ঈদ মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সময় আপ্যায়ন করা হবে সেমাই, মিষ্টি ও বাতাসা দিয়ে।
Published : 31 Mar 2025, 12:18 AM
ঢাকার ৪০০ বছরের ঈদ ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্য ধরে এবার রোজার ঈদে বড় পরিসরে ঈদের জামাতের পাশাপাশি ঈদ আনন্দ মিছিল, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও ঈদ মেলার আয়োজন করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন।
বাংলাদেশ চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রের পাশের পুরনো বাণিজ্যমেলার মাঠে সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে হবে এই ঈদ জামাত, যেখানে নারী-পুরুষ মিলিয়ে এক লাখ মানুষের নামাজ পড়ার বন্দোবস্ত থাকছে।
বলা হচ্ছে, ডিএনসিসির উদ্যোগে এটাই হবে ঢাকা উত্তরের প্রধান ঈদ জামাত।
রোববার মাঠের প্রস্তুতি পরিদর্শনে এসে ডিএনসিসি প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, “সরকারের অনেক উপদেষ্টা এখানে থাকবেন। নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনী গত এক সপ্তাহ ধরে কাজ করছে। সিসিটিভি ক্যামেরা দিয়ে পুরো এলাকা নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে।
“পুরো পরিবার নিয়ে সবাই যেন উপভোগ করতে পারেন, সেই ব্যবস্থা থাকছে ডিএনসিসির ঈদ আনন্দ উৎসবে।”
ডিএনসিসি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ঈদ জামাত শেষে সকাল ৯টায় শুরু হবে ঈদ আনন্দ মিছিল। পুরনো বাণিজ্যমেলার মাঠ থেকে শুরু হয়ে সংসদ ভবনের সামনে গিয়ে শেষ হবে। বর্ণাঢ্য এ মিছিলের সামনে শাহী ঘোড়া ও সামনে-পেছনে ২০টির মত ঘোড়ার গাড়ি থাকবে। ব্যান্ড পার্টি থাকবে, সুলতানি-মোঘল আমলের ইতিহাস সম্বলিত চিত্রকলাও থাকবে।
“নারী-পুরুষ, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই এই ঈদ আনন্দ মিছিলে অংশগ্রহণ করবেন। অন্যান্য ধর্মামাবলম্বীরাও আসবেন। এর মাধ্যমে ঢাকার ৪০০ বছরের ঈদ ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনা হবে।”
ডিএনসিসির প্রশাসক বলেন, “এই প্রথম এত বড় পরিসরে ঈদ আনন্দ মিছিলের আয়োজন করা হয়েছে। এটি ইতিহাসের একটি অংশ হবে। আনন্দ মিছিলে অংশগ্রহণের মাধ্যমে ইতিহাসের অংশ হওয়ার সুযোগ রয়েছে।”
তিনি জানান, মানিক মিয়া এভিনিউতে ঈদ মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকবে। ঈদ মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের আপ্যায়ন করা হবে সেমাই ও মিষ্টি দিয়ে। এছাড়া ঢাকার ঐতিহ্যবাহী বাতাসা থাকবে আপ্যায়নে।
এ আয়োজনের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্র প্রাঙ্গণে বসবে দুই দিনের ঈদ মেলা; সেখানে ২০০টির মতো স্টল থাকবে।
নানা ধরনের পণ্য সামগ্রী, খাবার, চটপটি যেমন থাকবে, শিশুদের আনন্দের জন্য থাকবে নাগরদোলা ও খেলার ব্যবস্থা। এই মেলা সবার জন্য উন্মুক্ত।
‘ঈদ জামাতে ফোন, জায়নামাজ ও ওয়ালেটের বাইরে অন্য কিছু নয়’
ডিএনসিসি প্রশাসক বলেন, বাণিজ্যমেলার পুরোনো মাঠে ঈদ জামাতকে ঘিরে পর্যাপ্ত গাড়ি পার্কিং ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকছে।
“মোবাইল ফোন, জায়নামাজ ও ওয়ালেটের বাইরে ভারি কোনো বস্তু সঙ্গে না আনার অনুরোধ করা হচ্ছে।”
কোনো ‘অনাকাঙ্ক্ষিত জিনিস বা পতাকা’ না নিয়ে আসারও আহ্বান জানান তিনি।
