রোববার ঢাকার শাহবাগে মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছেন নিয়োগের সুপারিশ পাওয়া প্রার্থীরা।
Published : 13 Feb 2025, 11:57 PM
বিক্ষোভ, অবস্থান ও মহাসমাবেশের ঘোষণার মধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সাড়ে ছয় হাজার শিক্ষক নিয়োগ বাতিল করে হাই কোর্টের দেওয়া রায় স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করেছে সরকার।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর বৃহস্পতিবার এ আবেদন করেছে বলে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদ উদ্দিন জানান।
আগামী রোববার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে এ আবেদনের শুনানি হতে পারে বলেছেন আসাদ উদ্দিন।
একই দিন মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছেন নিয়োগের সুপারিশ পাওয়া প্রার্থীরা। এদিন সকালে রাজধানীর শাহবাগে এ সমাবেশের আয়োজন করার বলেছেন প্রার্থীদের নেতা ও ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার প্রার্থী তালুকদার পিয়াস।
বৃহস্পতিবার রাতে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নারী প্রার্থীদের ওপর পুলিশের লাঠিচার্জ ও নিয়োগ নিশ্চিতের দাবিতে আগামী রোববার আমরা শাহবাগে মহাসমাবেশ করব। এ মহাসমাবেশে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের সব প্রার্থী অংশ নেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।”
প্রার্থীরা জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান করছেন তুলে ধরে তালুকদার পিয়াস বলেন, “শুক্রবার সকালে আমরা শাহবাগে অবস্থান নেব। শুক্র ও শনিবার শাহবাগে শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি পালন করব।
“সকালে থেকে শাহবাগে অবস্থান করলেও রাতে আমরা জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান করছি।”
এর আগে বৃহস্পতিবার বিকালে তারা শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।
‘সড়ক না আটকানোর’ ঘোষণা দিয়েও এদিন দুপুরে তারা শাহবাগ মোড় অবরোধ করে অবস্থান নেন। পরে পুলিশ লাঠিচার্জ ও জলকামান ব্যবহার করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছিল। সেখান থেকে আটক হয়েছিলেন ১৪ প্রার্থী।
গত ৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে উত্তীর্ণ ছয় হাজার ৫৩১ জন প্রার্থীকে নিয়োগপত্র দেওয়ার সরকারি সিদ্ধান্ত বাতিল করে রায় দেয় হাই কোর্ট।
একই সঙ্গে আদালত কোটা বাদ দিয়ে মেধার ভিত্তিতে পুনরায় নিয়োগ দিতে নির্দেশ দেয়।
বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচাপতি মাহমুদুর রাজীর বেঞ্চ এ রায় দেয়।
এ রায়ের পর সেদিন রাতেই প্রার্থীরা জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান নেন। তারা শুক্রবার দুপুরে প্রধান উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে তার বাসভবন যমুনার দিকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদেরকে লাঠিপেটা করে।
সোমবারও তারা শাহাবাগ মোড় আটকে অবস্থান নিলে তাদেরকে সরাতে লাঠিপেটার পাশাপাশি সাউন্ড গ্রেনেড, জলকামান ও কাঁদুনে গ্যাস ব্যবহার করে পুলিশ। সে দিন হাই কোর্টের রায় পুনর্বিবেচনার জন্য আপিল করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
গত ৩১ অক্টোবর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে তৃতীয় ধাপে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের (তিন পার্বত্য জেলা ছাড়া) চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হয়। এতে উত্তীর্ণ হন ৬ হাজার ৫৩১ জন।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগে ২০২৩ সালের ১৪ জুন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।
তৃতীয় ধাপে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের জন্য গত বছরের ২৯ মার্চ লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এতে তিন পার্বত্য জেলা ছাড়া বাকি জেলাগুলোর ৩ লাখ ৪৯ হাজার ২৯৩ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেন। পরীক্ষার ফল ২১ এপ্রিল প্রকাশ করা হয়।
পরে সংশোধিত ফলাফল প্রকাশ করা হলে উত্তীর্ণের সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণ হয়। নির্বাচিত এই ৪৬ হাজার ১৯৯ জন প্রার্থীকে মৌখিক পরীক্ষার জন্য ডাকা হয়। তাদের থেকে পরে চূড়ান্ত নিয়োগের তালিকা তৈরি করা হয়।
কোটা অনুসরণ করে ফল প্রকাশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে নিয়োগ বঞ্চিত ৩০ প্রার্থী একটি রিট মামলা করেছিলেন। ওই আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ১৯ নভেম্বর নিয়োগ কার্যক্রম ছয় মাসের জন্য স্থগিত করে রুলসহ আদেশ দিয়েছিল আদালত।
আরও পড়ুন:
প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষক: তৃতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ
শিক্ষক পদে নিয়োগ বাতিল: হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছে