আচরণ বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে ইসিতে হাজির হয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান।
Published : 02 Jun 2024, 07:52 PM
দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী মো. মহিববুর রহমান উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তিন প্রার্থীর জন্য ভোট চেয়ে আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে নিজে পার পেয়ে গেলেও কপাল পুড়েছে ওই তিনজনের; যাদের প্রার্থিতা বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
রোববার নির্বাচন কমিশন পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলা ভোটে প্রার্থিতা বাতিল করেছেন তিন প্রার্থীর। তারা হলেন- চেয়ারম্যান পদের প্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. সাইদুজ্জামান মামুন, ভাইস চেয়ারম্যান পদের প্রার্থী চশমা প্রতীকের রওশন মৃধা এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হাঁস প্রতীকের ফেরদৌসী পারভীন।
ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেছেন, রোববার আচরণ বিধি লঙ্ঘনে দায়ে ঢাকায় নির্বাচন ভবনে সশরীরে এসে ব্যাখ্যা দিলেও তাতে ‘সন্তুষ্ট হতে না পারায়’ তাদের বিরুদ্ধে ইসি এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
প্রার্থিতা বাতিল হওয়ায় আপিলের বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেবেন কি না জানতে চাইলে ঘোড়া প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. সাইদুজ্জামান মামুন বলেন, “পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি।”
তবে প্রার্থিতা বাতিলের বিরুদ্ধে আপিল করবেন চশমা প্রতীকের ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী রওশন মৃধা। তিনি বলেন, “অবশ্যই নির্বাচন কমিশনে আপিল করব। আপিলেও প্রার্থিতা ফিরে না পেলে উচ্চ আদালতে যাব।”
অপরদিকে এ বিষয়ে হাঁস প্রতীকের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী ফেরদৌসী পারভীনকে ফোন করা হলে তিনি কিছুক্ষণ পর কথা বলেন বলে কল কেটে দেন।
আচরণ বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে গত ৩১ মে এ তিন প্রার্থীকে তলব করে ইসি।
ষষ্ট উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চতুর্থ ধাপে ৫ জুন রাঙ্গাবালী উপজেলায় ভোটগ্রহণের কথা রয়েছে।
রেহাই পেলেন প্রতিমন্ত্রী মহিববুর
ইসির তলবি চিঠি অনুযায়ী, রাঙ্গাবালী উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থী সাইদুজ্জামান মামুন, রওশন মৃধ ও ফেরদৌসী পারভীনের পক্ষে পটুয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান ভোট চাওয়ায় গত ৩১ মে প্রথমে প্রতিমন্ত্রীকে এবং একই দিন ওই তিন প্রার্থীকে আচরণ বিধি ভঙের অভিযোগে কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হয়।
ওই চিঠিতে বলা হয়, পটুয়াখালী জেলার রাঙ্গাবালী উপজেলার ছোট বাইশদিয়া ইউনিয়নের কোড়ালিয়া ঘাট এবং চালতাবুনিয়া ইউনিয়নের চালতাবুনিয়া বাজারে ত্রাণ বিতরণের সময় প্রতিমন্ত্রী প্রকাশ্যে ভোট দেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। এটি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এ কার্যক্রম উপজেলা পরিষদ (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা, ২০১৬ এর লঙ্ঘন।
সেজন্য আচরণ বিধি লঙ্ঘনের দায়ে কেন দোষী সাব্যস্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, সে বিষয়ে রোববার নির্বাচন কমিশনে ব্যক্তিগতভাবে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য বলা হয়।
সে অনুযায়ী, রোববার বেলা ৩টায় ইসিতে ব্যাখ্যা দিতে হাজির হয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান। এ সময় তার সঙ্গে আইনজীবী হিসেবে ছিলেন সংসদ সদস্য সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।
নির্বাচন কমিশনের কাছে ব্যাখ্যা তুলে ধরার পর আইনজীবী সুমন বলেন, “প্রতিমন্ত্রীর বিপক্ষে একটি শোকজ নোটিস ছিল। যার জবাব দেওয়ার জন্য আমি আইনজীবী হিসেবে এখানে এসেছি। মূলত একটি ভিডিও এখানে দেখানো হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনি (প্রতিমন্ত্রী) তিনজনের জন্য ভোট চেয়েছেন। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, ভোট চাওয়ার বিষয়টি দুইবার বলা হয়েছে। এর মানে এটি সুপার এডিট হতে পারে। আর এ বিষয়গুলো চ্যালেঞ্জ করলে সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।”
সুমন বলেন, নির্বাচনের ‘ইমেজ’ ঠিক রাখার জন্য নির্বাচন কমিশন যে কাজ করছে এর জন্য প্রতিমন্ত্রী তাদের ধন্যবাদ দিয়েছেন।
"প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, কোনো কারণে যদি আমার জানার বাইরে নির্বাচনি আচরণবিধি ভঙ্গ হয়ে থাকে তার জন্য আমি দুঃখ প্রকাশ করছি।"
এ সময় প্রতিমন্ত্রী হাসছিলেন।
এ বিষয়ে প্রতিমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সুমন বলেন, “উনি আসলে অতি শোকে পাথর হয়ে গেছেন। ওনার মত একজন ভদ্রলোকর বিরুদ্ধে এরকম অভিযোগ। আর কথা বইলেন না। উনি আসলে অতি শোকে পাথর।"
এর আগে উপজেলা ভোটে আচরণবিধি লঙ্ঘনের জন্য চারজনের প্রার্থিতা বাতিল করে ইসি। অবশ্য দু’জন আদালতে গিয়ে প্রার্থিতা ফিরে পান।
এর আগে ৮ মে, ২১ মে ও ২৯ মে তিন ধাপে উপজেলা ভোট হয়েছে।
৫ জুন চতুর্থ ধাপের ভোট হওয়ার পর স্থগিত হওয়া ২০ উপজেলায় ভোট হবে আগামী ৯ জুন।