“বারাসাত বেরিকেড টু ঢাকা নর্থ সিটি, তা চলবে যতদিন তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি না পায়।”
Published : 01 Feb 2025, 10:07 PM
সরকারি তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবির বিষয়টি সরকার ‘বিশেষভাবে বিবেচনা করছে’ জানিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দেওয়া বিবৃতি প্রত্যাখ্যান করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনরতদের সামনে আর কোনো ‘মুলা’ না ঝুলানোর অনুরোধ জানিয়ে রোববার ঢাকা উত্তর সিটি অবরোধ বা ‘বারাসাত বেরিকেড টু ঢাকা নর্থ সিটি’ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
শনিবার রাত ৮টায় ক্যাম্পাসের সামনে সংক্ষিপ্ত ব্রিফিংয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি মাহামুদুর রহমান মুক্তার বলেন, “তিতুমীরের দাবি প্রথম থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়। সে দাবিতে আমরা অনড় থাকব। আমাদের অনশন কর্মসূচির ৭২ ঘণ্টা পার হয়ে গেছে। অনশনরতদের চারজন হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছেন।
“রাষ্ট্র কি চায় তা স্পষ্টভাবে জানাতে হবে। সন্ধ্যার পর থেকে আমরা প্রথমে মহাখালী পয়েন্ট, আর মাত্র গুলশান পয়েন্ট থেকে এলাম। প্রত্যেকটা পয়েন্টেই আমাদের মেসেজ ছিল আমরা জনদুর্ভোগ চাই না। কিন্তু রাষ্ট্র আমাদের কথা শুনতে চায় না।
“আপনারা যদি আলোচনা করতে না চান, সরাসরি বলতে হবে। শুধুমাত্র সেই মুলা ঝুলাবেন না। সেই মুলা ঝুলানোর আশ্বাস শিক্ষার্থীরা শুনতে রাজি নন।”
আলোচনা চাইলে মন্ত্রণালয় থেকে ‘দায়িত্ববান’ কাউকে পাঠানোর আহ্বান জানিয়ে মুক্তার বলেন, “আপনারা দুইদিন আগে একজনকে পাঠিয়েছিলেন, তিনি এসে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বললেন। শিক্ষার্থীদের স্পন্দন সম্পর্কে তার ধারণা নেই।
“২৪ এর বিপ্লবের পর প্রশাসনিক কাঠামো পরিবর্তন হয়েছে, যোগ্যরা প্রশাসনে বসেছে। এমন অথর্ব কাউকে পাঠাবেন না যিনি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে প্রস্তুত না।”
তিনি বলেন, “আমাদের বিকাল ৪টা পর্যন্ত সময় বাঁধা ছিল, আমরা আলোচনা করব আবার। কিন্তু আপনাদের যে নোটিস, যে নোটিস মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া হয়েছে, সেটি আমরা প্রত্যাখ্যান করছি। কোনোভাবেই সাধারণ শিক্ষার্থীরা ওই অকার্যকর নোটিস গ্রহণ করে নেবে না।”
তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের সাতটি দফা এক দফায় পরিণত হয়েছে জানিয়ে মুক্তার বলেন, “তিতুমীরের সামনে আসবেন, দায়িত্ববান কেউ আসবেন ও ঘোষণা দেবেন আজ থেকে তিতুমীর কলেজ রাষ্ট্রীয়ভাবে তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয় হিসাবে ঘোষণা দেওয়া হল। আমরা পড়াশোনায় ফিরতে চাই।
“কেন যেন অলিখিত একটা সংবিধান হয়ে দাঁড়িয়েছে, যদি জনদুর্ভোগ তৈরি না করা হয়, যানজট না হয় তাহলে রাষ্ট্র আলোচনা করতে চায় না- এ ধারা থেকে আপনাদের বের হয়ে আসতে হবে। আপনাদের শিক্ষার্থীদের মন বুঝতে হবে। সেই ব্যক্তিকে পাঠান যিনি আলোচনা করার যোগ্যতা রাখেন।”
শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে নতুন করে কোনো কর্মসূচি দেওয়ার নেই জানিয়ে তাদের এই প্রতিনিধি বলেন, “আমাদের আমরণ অনশন চলছে। শুক্রবার যে কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলাম, বারাসাত বেরিকেড টু ঢাকা নর্থ সিটি, তা চলবে যতদিন তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি না পায়।
“আমরা বীর তিতুমীরের আদর্শ মেনে চলি। তিনি আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক আন্দোলন শিখিয়েছেন। আমরা ইজতেমা যাত্রীদের কথা বিবেচনা করে বিকাল পর্যন্ত আন্দোলন শিথিল রেখেছিলাম।”
আগেই শিক্ষার্থীরা জানিয়েছিলেন, তারা রোববার সকাল ৬টা থেকে ১১টা পর্যন্ত অবরোধ ও আন্দোলন শিথিল রাখবেন।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি থেকে আলাদা করার সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে এসব কলেজে আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে না।
সরকারি এই সাতটি বড় কলেজের জন্য পৃথক বিশ্ববিদ্যালয় করার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে সরকার। সাত কলেজকে প্রতিষ্ঠানিক কাঠামোর রূপ দিতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যানরে নেতৃত্বে একটি কমিটি কাজ করছে।
