“হঠাৎ হঠাৎ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে একেকটা দাবি, সেটা ন্যায্য কিংবা অনায্য, তার জন্য একটা অস্থির পরিবেশ সৃষ্টি করা হোক, এটা চাই না।”
Published : 25 Feb 2025, 05:32 PM
সৎরাই বুক উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে- এমন একটি সমাজের আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করে শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, "আশা করব আমরা যে নতুন বাংলাদেশ গড়তে চাই, যে সমাজ গড়তে চাই, সেখানে সৎ মানুষদের যেন তেলাপোকা হয়ে বাঁচতে না হয়।”
মঙ্গলবার দুপুরে পূর্বাচলে বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ১৬তম সমাবর্তনে এ আশা ব্যক্ত করেন তিনি।
ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, "আমরা এমন একটা সমাজে থাকতে চাই, যেখানে সৎরাই বুক উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে, তাদেরকে অসহায়বোধ করতে হবে না।"
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে উপদেষ্টা বলেন, "সমাবর্তন বক্তৃতায় নিয়ম অনুযায়ী বলতে হয়, তোমরা যারা আজ কর্মজীবনে প্রবেশ করছ, তারা নিজেদের ক্যারিয়ারের প্রতি যেমন যত্নবান হবে, তেমনি সমাজের জন্য কিছু করবে।
“এটা সবসময় বলতে হয়, একটা নিয়ম; যে সমাজের জন্য কিছু করতে হবে! আসলে সমাজের জন্য কিছু করার মানে কী?”
তিনি বলেন, “আমার এক অর্থনীতিবিদ জাপানি বন্ধু তার দেশের অভিজ্ঞতা থেকে আমাকে বলেছিলেন, ‘আমরা যারা যে পেশাতেই থাকি না কেন, সেটা ইঞ্জিনিয়ার হোক, চিকিৎসক হোক, সরকারি চাকরি হোক, উদ্যোক্তা হোক, আমরা যদি প্রত্যেকে নিজের ক্ষেত্রে নিজের দায়িত্বটা পালন করি সততার সঙ্গে, তাহলেই সমাজের সবার উন্নতি হবে। এটাই সমাজের প্রতি আমাদের দায়িত্ববোধ এবং সমাজের প্রতি কিছু করা।
“সবাই যদি আমরা নিজের কাজটুকু সৎভাবে করি, দায়িত্বশীলতার সঙ্গে করি, তাহলেই সমাজের প্রতি যা করার, তা হয়ে গেল।”
ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, “এর উল্টো চিত্র, যেটা আমাদের দেশে দুঃখজনকভাবে আমরা দেখি; আমাদের সমাজে সরকারি কর্মীদের ক্ষেত্রে ব্যাপক দুর্নীতি।
“ব্যবসা-বাণিজ্য যারা করেন, অনেকেই ভালো উদ্যোক্তা, তাদের মধ্যে অনেকে আছেন কোটিপতি হতে গিয়ে অন্যায্য এবং অন্যায় অনেক সুযোগ-সুবিধা নেন। এতে যারা অল্প কয়েক মানুষ সৎ হতে চান, ভালোভাবে কাজ করতে চান, তারা অত্যন্ত অসহায়বোধ করেন।"
বিখ্যাত গল্প ‘মেটামরফোসিস’ উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, "সেখানে দুর্নীতিগ্রস্ত একটা সমাজ, বিশেষ করে সরকার দুর্নীতিগ্রস্ত; সেখানে একটা ভালো মানুষ হঠাৎ সকালে দেখে সে তেলাপোকা হয়ে গেছে।
“তেলাপোকা হয়ে চারদিকে যত অন্যায়, অবিচার হচ্ছে সবই সে দেখে; কিন্তু তার নিজের কিছু প্রতিকার করার ক্ষমতা নেই।”
বক্তব্যে ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানান শিক্ষা উপদেষ্টা।
গণঅভ্যুত্থানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সমাজের ধারণা বদলে দিয়েছেন উল্লেখ করে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, "অনেকের একটা ধারণা ছিল যে ব্র্যাক বা ব্র্যাকের মত প্রথম সারির যে কয়টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে তাদের শিক্ষার্থীরা শিক্ষা ক্ষেত্রে ভালো করে, বিদেশ গিয়ে ভালো করে, তারা শুধু নিজেদের ক্যারিয়ার নিয়ে চিন্তা করে, সামাজিক দায়বদ্ধতা তাদের মধ্যে তেমন জন্মগ্রহণ করে না।
“কিন্তু আমরা সম্প্রতি যে ছাত্র গণঅভ্যুত্থান দেখেছি, সেখানে ব্র্যাক ও অন্য কিছু প্রথম সারির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যেভাবে এগিয়ে এসেছে, তাতে আমাদের ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে।”
অবশ্যই শিক্ষার্থীদের দাবিদাওয়া থাকবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, "কিন্তু প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা আচরণবিধি আছে; সেই আচরণবিধির মধ্যে থেকে তারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে তাদের ন্যায়সংগত দাবি-দাওয়াগুলো পেশ করবে, তা সমাধানের চেষ্টা করবে সবাই মিলে।
“হঠাৎ হঠাৎ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে একেকটা দাবি, সেটা ন্যায্য কিংবা অন্যায্য, তার জন্য একটা অস্থির পরিবেশ সৃষ্টি করা হোক, এটা চাই না। হঠাৎ হঠাৎ করলে কিন্তু আমরা সেটা যে ন্যায্য দাবি, তা বুঝতে পারি না।"
সমাবর্তনে ৪ হাজর ৮২৯ জন শিক্ষার্থীকে ডিগ্রি দেওয়া হয়। এছাড়া বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে দুজনকে চ্যান্সেলর স্বর্ণপদক এবং ২৮ জনকে দেওয়া হয় ভাইস-চ্যান্সেলর স্বর্ণপদক।
‘চ্যান্সেলর স্বর্ণপদক’ তুলে দেন শিক্ষা উপদেষ্টা; ‘ভাইস-চ্যান্সেলর স্বর্ণপদক’ তুলে দেন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক সৈয়দ ফারহাত আনোয়ার।
এবার সমাবর্তন বক্তা ছিলেন অস্কার বিজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাতা ও সাংবাদিক শারমিন ওবায়েদ চিনয়। অতিথির কাতারে ছিলেন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারপারসন তামারা হাসান আবেদও।