যে কারণে খালাস সগিরার ভাসুর-জাসহ ৩ জন

“রায়ে পারিবারিক বিরোধের বিষয়টি জোড়ালোভাবে রাষ্ট্রপক্ষ তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছে,” বলেন আসামি পক্ষের আইনজীবী।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 March 2024, 08:49 AM
Updated : 13 March 2024, 08:49 AM

সাড়ে তিন দশক আগে রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী এলাকায় গৃহবধূ সগিরা মোর্শেদকে হত্যার মামলায় তার ভাসুর ও জাসহ তিনজনকে খালাস দিয়েছে আদালত; বাকি দুইজনের হয়েছে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।

অভিযোগপত্রে ‘পারিবারিক বিরোধের’ কথা থাকলেও সাক্ষ্য-প্রমাণে ‍অপরাধ প্রমাণিত না হওয়ায় তিনজনকে মুক্তি দিয়েছেন বিচারক।

ঢাকার তৃতীয় বিশেষ দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ আলী হোসাইন বুধবার আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। এতে দুই আসামি আনাস মাহমুদ ওরফে রেজওয়ান এবং মারুফ রেজাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

আর সগিরা মোর্শেদের ভাসুর ডা. হাসান আলী চৌধুরী (৭১), তার স্ত্রী সায়েদাতুল মাহমুদা ওরফে শাহিন (৬৫) এবং মন্টু মণ্ডল ওরফে মিন্টু খালাস পান।

আসামি পক্ষের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, “মামলার বিচার চলাকালে সাক্ষ্যে পারিবারিক বিরোধের বিষয়টি আসেনি। মামলার বাদীও সাক্ষ্যে পারিবারিক বিরোধের বিষয়টি উল্লেখ করেননি।

“পিবিআইয়ের দেওয়া অভিযোগপত্রে বলা হয়- সগিরা মোর্শেদের পরিবারের সঙ্গে আসামি শাহিনের বিভেদ তৈরি হয়েছিল। এছাড়া সগিরাকে অনেক অপছন্দ করতেন এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে সগিরা-শাহিনের মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিল। সম্বোধন করা নিয়েও পারিবারিক দ্বন্দ্ব ছিল। সাক্ষ্য প্রমাণে এসব কিছু বাদীপক্ষ প্রমাণ করতে না পারায় বিচারক তাদেরকে খালাস দিয়েছেন।”

কাজল বলেন, “রায়ে পারিবারিক বিরোধের বিষয়টি জোড়ালোভাবে রাষ্ট্রপক্ষ তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছে। বাদীর অপর ভাই যিনি সবার জ্যেষ্ঠ, তার সাক্ষ্য নিতে ব্যর্থতার কারণে বিচারক পারিবারিক বিরোধের বিষয়টিতে নঞর্থক মনোভাব পোষণ করেন।”

এদিকে রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের কথা জানিয়ে বাদীপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহমেদ বলেন, “এই মামলায় চারজন আসামি ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। সেখানে দুজনেরটা গ্রহণ করে সাজা দিয়েছেন, আর দুজনেরটা গ্রহণ না করে খালাস দিয়েছেন।

“আদালতকে হয় পুরো বিষয়টা গ্রহণ বা বর্জন করতে হবে। কিন্তু এখানে আংশিক গ্রহণ করে রায় দেওয়া হয়েছে। আমার মনে হয় দুই পক্ষকে সন্তুষ্ট করতে এই ‘গোঁজামিলের রায়’ দেওয়া হয়েছে। আমরা আপিলে যাব।”

ফারুক আহমেদ বলেন, “মন্টুর খালাসের ব্যাপারে সবাই আগে থেকে জানতেন। আগের বিচারক বলেছিলেন, মন্টুকে অব্যাহতি দিলাম না। তাকে খালাস দেওয়া হবে।”

দীর্ঘ বিচারে এ মামলার ৫৭ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৭ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়। গত ২৫ জানুয়ারি রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে আলোচিত মামলাটি রায়ের পর্যায়ে আসে। এরপর দুই দফা পিছিয়ে বুধবার রায় দিল আদালত।

১৯৮৯ সালের ২৫ জুলাই সগিরা মোর্শেদ রাজধানীর বেইলি রোডের ভিকারুননিসা নূন স্কুল থেকে দ্বিতীয় শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ে সারাহাত সালমাকে আনতে যান। সিদ্ধেশ্বরী রোডে মোটরবাইকে আসা আততায়ীর গুলিতে তিনি নিহত হন।

ওই দিনই রমনা থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন সগিরা মোর্শেদের স্বামী সালাম চৌধুরী। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী রিকশাচালক ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িত হিসেবে মন্টু ও মারুফ রেজাকে শনাক্ত করলে তাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

বেইলি রোডের বাসিন্দা মারুফ রেজা একজন আবাসন ব্যবসায়ী। তিনি এরশাদ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল মাহমুদুল হাসানের ভাগ্নে। সগিরা মোর্শেদকে গুলি করেন তিনি।

পিবিআই প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার তদন্তের পর বলেছিলেন, ‘স্ত্রীর কথায় প্ররোচিত হয়ে’ ছোট ভাইয়ের বউকে শায়েস্তা করার জন্য ২৫ হাজার টাকায় সে সময় বেইলি রোড এলাকার ‘সন্ত্রাসী’ মারুফ রেজাকে ভাড়া করেছিলেন ডা. হাসান। মারুফকে সহযোগিতার জন্য স্ত্রীর ভাই রেজওয়ানকে তিনি দায়িত্ব দিয়েছিলেন।