‘‘অন্যান্য খাতে যদিও সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে, কিন্তু স্বাস্থ্যখাতে সংস্কারের কাজটি অগ্রসর হয়নি,” বলেন অধ্যাপক হারুন।
Published : 07 Sep 2024, 03:58 PM
অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পাওয়া রোবেদ আমিনকে ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ বলে বর্ণনা করেছে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ড্যাব।
বিএনপি সমর্থিত চিকিৎসকদের সংগঠনটি শনিবার সংবাদ সম্মেলন করে রোবেদের নিয়োগ আদেশ বাতিলসহ ৭ দাবি তুলে ধরেছে।
ড্যাবের সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালাম বলেন, “আমরা আশা করেছিলাম, এই মহাপরিচালক পদটিতে যোগ্য ব্যক্তির পদায়ন, যিনি স্বৈরাচারী সরকারের দোসর ছিলেন না। কিন্তু নতুন পদায়িত ব্যক্তি ডা. রোবেদ আমিন ফ্যাসিবাদের একজন দোসর হিসেবে বিগত শেখ হাসিনা সরকারের সকল দুর্নীতির সিন্ডিকেটের সক্রিয় সদস্য।”
ডা. সালাম বলেন, ‘‘৩ অগাস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বিরোধিতা করে ফ্যাসিবাদের দোসর চিকিৎসকদের অংশগ্রহণে যে শান্তি সমাবেশ করা হয়েছে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে, তার অন্যতম পরিকল্পনাকারী ও বাস্তবায়নকারী হিসেবে চিহ্নিত বর্তমানে নিয়োগপ্রাপ্ত ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক।
“ছাত্র-জনতার আন্দোলন যে চেতনার বিরুদ্ধে, উচ্চাভিলাষী, পদলোভী চিকিৎসককে বৈষ্যম বিরোধী চিকিৎসক সমাজ কোনোভাবেই এটা মেনে নিতে পারছে না। এহেন ব্যক্তিকে অনতিবিলম্বে মহাপরিচালকেরে পদ থেকে প্রত্যাহার করতে হবে। অন্যথায় বৈষ্যম বিরোধী চিকৎসক-কর্মচারীর ক্ষোভ প্রশমিত হবে না।”
সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রোবেদ আমিন ও পরিচালক (প্রশাসন) শেখ ফজলে রাব্বির বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতি-অর্থ আত্মসাতের তথ্য তুলে ধরা হয়।
ড্যাব সভাপতি অধ্যাপক হারুন আল রশিদ বলেন, ‘‘আমাদের আকাঙ্ক্ষা ছিল যে, ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগের ফলে যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারটি এসেছে- তারা বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থে কাজ করবে এবং সেজন্য আমরা এই সরকার আসার পরপরই কিন্তু তাদেরকে অভিনন্দন জানিয়ে আমাদের সহযোগিতার হাত প্রসারিত করেছিলাম…আমরা বক্তব্য বিবৃতি দিয়েছিলাম।”
এক প্রশ্নের জবাবে ড্যাব সভাপতি বলেন, “ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ডা. সজীব সরকার নামে একজন চিকিৎসক যিনি উত্তরাতে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন। আপনারা জানেন যে, এই আন্দোলনে দীর্ঘদিনের আন্দোলন। এই আন্দোলনে বহু চিকিৎসক নিগৃহীত হয়েছেন, গ্রেপ্তার হয়েছেন।
“আমাদের এই আন্দোলনে মাস দুয়েকের মধ্যে ৮ জন চিকিসক এবং ৭/৮ জন স্বাস্থ্য কর্মী গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তার মধ্যে অন্যতম ড্যাবের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ফরহাদ হালিম ডোনার…তাকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছিল…আন্দোলনে বিজয়ের পরে তিনি মুক্তি পেয়েছেন।”
অধ্যাপক হারুন বলেন, “এছাড়া আন্দোলনের সময়ে ডা. রফিকুল ইসলাম, ডা. সাখাওয়াত হোসেন সায়ান্থ, ডা. জাহিদুল কবির এই রকম অনেক চিকিৎসক গ্রেপ্তার হয়েছেন। কাজেই চিকিৎসকদের অবদান এই আন্দোলনে কোনো অংশে কম নয়।”
ড্যাব সভাপতি বলেন, ‘‘অন্যান্য খাতে যদিও সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে, কিন্তু স্বাস্থ্যখাতে আমরা অত্যন্ত ব্যথিতভাবে লক্ষ্য করছি যে, স্বাস্থ্যখাতে সংস্কারের কাজটি অগ্রসর হয়নি। অগ্রসর তো হয়ইনি, বরঞ্চ স্বৈরাচারের দোসরদের আবারো পুনর্বাসন করার একটি প্রক্রিয়া আমরা লক্ষ্য করছি। এর ফলশ্রুতিতে আজকের আমাদের এই সংবাদ সম্মেলন এবং আমাদের এই ৭ দাবি।”
৭ দফা দাবি বাস্তবায়নে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে ড্যাব।
৭ দফা হচ্ছে-
