তাপস বলেন, “ভূমিদস্যুদের আগ্রাসনের বিষয়ে সরকারি বেসরকারি কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা দিনদিন আমাদের সামনে আরও প্রতিকূলতা সৃষ্টি করছে।”
Published : 06 Jul 2024, 05:28 PM
হাতিরঝিল প্রকল্পের মধ্যে গড়ে ওঠা বিজিএমইএ ভবন বছর চারেক আগে ভাঙা হলেও সেই জায়গার অর্ধেকটায় এখন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত।
শনিবার রাজধানীর বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব প্ল্যানার্স-বিআইপি সম্মেলন কেন্দ্রে এক সংলাপে অংশ নিয়ে তিনি রাজধানীর উন্নয়নে কাজ করা বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয়হীনতা নিয়েও কথা বলেন।
ঢাকা ইউটিলিটি রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন-ডুরা ‘ঢাকার জলাবদ্ধতা দূরীকরণ এবং নান্দনিক পরিবেশ সৃষ্টিতে খাল পুনুরুদ্ধারের ভূমিকা’ শীর্ষক এই সংলাপের আয়োজন করে।
এতে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস।
সংলাপের বিশেষ অতিথি ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, “ঢাকা একটা শহর যেখানে ১৪টি সংস্থা কাজ করে। প্রতিটি সংস্থা নিজকে স্বাধীন বলে দাবি করে কিন্তু তাদের কাজের কোনো জবাবদিহিতা নেই। আজ সিটি করপোরেশন রাস্তা করে দিলে কাল আবার ওয়াসা রাস্তা কেটে রাখে। এ অবস্থায় নান্দনিক পরিবেশ সৃষ্টি করে কী লাভ হবে? এ জন্য টেকসই উন্নয়নের বিকল্প নেই।”
দখলদাররা রাজনৈতিকভাবে খুবই শক্তিশালী উল্লেখ করে তাদেরকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করতে হবে বলেও মন্তব্য করেন।
হাতিরঝিলে বিজিএমইএ ভবন ভেঙে জলাশয় উদ্ধার করা হলেও সেখানে আবার ভরাট করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “হাতিরঝিলে বিজিএমইএ ভবন ভাঙা হয়েছে ওইটার অবস্থা কী জানেন? ওইটার অর্ধেক নাই এখন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের জন্য। তাহলে ভবনটা ভাঙলেন কেন?
“পরিবেশবাদীরা যারা ওইটা নিয়ে আন্দোলন, বড় বড় মামলা করলেন তারা কই? সেই পরিবেশবাদীরা আবার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কনসালটেন্ট।”
আলোচনায় অংশ নিয়ে মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, খালের জমিতে সরকারি-বেসরকারি দখলদারদের আগ্রাসন পুরোপুরি বন্ধ করা না হলে জলাবদ্ধতা সমস্যারও কোনো স্থায়ী সমাধান নেই।
তিনি বলেন “শ্যামল দত্ত (ভোরের কাগজ সম্পাদক) সাহেব বলেছেন, হাতিরঝিলের খালি জায়গা কীভাবে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। আমি ওই ব্যাপারে আর না বলি। কিন্তু এই সকল আগ্রাসন, ভূমিদস্যূদের আগ্রাসনের বিষয়ে সরকারি বেসরকারি কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা দিন দিন আমাদের সামনে আরও প্রতিকূলতা সৃষ্টি করছে। এ থেকে পরিত্রাণ না পাওয়া পর্যন্ত পূর্ণরূপে আমরা জলাবদ্ধতা নিরসন করতে পারব এটা বলা যায় না।”
বিজিএমইএ ভবনকে হাতিরঝিল প্রকল্পের ‘ক্যান্সার’ আখ্যায়িত করে হাই কোর্ট ২০১১ সালে এক রায়ে ইমারতটি ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেয়। পরে আপিল বিভাগেও তা বহাল থাকে।
সর্বোচ্চ আদালত বিজিএমইএ ভবন ভাঙার রায় দেওয়ার পর কয়েক দফায় সময় নিয়েছিল তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকরা। সব বাধা কাটিয়ে ২০২০ সালের ২২ জানুয়ারি ভবনটি ভাঙা শুরু হয়।
দক্ষিণের জলাবদ্ধতা কমেছে ৭০ শতাংশ
পানি নিষ্কাশন নিয়ে তাপস বলেন, ঢাকার পানি নিষ্কাশনের দায়িত্ব সিটি করপোরেশনকে হস্তান্তর করা ভালো সিদ্ধান্ত ছিল। এতে কাজ করা সহজ হয়েছে।
তিনি বলেন, দায়িত্ব নেওয়ার সাড়ে তিন বছরের মধ্যে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছেন। এতে দক্ষিণের জলাবদ্ধতা ৭০ শতাংশ কমেছে। বাকি ত্রিশ শতাংশ দূর করতে কাজ চলছে।
“কারণ হল আমরা খালগুলো, নর্দমাগুলো পেয়েছি। একটি জায়গায় আমি সিদ্ধান্ত নিতে পারছি, যে পরিকল্পনা করতে পারছি সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারছি। এর আগে যেভাবে ছিল তাতে কোনোভাবেই সমন্বয় করা সম্ভব ছিল না।”
তাপস বলেন, ২০২১ সালে ডিএসসিসি এলাকায় ১৬১টি স্থান চিহ্নিত করে ১৩৬টি জায়গার জলাবদ্ধতা নিরসন করা হয়েছে। নতুন করে ৫০টি জায়গা চিহ্নিত করা হয়েছে।
ডিএসসিসি মেয়র বলেন, ওয়াসা থেকে পাওয়া ১১টি খালের মধ্যে জিরানি, মান্ডা, শ্যামপুর এবং কালুনগর খাল গুরুত্বপূর্ণ। খালগুলো নিয়ে এরইমধ্যে একটি প্রকল্পের অনুমোদন পাওয়া গেছে।
“পানি উন্নয়ন বোর্ডের যে খালগুলো রয়েছে সেগুলো আমরা এখনো বুঝে পাইনি। বিভিন্ন প্রকল্পের কারণে এই খালগুলো আমরা পাইনি। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের খালগুলো পেলে সব খাল, জলাশয় নিয়ে আমরা কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করব।”
সংলাপে সভাপতিত্ব করেন ডুরার সভাপতি ওবায়দুর মাসুম, সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান মোল্লা।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সাধারণ সম্পাদক শেখ মুহম্মদ মেহেদী আহসান, ডুরার সাবেক সভাপতি রুহুল আমিন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক জয়শ্রী ভাদুড়ী, ডিএসসিসির ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম বাবুল, সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর নার্গিস মাহতাব বক্তব্য রাখেন।