মিরপুর রোডে ভবনে বিস্ফোরণ, ৩ জনের মৃত্যু

অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার শাহেন শাহ বলেন, “প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ভবনের তৃতীয় তলায় এসিতে বিস্ফোরণ ঘটেছে। পুলিশের বম্ব ডিসপোজাল টিম ঘটনাস্থলে কাজ করছে।”

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 March 2023, 06:01 AM
Updated : 5 March 2023, 06:01 AM

ঢাকার মিরপুর রোডে সুকন্যা টাওয়ারের কাছে বিকট বিস্ফোরণে তিনতলা একটি ভবনের আংশিক ধসে পড়েছে; এ ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে তিনজনের; আহত হয়েছেন অন্তত ৩০ জন।

রোববার সকাল ১০টা ৫২ মিনিটের দিকে ভবনটির তৃতীয় তলায় বিস্ফোরণ ঘটে বলে ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কর্মকর্তা জীবন মিয়া জানান।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, বিস্ফোরণের সঙ্গে সঙ্গে ভবনটিতে আগুন ধরে যায়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের পলাশী, ধানমণ্ডি টহল এবং সিদ্দিকবাজার স্টেশনের চার ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে কাজ শুরু করে।

ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কর্মকর্তা শাহজাহান মোল্লা জানান, ভবনটির নাম শিরিন ভবন। পাশেই সুকন্যা টাওয়ার এবং ভবন মালিক সমিতির ফটক। বিস্ফোরণে তিনতলা ওই ভবনের একপাশের দেয়াল ধসে পড়ে।

আহত ৩০ থেকে ৪০ জনকে তাৎক্ষণিকভাবে নেওয়া হয় কাছের পপুলার মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে। সেখানে তিনজনকে মৃত ঘোষণা করা হয় বলে জানান হাসপাতালের মহাব্যবস্থাপক মোসাদ্দেক হোসেন।

ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার মো. শহিদুল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, নিহত তিনজন ওই ভবনের তৃতীয় তলায় লায়রা প্রোডাক্টসে কাজ করতেন। তারা হলেন শরীয়তপুরের শফিকুজ্জামান (৪৫), ঢাকার লালবাগের আব্দুল মান্নান (৬৫) এবং নরসিংদীর তুষার (৩৫)।

“তারা সবাই লায়রা প্রোডাক্টসে কাজ করতেন। শফিকুজ্জামান ও তুষার সেখানে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে কাজ করতেন। আব্দুল মান্নান ছিলেন পিয়ন। লায়রা'র এরিয়া ম্যানেজার শাহিনুর রহমানের সাথে কথা হয়েছে। তিনি বলেছেন, মৃত ব্যক্তিদের আত্মীয় স্বজনকে অবহিত করা হয়েছে তারা আসছেন।”

বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে ৪০০ মিটার দূরের ভবনও

ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের নিচতলায় কাপড়ের দোকানপাট, দ্বিতীয় তলায় সেলুন ও লন্ড্রির দোকান এবং তৃতীয় তলায় ফিনিক্স ইনস্যুরেন্স লিমিটেডের অফিস। বিস্ফোরণের পর তৃতীয় তলার ওই অফিসের চেয়ার, দরজার শাটার ও আসবাবপত্রের কিছু সড়কে ছিটকে পড়ে।

ঘটনাস্থলে থাকা শামসুল আলম খোকন নামে এক প্রকৌশলী বলেন, বিস্ফোরণের শব্দ এত বিকট ছিল যে ঘটনাস্থল থেকে ৪০০ মিটার দূরে সায়েন্স ল্যাবে তার অফিসের দরজার গ্লাস ভেঙে গেছে।

“আমি মনে করেছিলাম, আমার অফিসেই কোথাও বিস্ফোরণ হয়েছে।”

বিস্ফোরণের সময় ওই ভবনের নিচ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন একটি বেল্টের দোকানের কর্মচারী কামাল হোসেন। তাকে আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

কামালের ছোট ভাই আমির হোসেন সাংবাদিবদের বলেন, বিস্ফোরণের সময় তার ভাইয়ের মাথার ওপর ইট জাতীয় ভারী কিছু পড়ে। পরে রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়।

ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি আহত কবির হোসেন জানান, তিনি নিউ মার্কেটে একটি পোশাকের দোকানের সেলসম্যান। ওই ভবনের নিচ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় হঠাৎ বিকট শব্দ হয় আর হুড়োহুড়ি শুরু হয়। ওই জটলার মধ্যে পড়ে তিনি আহত হন।

ঘটনাস্থল থেকে একটু দূরেই পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। ওই হাসপাতালের মানবসম্পদ ও প্রশাসন বিভাগের সরকারি ব্যবস্থাপক রেজাউল করিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বিস্ফোরণের সময় তাদের হাসপাতাল ভবনটিও কেঁপে ওঠে। এরপর শুরু হয় আহত মানুষের স্রোত।

৪০ থেকে ৫০ জন তাদের জরুরি বিভাগে ভিড় করেন। তাদের কয়েকজনের পোড়া জখম ছিল। কারো শরীর থেঁতলে গেছে, কারো মাথা কেটে গেছে।

“ঘটনার আকস্মিকতায় আমরা হতবিহবল হয়ে পড়ি। চিৎকার, কান্না হৈচৈ চেঁচামেচিতে ভরে যায় জরুরি বিভাগ। চিকিৎসক ও নার্সরা যথাসাধ্য রোগীদের চিকিৎসা দেন। হাসপাতালে আসার আগেই দুজনের মৃত্যু হয়েছে। জরুরি বিভাগে আসার পর মারা গেছেন একজন।”

রেজাউল করিম জানান, চিকিৎসা শেষে সেখানে দুইজন ভর্তি আছেন। বাকিদের অন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে ও প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন কেউ কেউ।

ঘটনাস্থলে পুলিশের নিউ মার্কেট জোনের অতিরিক্ত কমিশনার শাহেন শাহ বলেন, “প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ভবনের তৃতীয় তলায় এসিতে বিস্ফোরণ ঘটেছে। পুলিশের বম্ব ডিসপোজাল টিম ঘটনাস্থলে কাজ করছে।”

ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার খন্দকার মহিদ উদ্দিন বলেন, বিস্ফোরণের পর ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এর পূর্বপাশে একটি আবাসিক ভবনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

“প্রাথমিকভাবে এটা এসির বিস্ফোরণ বলে মনে হলেও সম্ভাব্য অন্যান্য বিষয়গুলোও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

ঘটনাস্থলের পাশে প্রিয়াঙ্গন শপিং সেন্টারের তৃতীয় তলায় একটি টেইলারিং শপের মালিক মিনার হোসেন বলেন, “বিস্ফোরণের সঙ্গে সঙ্গে একটি বস্তু উড়ে এসে আমাদের দোকানের গ্লাসে লাগে। গ্লাস ভেঙে দোকানে থাকা নান্নু ও মো. হোসেন নামে আমাদের দুই কর্মচারী আহত হয়েছেন। এছাড়া পাশের দোকানের জিল্লুর নামে এক কর্মচারী আহত হন।”

হাসপাতলে যারা

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া জানান, ঢাকা মেডিকেল এবং শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে ১৪ জনকে। তাদের মধ্যে একজনকে আইসিইউতে নেওয়া হয়েছে।

শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিউটে ভর্তি আছেন নুর নবী (২৩), আকবর আলী (৫২), আশরাফুজামান (৩৬), আশা (২৫), হাবিবুর রহমান (৩২), জহুর আলী (৫২)।

ইনস্টিউটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, “আমাদের এখানে ভর্তি ৬ জনের মধ্যে কয়েক জনের ইনহেশন বার্ন রয়েছে, এছাড়া কয়েকজন ২০ থেকে ৪০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। তাদের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।”

ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি আছেন জাকির হোসেন জুয়েল (৩৫), মেহেদী হাসান (২৫), তাজ উদ্দিন (৩০), কবির হোসেন (৩০), রাবেয়া খাতুন (২৫), নুর নবী (২৪), অজ্ঞাত (৪০), কামাল হোসেন (৪০)। তাদের বেশিরভাগই পথচারী কিংবা দোকান কর্মচারী। 

ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক ডা. মো. আলাউদ্দিন বলেন, “এই আটজনের মধ্যে এক জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। বাকিদের অধিকাংশই নিউরো সার্জারি বিভাগে চিকিৎসাধীন। এদের হেড ইনজুরিসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ইনজুরি রয়েছে।”