জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোয় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া এসেছে সাধারণ মানুষের কাছ থেকেও।
Published : 06 Aug 2022, 12:00 PM
ডিজেলের দাম বাড়ানোর তাৎক্ষণিক প্রভাব পড়েছে সড়কে। ঢাকার সড়কে গণপরিবহন কমে যাওয়ায় ছুটির দিনেও বাসের জন্য অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে। দূর পাল্লার গাড়ি চলাচলও কমে গেছে।
দৃশ্যত জ্বালানি তেলের সঙ্গে বাসের ভাড়াও বাড়াতে চাইছেন পরিবহন মালিকরা। শনিবার ভাড়া সমন্বয় করতে বিআরটিএর সঙ্গে পরিবহন মালিকদের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
এদিকে যাত্রী কল্যাণ সমিতি ভাড়া না বাড়িয়ে তেলের বাড়তি দাম প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছে।
শনিবার থেকে জ্বালানি তেলের বাড়তি দাম কার্যকর হয়েছে। বাসের জ্বালানি ডিজেলের দাম লিটারে ৩৪ টাকা বাড়িয়ে ১১৪ টাকা হয়েছে। ছোট গাড়ি ও মোটর সাইকেলের জ্বালানি পেট্রোল ও অকেটেনের দাম যথাক্রমে বেড়েছে ৪৪ ও ৪৬ টাকা।
জ্বালানির দাম বাড়ানোর পর সকাল থেকেই ঢাকার সড়কে গণপরিবহন কম দেখা যাচ্ছে।
রামপুরা, মৌচাক, মালিবাগ, কাকরাইল মোড়ে গণপরিবহনের জন্য মানুষের জটলা দেখা গেছে।
মোহাম্মদপুর থেকে আবদুল্লাহপুর রুটে চলাচলকারী প্রজাপতি পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে এম রফিকুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বাস বন্ধ রাখার কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।
“কিন্তু গতরাতে অনেক পাম্প তেল দেয়নি। ফলে কিছু গাড়ি চলতে পারছে না। যারা তেল নিতে পেরেছে তারা গাড়ি চালাচ্ছে।”
“তেলের দাম যে পরিমাণে বেড়েছে তাতে পরিবহন মালিকদের ভিক্ষা করা ছাড়া উপায় থাকবে না,” বলেন তিনি।
শনিবার সকাল থেকে গাবতলী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল ছেড়ে যাওয়া বাসের সংখ্যা কমে গেছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান রমেশ চন্দ্র ঘোষ।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বাস চালানো বা না চালানোর জন্য অ্যাসোসিয়েশন থেকে কোনো নির্দেশনা দেননি তারা।
“আমরা কাউকে কোনো নির্দেশনা দেইনি। যারা মনে করছে চালাতে পারবেন, তারা চালাচ্ছেন; যারা মনে করছেন পোষাতে পারবেন না, তারা চালাচ্ছেন না।”
গাবতলী থেকে কিছু বাস ‘যাত্রীদের বুঝিয়ে’ বেশি ভাড়া নিয়ে ছেড়েছে বলে জানান রমেশ।
এদিকে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ দাবি করছেন, ঢাকায় গণপরিবহন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পর ভাড়া বাড়বে কি না, তা নিয়ে বিকালে বিআরটিএর সঙ্গে বৈঠক করবেন তারা।
বেসরকারি বাস কম হলেও রাষ্ট্রীয় পরিবহন সংস্থা বিআরটিসির বাস সারাদেশে চলছে।
বিআরটিসির চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নতুন করে সিদ্ধান্ত আসার আগ পর্যন্ত আমরা আমাদের বাস চালাব। কোনো বাস বন্ধ থাকবে না।”
তেলের দাম বাড়ানোয় পরিবহন ভাড়াও বাড়ার আশঙ্কায় সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