সরকারি এই সাত কলেজ হল ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, সরকারি বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ।
এর মধ্যে সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী নিজেদের জন্য একটি স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন। শিক্ষালয়টির প্রধান ফটকে ‘তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয়’ লেখা ব্যানারও টানিয়ে দিয়েছেন তারা। সরকারি ঘোষণার দাবিতে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে কলেজের সামনে অনশনে বসেছেন কয়েকজন শিক্ষার্থী।
ঢাকার মহাখালীতে কলেজের সামনে সড়ক অবরোধ করে বৃহস্পতিবার থেকে দফায় দফায় তাদের কর্মসূচি চলছে। সড়ক অবরোধের কারণে যানজটে ভুগতে হচ্ছে ওই পথ দিয়ে যাওয়া যানবাহন ও যাত্রীদের।
অনশন চলার মধ্যেই শনিবার বিকাল ৪টা থেকে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এলাকায় সড়ক অবরোধ কর্মসূচি শুরু করেছেন তিতুমীরের শিক্ষার্থীরা, যাকে তারা বলছেন ‘বারাসাত বেরিকেড টু ঢাকা নর্থ সিটি’।
এর মধ্যেই আন্দোলন সংশ্লিষ্টদের ‘ধৈর্য্য ধরার’ অনুরোধ জানিয়ে একটি বার্তা দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়, যেখানে ‘জনজীবনে দুর্ভোগ সৃষ্টি হয় বা কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম ব্যহত হয়’ এমন কর্মসূচি থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানানো হয়।
মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তা সিরাজ উদ দৌলা খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "সাত কলেজকে স্বতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো দিতে ইউজিসি চেয়ারম্যানের গঠিত কমিটি সরকারি তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরে শিক্ষার্থীদের যে দাবি, তা নিয়েও কাজ করছে। তাদের সে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
“তাই জনদুর্ভোগ এড়াতে কর্মসূচি থেকে বিরত থাকতে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আন্দোলনকারীদের অনুরোধ জানানো হয়েছে।”
তার নামে পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়, “সরকারি তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে চলমান আন্দোলনের বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় তথা সরকার অবহিত রয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো যাচ্ছে যে, ঢাকার ঐতিহ্যবাহী সাতটি কলেজের সমন্বয়ে একটি পৃথক বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের লক্ষ্যে ইউজিসির চেয়ারম্যান মহোদয়ের নেতৃত্বে গঠিত একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি কাজ করছে। এক্ষেত্রে সরকারি তিতুমীর কলেজের বিষয়টি বিশেষভাবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
“ইতোমধ্যে এই কমিটি তিতুমীর কলেজসহ সাতটি কলেজের শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের সঙ্গে তাদের সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা শুরু করেছে। এই কলেজগুলোর শিক্ষার সুযোগ সুবিধা ও মানোন্নয়নই বর্তমানে সরকারের প্রধান লক্ষ্য এবং এক্ষেত্রে করণীয় সকল বিকল্পই সরকারের বিবেচনায় থাকবে।”
সর্বস্তরের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ন্যায়সঙ্গত দাবি-দাওয়ার বিষয়ে সরকার ‘সবসময় সচেতন ও সহানুভূতিশীল রয়েছে’ বলেও বিবৃতিতে আশ্বস্ত করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
তবে ওই আহ্বানে সাড়া না দিয়ে তিতুমীরের শিক্ষার্থীরা বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে নিজেদের ক্যাম্পাসের সামনে অবস্থান নিয়ে মহাখালী-গুলশান সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেন।
বিকাল সোয়া ৫টায় কলেজ ক্যাম্পাস থেকে কয়েকশ শিক্ষার্থী বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বের হয়ে মহাখালী ঘুরে গুলশান- ১ নম্বরে যান। সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে তারা গুলশান ১ নম্বর গোলচত্বরে সড়ক আটকে বসে পড়েন।
এরপর রাত পৌনে ৮টার দিকে তারা মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসের দিকে রওনা হন। রাত ১০টার সময়ও কলেজের সামনে শিক্ষার্থীদের অবরোধ কর্মসূচি চলছিল।