“বাংলাদেশের’ তরুণ সমাজ যে বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখছে, তা অবশ্যই আশাব্যঞ্জক। পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের যে চেতনা, তাকেও ভুলে গেলে চলবে না।”
Published : 11 Nov 2024, 12:05 AM
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির প্রতিষ্ঠাতা মানবেন্দ্র নারায়ণ (এম এন) লারমা ‘গোটা দেশের নিপীড়িত মানুষের কণ্ঠস্বর ছিলেন’ বলে তাকে স্মরণের এক আয়োজনে বলা হয়েছে।
রোববার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় 'মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ৪১তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন জাতীয় কমিটি'র স্মরণসভায় এ কথা বলা হয়।
আয়োজক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌসের সঞ্চালনায় সভার শুরুতে প্রয়াত নেতার প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি, বাংলাদেশ জাসদ, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলন, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের ঢাকা মহানগর শাখা, বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জুম সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংসদ, বনফুল আদিবাসী গ্রিনহার্ট কলেজসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা এতে অংশ নেন।
আয়োজক কমিটির এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা বলেন, "আমরা এক ক্রান্তিকালীন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। …জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ‘নতুন বাংলাদেশের’ তরুণ সমাজ যে বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখছে, তা অবশ্যই আশাব্যঞ্জক। পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের যে চেতনা, তাকেও ভুলে গেলে চলবে না।”
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সারা হোসেন, "অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কমিশনগুলোতে মুসলমান ভিন্ন অন্য কোন ধর্মের নেই, নারী নেই, আদিবাসী নেই। কেন, কীভাবে এ সংস্কার কমিটিগুলো হচ্ছে এ ব্যাপারে আমাদের প্রশ্ন করতে হবে।”
পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষদের উপর নিপীড়ন, নিপীড়ন, বৈষম্যের চিত্রগুলো গণমাধ্যমে উঠে আসে না অভিযোগ করে তিনি বলেন, “আদিবাসীদের উপরে ‘ঐতিহাসিকভাবে চলে আসা শোষণ-নিপীড়ন’ আরও বেশি মিডিয়ায় আসা উচিত।"
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, "পাহাড়ে অচিরেই ‘সেনাশাসনের’ অবসান করে শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য চুক্তির মৌলিক বিষয়গুলোকে সামনে নিয়ে আসতে হবে।”
বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া বলেন, দেশের সংবিধান সংস্কার কমিটিতে মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা এখনও প্রাসঙ্গিক। ৫০ বছর আগে তিনি যা ভেবেছিলেন, সেটা বর্তমানে রাষ্ট্র সংস্কারের অন্যতম লক্ষ্য।
গণসংহতির নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল বলেন, “মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা বাংলাদেশের শোষিত মানুষের কথা বলেছেন। তিনি একটি উগ্র বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন।”
বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সহ-সভাপতি অজয় এ মৃ বলেন, “মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা শুধু পাহাড়ের নেতা নন, তিনি সমতলের মানুষের জন্যও অনুপ্রেরণার এক নাম।”
জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসিরউদ্দীন পাটোয়ারী বলেন, "আমরা একটি চলমান লড়াইয়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি, যেটি ১৯৪৭ সাল থেকে করে আসছি। এ লড়াইয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। যেখানে মানবাধিকার বিঘ্নিত হবে সেখানে আমরা সকলেই ঐক্যবদ্ধ হবো।”
বক্তব্য পর্ব শেষে মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার স্মরণে প্রদীপ প্রজ্বলন করা হয় ও বিপ্লবী গানের আয়োজন করা হয়। অংশগ্রহণ করেন স্বপ্নবাজ ও সমগীত।