বর্ধিত ভাড়ার ‘তালিকা আসেনি’: সড়কে বাস কম, ভোগান্তি-বচসা

পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা বলছেন, ভাড়া বাড়ানোর প্রজ্ঞাপন এলেও রুট অনুযায়ী ভাড়ার তালিকা এখনও পাওয়া যায়নি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 August 2022, 02:45 PM
Updated : 7 August 2022, 02:45 PM

বর্ধিত ভাড়ার তালিকা না আসায় রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে বাস চলেছে কম; কোথাও কোথাও অনেক বেশি ভাড়া নেওয়ার চেষ্টায় হয়েছে বচসা। এতে দিনের বড় অংশজুড়ে ভোগান্তিতে ছিলেন যাত্রীরা, পড়তে হয়েছে বিড়ম্বনাতেও।

জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পর নতুন হারে ভাড়া নির্ধারণের পর রোববার সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে রাস্তায় বের হওয়া সাধারণের দিনটি কেটেছে এরকম মিশ্র অভিজ্ঞতায়।

ঢাকা থেকে দূরপাল্লার বিভিন্ন রুটেও বাস চলেছে কম। এদিন বাস টার্মিনালগুলোতে যাত্রী উপস্থিতিও অন্য সময়ের চেয়ে কম দেখা গেছে।

পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা বলছেন, ভাড়া বাড়ানোর প্রজ্ঞাপন এলেও রুট অনুযায়ী ভাড়ার তালিকা এখনও পাওয়া যায়নি। ফলে বাড়তি আদায়ে যাত্রীদের সঙ্গে বচসা, ঝগড়াঝাটি হচ্ছে। জটিলতা এড়াতে বাস বন্ধ রেখেছেন অনেকে।

এর সুরাহা হতে আরও দুএকদিন কেটে যাবে বলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) একজন পরিচালক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন।

তিনি জানান, বাসের ভাড়ার তালিকা তৈরির কাজ চলছে। এ জন্য দুয়েক দিন সময় লাগে। এরইমধ্যে ঢাকা মহানগরের বাসের ভাড়ার তালিকা তৈরি করে মালিক সমিতির কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। সোমবারের মধ্যে বাকিগুলো হয়ে যাবে।

এক লাফে ডিজেলের দাম ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ বাড়িয়ে প্রতি লিটার ১১৪ টাকা করার পর শনিবার সরকারের সঙ্গে মালিক পক্ষের বৈঠকে বাস ভাড়া বাড়ানো হয়।

দূর পাল্লায় আগের ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ১ টাকা ৮০ পয়সার জায়গায় ৪০ পয়সা বাড়িয়ে ২ টাকা ২০ পয়সা করা হয়।

আর ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে নতুন ভাড়া করা হয়েছে প্রতি কিলোমিটারে ২ টাকা ৫০ পয়সা। আগে ভাড়া ছিল ২ টাকা ১৫ পয়সা। প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া বেড়েছে ৩৫ পয়সা।

ভাড়া ঠিক করা হলেও তা কীভাবে কার্যকর হবে সেই দোটানা থেকে এবং আট মাস আগে গত নভেম্বরে ভাড়া বাড়ানোর সময়কার বিশৃংখলার কারণে অনেক রুটে মালিকদের কেউ কেউ সড়কে গাড়ি নামাননি। এতে বাসের স্বল্পতা চোখে পড়েছে; মোড়ে মোড়ে যাত্রীদের অপেক্ষা ছিল দীর্ঘতর।

রোববার দিনের বিভিন্ন সময় রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে ঘুরে গণপরিবহন কিছুটা কম দেখা গেছে। সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে বাসের স্বল্পতায় দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।

বনানীর কাকলী বাসস্ট্যান্ডে মোহাম্মদপুরের বাসের অপেক্ষায় থাকা শাহরিয়ার হাসান বলেন, রাস্তায় বাস কম। অনেকক্ষণ ধরে বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছি, বাস আসছে না। সকালে বাসা থেকে বের হয়েও বাসের জন্য দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। একটা বাস আসার পর মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। বাড়তি ভাড়া দিয়েই আজ এসেছি।

আগারগাঁও তালতলার বাসিন্দা জান্নাতুল ফেরদৌসী বলেন, সড়কে বাস অন্য দিনের তুলনায় কম। ফলে দীর্ঘক্ষণ বাসের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে।

“আমি তালতলা থেকে মালিবাগ যাই বাইকে। আজ বাইকে আড়াইশ টাকা করে চাচ্ছে, উবারে কল দিলাম তাও পেলাম না। পরে বাসস্ট্যান্ডে আসি বাসের জন্য। দুপুরের দিকে এই রুটের বাসে ভিড় কম থাকে। কিন্তু আজ ব্যাপক ভিড় ছিল। আধাঘণ্টা অপেক্ষা করে একটা বাসে উঠেছি ধাক্কাধাক্কি করে।

