছন থেকে দিয়েছিলেন নেতৃত্ব।
জামালপুরের বকশীগঞ্জের এই জনপ্রতিনিধিকে পঞ্চগড় থেকে গ্রেপ্তারের পর ঢাকায় এনে সংবাদ সম্মেলন করে এই তথ্য জানিয়েছে র্যাব।
পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলায় বাবুর এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে তার গ্রেপ্তার আরও তিনজনকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে র্যাব। তারা হলেন- মনিরুজ্জামান মনির (৩৫), জাকিরুল ইসলাম (৩১) ও রেজাউল করিম (২৬)।
সাংবাদিক নাদিম হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এনিয়ে ১৩ জন গ্রেপ্তার হলেন। নয়জনকে জামালপুর পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতেও পেয়েছে পুলিশ।
বাংলানিউজ এবং একাত্তর টিভির বকশীগঞ্জ প্রতিনিধি নাদিমকে গত বুধবার রাতে উপজেলার পাটহাটি মোড়ে বেদম পেটান হয়। পরদিন হাসপাতালে তিনি মারা যান।
এই হামলায় সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বাবু জড়িত বলে তখনই অভিযোগ তুলেছিলেন নাদিমের পরিবার ও সহকর্মী সাংবাদিকরা।
তবে পুলিশ জামালপুর থেকে নয়জনকে গ্রেপ্তার করলেও বাবু গিয়েছিলেন পালিয়ে। তিনি ভারতে পালানোর পথে শনিবার সকালে পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে ধরা পড়েন বলে র্যাব জানিয়েছে।
নাদিম খুন: ইউপি চেয়ারম্যান বাবু পঞ্চগড় থেকে গ্রেপ্তার
সাংবাদিক নাদিম হত্যা: কে এই বাবু চেয়ারম্যান
নাদিম খুন: ইউপি চেয়ারম্যান বাবুকে প্রধান আসামি করে মামলা
সাংবাদিক নাদিম হত্যা: রোববার ৯ জনের রিমান্ড শুনানি
বাবুসহ চারজনকে ঢাকায় আনার পর তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে আসেন বাহিনীর আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান বাবুর পরিকল্পনাতেই নাদিম হত্যাকাণ্ডটি ঘটানো হয়।
নাদিম সম্প্রতি চেয়ারম্যান বাবুকে নিয়ে কয়েকটি প্রতিবেদন করেন, ১০ মে ‘দুইবার বিয়ের পরও সন্তান-স্ত্রীকে অস্বীকার করছেন ইউপি চেয়ারম্যান!’, ১৪ মে ‘আমি আমার স্বামী চাই, একসঙ্গে সংসার করতে চাই’ এবং ২০ মে ‘আ.লীগ থেকে স্বামীর বহিষ্কার চেয়ে স্ত্রীর আবেদন’ শিরোনামে সেগুলো প্রকাশিত হয়।
এরপর নাদিমের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার আবেদন করেছিলেন ইউপি চেয়ারম্যান বাবু। কিন্তু ময়মনসিংহের সাইবার ট্রাইব্যুনাল তা খারিজ করে দেয়।
মামলা খারিজের বিষয়টি নিয়ে নাদিম ফেইসবুকে একটি পোস্ট দেওয়ার পর চেয়ারম্যান বাবু ক্ষিপ্ত হয়ে সাংবাদিক নাদিমকে ‘উচিত শিক্ষা’ দেওয়ার পরিকল্পনা করেন বলে র্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার আল মঈন জানান।
তিনি বলেন, “পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ১৪ জুন রাত আনুমানিক ১০টার দিকে নাদিমের বাড়ি ফেরার পথে বকশীগঞ্জ বাজারের পাটহাটি এলাকায় বাবু তার সন্ত্রাসীদের নিয়ে ওঁৎ পেতে থাকে। নাদিম তার সহকর্মীসহ মোটরসাইকেলে ঘটনাস্থলে পৌঁছালে বাবুর সন্ত্রাসীরা তাকে চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়।
“পরবর্তীতে পিছন থেকে দৌড় দিয়ে বাবুর আরও কয়েকজন লোক এসে তাকে মারতে মারতে পাশের একটি অন্ধকার গলিতে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যায় এবং এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকে।”
তখন বাবু ঘটনাস্থলের পাশে থেকে পুরো ঘটনার নেতৃত্ব দেন বলে জানান র্যাব কর্মকর্তা; যে কথা প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণেও এসেছে।
কমান্ডার আল মঈন বলেন, নাদিমের সহকর্মী তাকে বাঁচাতে গেলে বাবুর সন্ত্রাসীরা তাকেও মারধর করে। পরে নাদিমের চিৎকার শুনে স্থানীয়রা এগিয়ে এলে বাবু ও তার সঙ্গীরা পালিয়ে যায়।
নাদিমকে কী দিয়ে পেটান হয়েছিল- সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, “প্রাথমিক বক্তব্যে তারা (গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা) বলেছেন, তারা হাত দিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর করেছেন। সেখানে ইট বা লাঠির ব্যবহার হতে পারে।”
চেয়ারম্যানের যে ‘সন্ত্রাসী বাহিনী’র কথা র্যাব বলছে, সে সম্পর্কে জানতে চাইলে কমান্ডার আল মঈন বলেন, “অন্য কোন জায়গা থেকে সে কোনো লোক নিয়ে আসেনি। তার নিজের লোক দিয়েই সে কাজটি করিয়েছে। তাদের অনেকের বিরুদ্ধে আগের মারামারির মামলা রয়েছে।”
নাদিম মারা যাওয়ার দুদিন পর বাবু ধরা পড়লে এই ঘটনায় মামলা হয়েছে। নাদিমের স্ত্রীর করা ওই মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে ইউপি চেয়ারম্যান বাবুকে।
এদিকে সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডে নাদিমের জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠার পর বাবুকে দল থেকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে উপজেলা আওয়ামী লীগ।