এক বিবৃতিতে সংগঠনটি বলেছে, “জ্বালানি তেলের দাম একলাফে প্রায় ৫০ শতাংশের কাছাকাছি বাড়ানো ফলে জনজীবনে চরম দুর্ভোগ নেমে আসবে। পরিবহন ব্যয় দ্বিগুণ হওয়ায় পাশাপাশি নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যমূল্য সাধারণ মানুষের সামর্থ্যের বাইরে চলে যাবে। পরিবহন সেক্টরে অস্থিরতা দেখা দেবে।”
বিবৃতিতে শঙ্কা প্রকাশ করে বলা হয়, “আমাদের দেশে সাধারণত তেলের দাম যে পরিমাণ বাড়ে, তার থেকে কয়েকগুণ বেশি বাড়ে বাস ও অন্যান্য গণপরিবহন ভাড়া। পণ্য পরিবহন ভাড়াও ইচ্ছেমতো বাড়িয়ে দেয় ট্রাক-কভার্ডভ্যান মালিকেরা।
“বাসের ক্ষেত্রে সরকার বাসের মালিক-শ্রমিক নেতারা মিলেমিশে একচেটিয়াভাবে বাসের ভাড়া যে পরিমাণ বাড়ায়, বাসে তার কয়েকগুণ বাড়তি ভাড়া আদায় করে।”
জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোয় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া এসেছে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে।
মহাখালীগামী একজন যাত্রী হাফিজুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখন বাজারে প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়েছে। এর উপর জ্বালানি তেলের এই দাম বৃদ্ধির ঘোষণায় নতুন করে বাস, লঞ্চ, ট্রাকের ভাড়া বাড়বে। ফলে পণ্যের দাম আরও বাড়বে। আমরা যারা সাধারণ মানুষ তারা যাব কোথায়?”
মোটরসাইকেলের জন্য কাকরাইলে অপেক্ষমান আসাদুজ্জামান বলেন, “আগে কাকরাইল থেকে গুলশান যেতে ২০০ টাকা লাগত। এখন বলছে তিনশ টাকা। এভাবে আমরা যারা সাধারণ বলেন কিংবা ছোট আয়ের কর্মজীবী বলেন, আমরা খুব কষ্টে আছি, চাপে আছি, বিপদে আছি।”
কাকরাইলে কাছে বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মধুসূধন মন্ডল বলেন, “একদিকে সরকার কৃচ্ছ্রতা ও সাশ্রয়ী হতে বলছেন, আরেক দিকে জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়ে দিয়ে সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকাকে কঠিন সঙ্কটের মুখোমুখি করেছেন।
“আজকে কাঁচা মরিচের কেজি ৩০০ টাকা, ডিম ডজন ১৩০ টাকা। এখন জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধিতে পরিবহনে যে ভাড়া বাড়বে, তার প্রভাব পড়বে বাজারে। সরকারের যেখানে সমন্বয় করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার কথা সেখানে তারা এসব সিদ্ধান্ত নিয়ে মানুষকে বিপদের মুখে ফেলেছে।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কানিজ ফাতেমা বলেন, “আইএমএফের ঋণ পাওয়ার শর্ত ছিল ঘাটতি সমন্বয়। এখন এই ঘাটতি সমন্বয় করতে গিয়ে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হল। সাধারণ মানুষের দিকে সরকার তাকায়নি।
“সঙ্কট আছে, থাকবে। কিন্তু দুর্নীতি ও অপচয় বন্ধ না করে এভাবে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি করা সঠিক সিদ্ধান্ত হয়নি।”
কুমিল্লাগামী একজন বাসচালক শেফাত উল্লাহ বলেন, ডিজেলের দাম বাড়ায় দূরপাল্লার অনেক পরিবহনের ভাড়া বাড়বে।
“ট্রাক-কভার্ডভ্যান সব কিছু ডিজেলে চলে। এরা পণ্য পরিবহন করে। ফলে দেখবেন বাজারে জিনিসপত্রের দাম আরও বাড়বে।”