বুধবার সকাল ৯টায় দেশের ৭টি নদীর পানি ৯টি পয়েন্টে বিপৎসীমার উপর দিয়ে বইছিল।
Published : 21 Aug 2024, 04:03 PM
ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে ফেনী, কুমিল্লাসহ দেশের যেসব জায়গা বন্যার পানিতে তলিয়েছে, সেসব এলাকার বন্যা পরিস্থিতি আরো একদিন পর উন্নতির দিকে যেতে পারে বলে আভাস দিয়েছে পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র৷
বুধবার কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, মৌসুমি লঘুচাপের কারণে ত্রিপুরা এবং বাংলাদেশের সীমান্তে বৃষ্টিপাত হয়েছে। এর ফলে হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, ফেনী, চট্টগ্রাম ও কুমিল্লায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
“এই পরিস্থিতি আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত একই থাকবে। তারপর থেকে কমে যেতে পারে। মোটামুটি তিন দিনের মধ্যে অনেক জায়গাতেই বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসতে পারে।”
কেন্দ্রের নিয়মিত বুলেটিনে বলা হয়, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদীগুলোর পানি বাড়ছে।
বুধবার সকাল ৯টায় দেশের ৭টি নদীর পানি ৯টি পয়েন্টে বিপৎসীমার উপর দিয়ে বইছিল।
ওই সময় বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্রের ১১৬টি স্টেশনের মধ্যে ৫০ পয়েন্টে পানি কমার প্রবণতা দেখা গেলেও বাড়ছিল ৬২ পয়েন্টে আর অপরিবর্তিত ছিল চার পয়েন্টে।
ফেনীতে তৃতীয় দফার বন্যায় জেলার ফুলগাজী-পরশুরাম-ছাগলনাইয়া উপজেলায় দুই শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হওয়ার খবর এসেছে এদিন। এসব এলাকার প্রায় দুই লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
এদিকে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টির কারণে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দরে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। ইমিগ্রেশন ভবনে হাঁটুপানি জমায় যাত্রী পারাপার কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
এছাড়া ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে খাগড়াছড়ির মাইনি ও কাচালং নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় ডুবে গেছে খাগড়াছড়ি-সাজেক সড়কের একাধিক অংশ।
মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস
আবহাওয়া সংস্থাগুলোর বরাত দিয়ে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে।
এর ফলে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণা, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার প্রধান নদীগুলোর পানি কিছু পয়েন্টে সময় বিশেষে বাড়তে পারে।
এছাড়া পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল, পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাতের আভাস রয়েছে। এ সময়ে এসব অঞ্চলের মুহুরী, ফেনী, হালদা, সাঙ্গু, মাতামুহুরি ও গোমতী নদীর পানি সামগ্রিকভাবে স্থিতিশীল থাকতে পারে।
আগামী ২৪ ঘণ্টায় উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার মনু, খোয়াই, ধলাই নদীর পানি সমতল বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে এবং নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে পারে।
একই সময়ে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ফেনী ও চট্টগ্রাম জেলার মুহুরী ও হালদা নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে এবং নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে পারে।
এছাড়া পূর্বাঞ্চলের কুমিল্লা জেলার গোমতী নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে এবং সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদী বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
বুলেটিনে বলা হয়, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও গঙ্গা নদীর পানি কমছে; অন্যদিকে পদ্মা নদীর পানি স্থিতিশীল আছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় এ সব নদীর পানি কমতে পারে।
এ বছর বর্ষার শুরুতে জুনের দ্বিতীয়ার্ধে দেশের অভ্যন্তরে ভারি বর্ষণ ও উজানের ঢলে ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়ে উত্তর-পূর্বাঞ্চল। ঈদের উৎসবের আগে ও পরে দুই সপ্তাহ ধরে দুর্ভোগে থাকেন সিলেট, সুনামগঞ্জসহ আশপাশের জেলার বাসিন্দারা। এর মধ্যে উত্তরাঞ্চলেও পানি বেড়ে নিম্নাঞ্চল তলিয়ে যায়।
উজানের ঢলে জুলাইয়ের শুরুতেও দেশের উত্তর ও উত্তর পূর্বাঞ্চলে বন্যা দেখা দেয়। এর ফলে প্লাবিত হয় অনেক গ্রাম।
আরো পড়ুন
বন্যা: ফেনীতে ২০০ গ্রাম প্লাবিত, প্রায় দুই লাখ মানুষ পানিবন্দি
জলাবদ্ধতায় আখাউড়া স্থলবন্দরে যাত্রী পারাপার বন্ধ, আমদানি-রপ্তানি
খাগড়াছড়িতে বন্যা: ডুবে আছে ৩০ গ্রাম, সাজেকে আটকা আড়াইশ পর্যটক