“বৃহত্তর ক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার জন্য উন্মুখ আমরা। এটাই দেখার অপেক্ষায় আছি,” বলেন তিনি।
Published : 29 Mar 2025, 01:57 AM
‘চীনকে ভালো বন্ধু হিসেবে দেখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ’ মন্তব্য করে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, দুই দেশের সম্পর্ক ‘নতুন পর্যায়ে’ প্রবেশ করবে।
শুক্রবার চীনের সরকারি বার্তা সংস্থা সিনহুয়াকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, “আমাদের সম্পর্ক বছরের পর বছর ধরে খুবই শক্তিশালী। আমাদের ব্যবসা খুবই শক্তিশালী এবং চীনের সাথে আমাদের সহযোগিতা থেকে আমরা উপকৃত হচ্ছি।”
চার দিনের প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফরে চীনে রয়েছেন মুহাম্মদ ইউনূস।
বার্তা সংস্থা বাসস লিখেছে, ‘চীন যা অর্জন করেছে তাতে বাংলাদেশের সবাই অনুপ্রাণিত’ মন্তব্য করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাজ হল একটি নতুন বাংলাদেশ পুনর্গঠন করা এবং জনগণ আশা করে যে তারা নিজ দেশের উন্নয়নে চীনের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিতে পারবে।”
চীনের দারিদ্র্য হ্রাসের অর্জন বিষয়ে ইউনূস বলেন, “বেশিরভাগ দেশ সাধারণ মানুষের চাহিদা পূরণের পরিবর্তে জিডিপি প্রবৃদ্ধির ওপর জোর দেয়। কিন্তু চীন নিম্ন আয়ের গোষ্ঠীর ওপর জোর দেয়। এ কারণেই চীনারা দ্রুত দারিদ্র্য হ্রাসে খুব সফল।”
এদিন প্রধান উপদেষ্টা চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন।
শি-এর সঙ্গে বৈঠকের পর মুহাম্মদ ইউনূস প্রেসিডেন্সিয়াল বেইজিংয়ে চীনা ব্যবসায়ী নেতাদের সাথে একটি ‘ইনভেস্টমেন্ট ডায়ালগে’ অংশ নেন।
বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে একটি চুক্তি ও আটটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়েছে।
এছাড়া বাংলাদেশ চীন সরকার ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ২১০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ, অনুদান ও বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি পেয়েছে।
বাসস জানায়, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে ‘উচ্চ পর্যায়ের উন্নয়ন’ হয়েছে। চীন টানা ১৫ বছর ধরে বাংলাদেশের ‘বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার’। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ১ হাজার চীনা প্রতিষ্ঠান কাজ করছে, যা সাড়ে ৫ লাখের বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে।
সিনহুয়াকে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, “দুই দেশ ব্যাপক সহযোগিতার সম্পর্ক স্থাপন করেছে, যা অনেক ইতিবাচক ফলাফল এনেছে। চীন থেকে বাংলাদেশের আমদানি বাড়ছে। আমাদের শিল্প-ব্যবহারের বেশিরভাগ পণ্য আসে চীন থেকে।”
ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে ইউনূস দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক পরিপূরকতা এবং তাদের বিশাল সহযোগিতার সম্ভাবনার ওপর জোর দেন। তিনি আশা করেন, আরও চীনা বিনিয়োগকারী বাংলাদেশে আসবেন এবং স্থানীয় অংশীদারদের সাথে একত্রে একটি ‘বৃহত্তর বাজার উন্মুক্ত’ করবেন।
সম্প্রতি বাংলাদেশি রোগী, ডাক্তার ও ট্রাভেল এজেন্সিগুলোর প্রথম দলটি চীনের ইউনান প্রদেশের কুনমিংয়ে চিকিৎসা পরীক্ষা ও চিকিৎসা পর্যটন বাজারের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে গিয়েছিল।
ইউনূস বলেন, “বাংলাদেশ চীনের কাছ থেকে শিখতে এবং জনগণের উপকারে একটি উন্নত স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারে।”
বাসস জানায়, এ বছর চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০তম বার্ষিকী এবং এটিকে চীন ও বাংলাদেশ জনগণের সাথে জনগণের বিনিময় বছর হিসেবেও মনোনীত করা হয়েছে।
বাংলাদেশে সন্ন্যাসী জুয়ানজ্যাং-এর পদচিহ্ন রেখে যাওয়া এবং চীনে বৌদ্ধ ধর্ম প্রসারে পণ্ডিত অতীশ দীপঙ্করের অবদান, বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ আদান-প্রদানের দীর্ঘ ইতিহাস তুলে ধরেন প্রধান উপদেষ্টা। যা দ্বিপক্ষয়ি সম্পর্কের দ্রুত এবং টেকসই উন্নয়নের জন্য একটি দৃঢ় ভিত্তি স্থাপন করেছে বলে মনে করেন তিনি।
ইউনূস বলেন, “চীনের সাথে সহযোগিতার মাধ্যমে বাংলাদেশ উপকৃত হচ্ছে।
‘আমরা কেবল দ্রুত উন্নয়নশীল অর্থনীতিই তৈরি করতে পারি না, বরং একটি নতুন ধরনের অর্থনীতি তৈরি করতে পারি যেখানে সকলের অংশগ্রহণ থাকবে। আমরা এটিকে পরবর্তী পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারি যেখানে আমাদের সহযোগিতা কেবল অর্থনীতির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। এটি হবে সাংস্কৃতিক।”
বাংলাদেশ ও চীনের বিগত ৫০ বছরের সম্পর্ক চমৎকার ছিল মন্তব্য করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আগামী ৫০ বছর আরও সুদৃঢ় হবে।
“বৃহত্তর ক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার জন্য উন্মুখ আমরা। এটাই দেখার অপেক্ষায় আছি।”
আরও পড়ুন:
বেইজিংয়ে শি জিনপিং ও মুহাম্মদ ইউনূসের বৈঠক
চীনের ২১০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ, ঋণ ও অনুদান প্রতিশ্রুতি পেল বাংলাদেশ