ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে অর্জিত ‘অভূতপূর্ব বিজয়’ যেন হাতছাড়া না হয় সে বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হয় উদীচীর সমাবেশে।
Published : 09 Aug 2024, 06:23 PM
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বধীন সরকার পতনের পর থেকে ঘটে চলা সাম্প্রদায়িক হত্যা-হামলা, লুটপাট-ডাকাতি এবং মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত ভাস্কর্য ও ঐতিহাসিক স্থাপনায় ভাঙচুরের প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী।
শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের বিপরীতে একটি সমাবেশ করে উদীচী; তাতে সভাপতিত্ব করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান।
শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীনের ভাস্কর্যসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়ে হামলা চালানো হয়েছে বলে সমাবেশে থেকে জানায় উদীচী।
ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে অর্জিত ‘অভূতপূর্ব বিজয়’ যেন হাতছাড়া না হয় সে বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বানও জানানো হয়।
উদীচীর সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে বলেন, "ছাত্র-জনতা বৈষম্যের অবসানের দাবিতেই রাজপথে নেমে বিজয় ছিনিয়ে এনেছে। তবে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন স্বৈরতান্ত্রিক আওয়ামী লীগ সরকারের দুঃশাসনের অবসানের পর থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থানে ধারাবাহিকভাবে সাম্প্রদায়িক হামলা, সংখ্যালঘু নির্যাতন, ডাকাতি, হত্যাকাণ্ড এবং ঐতিহ্যবাহী ভাস্কর্য-শিল্প-শিল্পাঙ্গণ ধ্বংসের ঘটনা ঘটে চলেছে।
"এসব হামলার প্রত্যক্ষ শিকার হচ্ছেন ধর্মীয়ভাবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ। তাদের উপাসনালয়, বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে নির্বিচারে হামলা-লুটপাট চালানো হচ্ছে। নতুন যে সরকার দায়িত্ব নিয়েছে তারা যেন অবিলম্বে সব ধরনের সহিংসতা প্রতিরোধ করে এসব ঘটনায় জড়িতদের খুঁজে বের করে সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।"
সমাবেশে বক্তব্য দেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি হাবিবুল আলম, প্রবীর সরদার, জামসেদ আনোয়ার তপন, কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসরের সাধারণ সম্পাদক প্রণয় সাহা এবং যুব ইউনিয়নের সভাপতি খান আসাদুজ্জামান মাসুম।
সঞ্চালনা করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সাধারণ সম্পাদক ইকবালুল হক খান।
উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান বলেন, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর সেনাবাহিনী আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব নিলেও দেশজুড়ে তাণ্ডব, হত্যা, ভাঙচুর, লুট, ডাকাতি কমেনি। পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বঙ্গবন্ধু জাদুঘরসহ মুক্তিযুদ্ধের নানা ঐতিহাসিক নিদর্শনের সংগ্রহশালা। ভাঙচুর করা হয়েছে বাংলা একাডেমি চত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সাত বীরশ্রেষ্ঠর ম্যুরাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষ্কর্য চত্বরও। হামলা হয়েছে শিশু একাডেমি ও কুড়িগ্রামের শিল্পকলা ভবনে। খুলনায় গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ আর্কাইভস।
"বাংলাদেশে এমন অস্থির সময় আগেও এসেছে। তাই ঘাবড়ে যাওয়ার কিছু নেই। উদীচীর শিল্পী-কর্মীরা মানবমুক্তির লড়াইয়ে দৃঢ় পায়ে এগিয়ে যাবে।”
অধ্যাপক বদিউর রহমান বলেন, উদীচী একটি অসাম্প্রদায়িক, বৈষম্যহীন, শোষণমুক্ত গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার সংগ্রাম চালিয়ে যাবে।
সমাবেশে সমবেত সংগীত পরিবেশন করেন উদীচীর সঙ্গীত বিভাগের শিল্পীরা।
একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন সুরাইয়া পারভীন, বুলবুল ইসলাম, সাজেদা বেগম সাজু, শাওন কুমার রায়। একক আবৃত্তি করেন মণীষা মজুমদার।