সেখানে ঈদের নামাজে ইমামতি করবেন কারি গোলাম মোস্তফা। বিকল্প ইমাম হিসেবে থাকবেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সহকারী পরিচালক মুফতি জুবাইর আহাম্মদ আল-আযহারী।
ডিএনসিসির এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঈদ জামাতের জন্য পুরোনো বাণিজ্য মেলার মাঠে প্রায় ৪৬ হাজার বর্গফুট আয়তনের প্যান্ডেল করা হয়েছে। প্যান্ডেলের বাইরেও নামাজ আদায়ের জন্য থাকবে কার্পেট ও নামাজের বিছানা। প্যান্ডেলের ভেতরে দক্ষিণ পাশে নারীদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা রয়েছে।
মাঠে প্রবেশের জন্য বিভিন্ন অংশে ছয়টি ফটক থাকবে। ফটকে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন পুলিশের সদস্যরা।
প্যান্ডেলের দুই পাশে একসঙ্গে ১০০ জন পুরুষ ও ৫০ জন নারীর অজু করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। মাঠের বিভিন্ন জায়গায় খাওয়ার পানির ট্যাংক রাখা থাকবে। ঈদের জামাতের জন্য মোট ১২ পেয়ার সাউন্ড সিস্টেম ও ১০০টি মাইক ব্যবহার করা হবে।
জামাতে অংশ নিতে যারা ব্যক্তিগত যানবাহনে আসবেন, তাদের গাড়ি রাখা যাবে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় কিংবা শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে।
আনন্দ মিছিল
ঈদের জামাত শেষে বাণিজ্যমেলার পুরোনো মাঠ থেকেই শুরু হবে ঈদ আনন্দ মিছিল।
মিছিলটি বাণিজ্য মেলার মাঠ থেকে আগারগাঁওয়ের প্রধান সড়ক দিয়ে খামারবাড়ি মোড় হয়ে মানিক মিয়া এভিনিউতে সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজার সামনে শেষ হবে।
আনন্দমিছিলে বাজনা বাজাবে ব্যান্ড পার্টি। অংশগ্রহণকারীদের হাতে থাকবে ঈদের শুভেচ্ছা ও সচেতনতার বার্তাসংবলিত প্ল্যাকার্ড। আনন্দমিছিলের অগ্রভাগে পাঁচটি সুসজ্জিত ঘোড়া রাখা হবে। মিছিলের সঙ্গে থাকবে ১৫টি ঘোড়ার গাড়ি। পাশাপাশি মোঘল ও সুলতানি আমলের ইতিহাস–সংবলিত ১০টি পাপেট শো রাখা হবে। আনন্দমিছিল থেকে ‘ন্যায্য ঢাকা’ গড়ার বার্তা দেওয়া হবে।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আপ্যায়ন
মিছিল শেষ হওয়ার পর সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজার সামনে হবে সংক্ষিপ্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। শিল্পীরা সেখানে ঈদের গান পরিবেশন করবেন। থাকবে বাউলশিল্পীদের পরিবেশনা।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সময়ে সাধারণ মানুষদের আপ্যায়ন করা হবে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগের পাশাপাশি সাধারণ মানুষ এ সময় ঈদের সেমাই, মিষ্টি ও বাতাসা খেতে পারবেন।
দুই দিনব্যাপী ঈদমেলা
ঢাকা উত্তর সিটির ঈদ আনন্দ উৎসবের অন্যতম অনুষঙ্গ দুই দিনব্যাপী ঈদ আনন্দমেলা। ঈদের দিন এবং পরদিন এ মেলা হবে বাংলাদেশ চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্র প্রাঙ্গণে।
মেলায় বিভিন্ন পণ্যের উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের ২০০টির বেশি স্টল থাকবে। দুই দিনই মেলা খোলা থাকবে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত।
মেলায় শিশুদের বিনোদনের জন্য নাগরদোলা থাকবে। খেলাধুলার জন্য রাখা হবে বিভিন্ন সামগ্রী।
পুরনো খবর
ঈদ জামাত ও আনন্দ মিছিলের জন্য প্রস্তুত বাণিজ্যমেলার পুরনো মাঠ