অন্য শহীদ মিনারগুলোর সঙ্গে চেহারায় এর মিল নেই। অনেকেই মনে করেন কোনো স্থাপত্যশিল্প। বহিরাগত অনেকেই সেখানে উঠে পড়েন জুতা পায়ে। আড্ডার পাশাপাশি খাবারের উচ্ছিষ্ট ফেলে যান শহীদ বেদিতে।
Published : 20 Feb 2024, 12:09 PM
বছরজুড়ে ‘অযত্নে’ পড়ে থাকলেও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপনে ধুয়েমুছে পরিষ্কার করা হয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার।
দেশের অন্য শহীদ মিনারগুলোর সঙ্গে চেহারায় এর মিল নেই; অনেকেই এটিকে মনে করেন কোনো স্থাপত্যশিল্প হিসেবে। ফলে শিক্ষার্থী ছাড়াও বহিরাগত অনেকেই সেখানে উঠে পড়েন জুতা পায়ে। আড্ডার পাশাপাশি খাবারের উচ্ছিষ্ট ফেলে যান শহীদ বেদীতে।
অযত্ন-অবহেলার এসব অভিযোগ পুরনো; সারা বছর এমন পড়ে থাকলেও শহীদ মিনারটি কেবল সাজে প্রতিবছরের ফেব্রুয়ারি মাসে।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা ধুয়েমুছে পরিষ্কার করেছেন শহীদ মিনার। শ্যাওলার আস্তরণ তুলে দেওয়া হয়েছে রঙ। মিনারের আশেপাশেও পরিষ্কার করে প্রস্তুত করা হয়েছে একুশে ফেব্রুয়ারিতে শহীদদের সম্মান জানানোর জন্য।
তবে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বলছেন, কেবল ভাষার মাসেই নয়, শহীদ মিনার পরিপাটি রাখা উচিত সারা বছরই। শহীদদের স্মৃতি বিজড়িত মিনার শোচনীয় অবস্থায় রাখা কষ্টদায়ক।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী রাফি আহমেদ বলেন, “মাতৃভাষার অধিকার আদায়ে প্রাণ দেওয়া একমাত্র জাতি আমরা। আর এই শহীদ মিনারকে অযত্নে সারা বছর ফেলে রাখাটা দুঃখজনক।”
বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী শিবলী নোমান বলেন, “শহীদরা হলেন আমাদের গর্ব। তাদের স্মরণে নির্মিত শহীদ মিনার অযত্নে রাখা লজ্জার বিষয়। আমরা চাই শহীদ মিনারসহ ক্যাম্পাসের পরিবেশ সবসময় যেন পরিচ্ছন্ন রাখা হয়।”
দেশের অন্যান্য শহীদ মিনারের স্তম্ভ তিন থেকে পাঁচটি থাকলেও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের স্তম্ভ রয়েছে ১০টি। বৃত্তাকারে সাজানো স্তম্ভগুলোর নয়টি পেছনের দিকে কোমর ভেঙে সমতলে ঠেকানো। আর অন্যগুলোর চেয়ে মাঝে বড় একটি স্তম্ভের মাথা কেবল সামনের দিকে নোয়ানো বা অর্ধনমিত।
ভাষা আন্দোলনের দাবিতে ছাত্রদের সংঘবদ্ধ সমাবেশের একটি কল্পরূপ তুলে ধরা হয়েছে শহীদ মিনারের এই গঠনে।
ব্যতিক্রমী এই আকৃতির কারণ জানতে চাইলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ সেলিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের শহীদ মিনারের চারদিকে সাজানো প্রত্যেকটি বেদী পেছনের দিকে হেলানো থাকলেও এর মাঝখানের বেদী দাঁড়ানো অবস্থায় রয়েছে। ওপরের একটু অংশ সামনের দিকে নুয়ে পড়েছে। এ থেকে কোনো সভা-সমাবেশের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।”
ব্যতিক্রমী এ শহীদ মিনার এর আগে পরিবর্তনের দাবিও তুলেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়টির একদল শিক্ষার্থী। শহীদ মিনারের সামনে কোনো সাইনবোর্ডও টাঙানো নেই। ফলে বাইরের কেউ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করলে সেটিকে কোনো স্থাপত্যশিল্প বলেই মনে করেন।
সম্প্রতি শহীদ মিনারের বেদীতে জুতা পায়ে বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন বহিরাগত কয়েকজন। কাছে গিয়ে জানতে চাইলে তারা বলেন, কোনো সাইনবোর্ড চোখে না পড়ায় তারা শহীদ মিনার বুঝতে পারেননি, অন্যদের দেখাদেখি জুতা পায়ে উঠে পড়েছেন।
নতুন ক্যাম্পাসে নতুন শহীদ মিনার গড়ে তোলা হবে জানিয়ে বর্তমান শহীদ মিনারটি আপাতত সংস্কারের কথা বলছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী মো. হেলাল উদ্দিন পাটোয়ারী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “স্বল্প খরচে শহীদ মিনারের কিছু কাজ করা হবে। ভাঙা টাইলসগুলো ফেলে দেওয়া হবে। এর আগে শহীদ মিনারের চারপাশে স্টিলের তৈরি বেষ্টনী দেওয়া হয়েছে।”
বছরের অন্য সময়ও শহীদ মিনার পরিচ্ছন্ন-পরিপাটি রাখার ওপর জোর দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন ও বাংলা বিভাগের অধ্যাপক হোসনে আরা বেগম বলেন, “ভাষার মাস আসলে আমরা শহীদ মিনার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার কথা ভাবি। অথচ সারা বছর এটি পরিষ্কার রাখা উচিত।
“ভাষা শহীদ দিবস উপলক্ষে আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এবং আমি শহীদ মিনারের সমস্যার বিষয়গুলো নিয়ে প্রস্তাব দিয়েছি।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক স্ট্যান্ডিং কমিটির আহ্বায়ক, মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক নূর মোহাম্মদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভাষার জন্য যারা জীবন উৎসর্গ করে দিয়েছেন তাদের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য শহীদ মিনার তৈরি করা হয়েছে। শহীদ মিনারের কাজ করে সুন্দরভাবে সংস্কার করা উচিত। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যাপারে আমাদের সকলের সতর্ক হওয়া দরকার।”
জানতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক সাদেকা হালিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিষয়টি আমি শুনেছি, জেনেছি৷ এর পরপরই শহীদ মিনার পরিষ্কারের জন্য নির্দেশ দিই।”