# স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে মহাপরিচালকসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদে যেসব ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তাদের নিয়োগ বাতিল করতে হবে।
# আহত ছাত্র-জনতাকে যারা চিকিৎসা সেবা দিতে অস্বীকার করেছে, তাদের তালিকা প্রণয়ন করে বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) রেজিস্ট্রেশন বাতিল এবং শান্তি সমাবেশে যোগদানকারী চিকিৎসক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে অব্আহতি দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
# অতি দ্রুত বৈষ্যমের শিকার চিকিৎসক-কর্মচারীদের ভূতাপেক্ষভাবে পদোন্নতি দিয়ে বৈষ্যম দূর করতে হবে। বর্তমানে পদোন্নতিযোগ্য প্রত্যেককেই দ্রুততার সাথে পদোন্নতির ব্যবস্থা করে স্বাস্থ্য প্রশাসন ঢেলে সাজানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
# মেডিকেল কলেজসহ প্রতিটি হাসপাতাল দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। দীর্ঘ ১৬ বছরে স্বাস্থ্য খাতে যত দুর্নীতি হয়েছে, তার শ্বেতপত্র প্রকাশ এবং দোষীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।
# মেডিকেল কলেজ, মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ইনস্টিটিউট, নার্সিং কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে স্বৈরাচারের দোসরদের অতিদ্রুত সরিয়ে বৈষ্যমের শিকার চিকিৎসকদের পদায়নের ব্যবস্থা করতে হবে।
# প্রতিবাদকারী যেসব চিকিৎসকদের হয়রানিমূলক বদলি করা হয়েছে, সেই বদলি আদেশ অবিলম্বে বাতিল করতে হবে এবং ভবিষ্যতে হয়রানিমূলক বদলি করা যাবে না।
# মন্ত্রণালয় গঠিত বিশেষজ্ঞ প্যানেল কমিটি অতি দ্রুত বাতিল করে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সঙ্গে সস্পৃক্ত একাত্মতা প্রকাশকারী চিকিৎসক সমাজের প্রতিনিধিত্ব রেখে কমিটি পুনর্গঠন করতে হবে।
৭ দফা দাবি বাস্তবায়নে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুসের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে ড্যাব।
ড্যাব-স্বাচিপ প্রসঙ্গ
হারুন আল রশিদ বলেন, “ছাত্র রাজনীতি থাকবে, ড্যাবও থাকবে, স্বাচিপও থাকবে। বিভিন্ন সমাজে বিভিন্ন স্টেকহোল্ডার থাকবে। নাহলে তো আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দল ব্যান করে দিতে হবে।
“খারাপ দিকগুলো আমরা পরিহার করব, আমরা সংশোধন করব। কিন্তু কিছু বাদ দিয়ে দেব, সব কিছু বন্ধ করতে দিব- তাহলে তো আবারও স্বৈরাচার ফিরে আসবে… সেটা তো হতে দেওয়া যাবে না।”
‘আমরা স্বাস্থ্য উপদেষ্টা পক্ষে’
স্বাস্থ্য উপদেষ্টার পরিবর্তন চান কি না, এ প্রশ্নের উত্তরে ড্যাব সভাপতি বলেন, ‘‘এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আমাদের ১৮ বছরের সংগ্রাম এবং ফাইনালি ছাত্র-জনতার যে গণঅভ্যুত্থান তার ফলশ্রুতিতেই কিন্তু এই বিপ্লবী সরকার। এই সরকারকে আমরা সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা করি। এই সরকারের ব্যর্থতা মানে আমাদের সবার ব্যর্থতা, এই সরকারের পতন মানে আমাদের সবার পতন। স্বৈরাচারের পুনঃআবির্ভাব। কাজেই এই উপদেষ্টার পদত্যাগ আমরা চাই না।”
হারুন বলেন, ‘‘একটা কথা খুব পরিষ্কার, যদি এই সরকারের কোনো অংশ স্বৈরাচারকে পুনর্বাসনের চেষ্টা চালায়, সে যেই হোক আমরা তার বিরুদ্ধে। আমরা মাননীয় স্বাস্থ্য উপদেষ্টা পক্ষে। আমরা চাই তাকে সহযোগিতা করতে। তার সাথে কাঁধে কাধে মিলিয়ে আগামীদিনে একটা সুন্দর বাংলাদেশ গড়ে তুলব; সুন্দর স্বাস্থ্য ব্যবস্থা গড়ে তুলবে… এই আশাবাদ ব্যক্ত করছি।”
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ড্যাবের সিনিয়র সহসভাপতি এম এ সেলিম, সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম, মোস্তাক রহিম স্বপন, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মেহেদী হাসান, যুগ্ম মহাসচিব পারভেজ রেজা কাকন, আবদুল কেনান, সায়ীদ মেহবুব উল কাদির, আদনান হোসেন মাসুদ, কোষাধ্যক্ষ জহিরুল ইসলাম শাকিল, দপ্তর সম্পাদক এরফান আহমেদ সোহেল।