“অনেকটা ঝুলে ঝুলে আসতে হয়েছে পুরো গন্তব্য। বাসের লোকজন বলছে আজ নাকি রাস্তায় বাস কম নেমেছে।”

বনশ্রী থেকে গাবতলী রুটের আলিফ পরিবহনের চালক সোলায়মানের পর্যবেক্ষণ সড়কে বাস নেমেছে অর্ধেক। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, বাসের ভাড়া নির্ধারণ হলেও এখনও ভাড়ার তালিকা আসেনি। যাত্রীদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হচ্ছে।

“এ কারণে অনেক মালিক গাড়ি নামায় নাই। আমাদের মালিক গাড়ি নামাইতে কইছে। আমরা আগের ভাড়ায় যাত্রী নিতাছি। প্যাসেঞ্জারদের বুঝাইয়া কইতাছি তেলের দাম বাড়ছে, ভাড়া কিছুটা বাড়াইয়া দিতে। কেউ দিতাছে, কেউ দেয় নাই। আমরাও ক্যাওয়াস করি নাই।”

ভাড়ার তালিকা না আসায় নতুন ভাড়া আদায় করা যাচ্ছে না, যে কারণে বাস কম চলছে বলে জানিয়েছেন সায়েদাবাদ-গাজীপুর রুটের বলাকা পরিবহনের একটি বাসের চালকের সহকারী মো. সোহেল মিয়া।

তিনি বলেন, “নতুন ভাড়া যে বাড়ছে সেইটা আমরা জানি, যাত্রীরাও জানে। কিন্তু চার্ট এখনও আসে নাই। নতুন ভাড়া চাইতে গেলেই যাত্রীরা চেইত্তা যায়, মারতে আহে। বেশি ভাড়া চাইয়া মাইরা খামু না কি? এইজন্য আমাদের রুটের অর্ধেক গাড়ি আইজকা বন্ধ।”

দুপুরে মহাখালী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে, বিভিন্ন রুটের বাসে টার্মিনাল ভর্তি। আশপাশের সড়কেও বিভিন্ন রুটের বাস দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে।

চালকরা জানিয়েছেন, তেলের দাম যত বেড়েছে সে অনুযায়ী ভাড়া বাড়েনি। আবার সরকার যে ভাড়া নির্ধারণ করেছে তাও দিচ্ছে না যাত্রীরা। ফলে বাস বন্ধ রেখেছেন অনেক মালিক।

মহাখালী থেকে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া রুটের আলম এশিয়া লাইনের বাসের চালক মো. দুলাল মিয়া জানান, ঢাকা থেকে ফুলাবাড়িয়া পর্যন্ত আসা-যাওয়ায় ডিজেল লাগে নয় হাজার টাকার বেশি।

“কিন্তু ওই পরিমাণ ভাড়া বাড়েনি। যতটা বেড়েছে তাও যাত্রীরা দিতে চায় না। ফলে গাড়ি বন্ধ রাখছে অনেকে।“

তার আশঙ্কা নতুন ভাড়া আদায় করতে হলে যাত্রীদের সঙ্গে শোরগোল হতে পারে।

এ রুটে এনা পরিবহন ছাড়া আর কেউ সরকার নির্ধারিত ভাড়া আদায় করতে পারছে না জানিয়ে ওই চালক বলেন, কেননা ওই গাড়িতে অগ্রিম টিকিট কাটতে হয়।

মহাখালী আন্তঃজেলা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সড়কে যাত্রী কম থাকায় বাস চলাচল করছে কম।

তার দাবি, তেলের দাম বাড়ার পর সরকার যে ভাড়া নির্ধারণ করেছে তেলের দাম অনুযায়ী সেটা না হলেও মেনে নিয়েছি। কিন্তু সড়কে যাত্রীই কম। যাত্রীর অভাবে গাড়ি কম যাচ্ছে।

আরও পড়ুন-

Also Read: তেলের দাম বাড়ানোর পর ঢাকায় গণপরিবহন কম

Also Read: ভাড়া দ্বিগুণ করার প্রস্তাব লঞ্চ মালিকদের

Also Read: ডিজেল ও কেরোসিনের দাম এক ধাক্কায় ৪২.৫%; অকটেন ও পেট্রোলে ৫১% বাড়ল

Also Read: খরচের বোঝায় যোগ হল বাড়তি বাস ভাড়া, বাড়ল ১৬-২২%