বিএনপির বিষয়ে এক প্রশ্নে মো. আলমগীর বলেন, “আমরা চাই সবাই নির্বাচনে আসবে। আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন করে আসছি। আগামীতেও সুষ্ঠু নির্বাচন করব।”
Published : 15 Oct 2023, 06:18 PM
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ‘যাবতীয় কার্যক্রম শেষ ধাপে’ জানিয়ে নভেম্বরেই তফসিল ঘোষণার কথা আবার জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তবে মাসের প্রথম নাকি দ্বিতীয় সপ্তাহে তা ঘোষণা হবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
যখনই ঘোষণা করা হোক, তফসিল ঘোষণার পর ভোটের জন্য ৪০ থেকে ৪৫ দিন সময় হাতে থাকবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর।
রোববার নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নে তিনি এসব কথা বলেন।
মো. আলমগীর বলেন, “চলমান সংসদের মেয়াদপূর্তির পূর্বের ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। সে অনুযায়ী ক্ষণ গণনা করে আমরা যাবতীয় কার্যক্রম শেষ করছি। এখন শুধু তফসিল ঘোষণা বাকি আছে।”
সংবিধান অনুযায়ী আগামী ১ নভেম্বর থেকে ২৯ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে নির্বাচন কমিশন ভোটের আয়োজন করতে চায় জানুয়ারির শুরুতে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ‘ভোটে না আসা এবং নির্বাচন হতে না দেওয়ার বিষয়ে’ সরকারবিরোধী জোটের ঘোষণা আন্দোলনের মধ্যেও ‘ভোটের পরিবেশ’ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন এই নির্বাচন কমিশনার। বলেন, “আমরা তো দেখি সব ঠিক আছে।”
নিবন্ধিত ৪৪ টি দলের সবাই নির্বাচনের পক্ষে বলেও মনে করেন এই নির্বাচন কমিশনার।
বিএনপির নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির বিষয়ে তিনি বলেন, “সেটা তো রাজনৈতিক বিষয়। আমাদের সংবিধানের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই।… আমরা চাই সবাই নির্বাচনে আসবে। আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন করে আসছি। আগামীতেও সুষ্ঠু নির্বাচন করব।”
তফসিলের পর গ্রেপ্তার করা যাবে?
এ বিষয়ে এক প্রশ্নে মো. আলমগীর গত ১২ অক্টোবর প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের একটি বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, “তফসিল ঘোষণার পরে কোনো ধরনের রাজনৈতিক হয়রানি যেন না হয়। তবে কারো বিরুদ্ধে যদি কোনো অভিযোগ থাকে, যদি গ্রেপ্তারযোগ্য অভিযোগ থাকে অথবা আদালতের নির্দেশে গ্রেপ্তার করতে পারবে।
“উনি (সিইসি) যেটা মিন করেছেন, রাজনৈতিক কারণে কাউকে যেন হয়রানি না করে; গ্রেপ্তার যদি করতেই হয় সেটা যেন তফসিলের আগেই করা হয়।”
নির্বাচন কমিশনার জানান, তফসিলের আগে মামলা নেই, এমন কাউকে গ্রেপ্তার করা হলে তাহলে তারা সেটা বিচার বিশ্লেষণ করবেন। সেই হিসেবে সরকারের প্রতি কোনো বক্তব্য বা পরামর্শ থাকলে দেবেন।
ইসির অবস্থানের কথা তুলে ধরে আলমগীর বলেন, “পুরোনা মামলা, যদি ক্রিমিনাল মামলা থাকে; আগে কোনো ঘটনা যদি ঘটে থাকে- চুরি, ডাকাতি, খুন, খারাপি, মারামারি… এখন আমরা তফসিল ঘোষণা করলাম তারপর একটা মামলা দিলেন, কিছু জানা যায়নি; ওই রকম বিষয় যেন না হয়, সে বিষয়ে সিইসি অনুরোধ করেছেন।”
কেন্দ্রে ব্যালট পেপার কখন যাবে
ব্যালট পেপার ভোট কেন্দ্রে ভোটের সকালে নাকি আগের দিন যাবে- এই প্রশ্নে আলমগীর বলেন, “এটা নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। যেখানে সকালে দেওয়া সম্ভব সেখানে সকালে দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। যেগুলোতে সকালে পাঠানো সম্ভব হবে না সেখানে আগের দিন পাঠানে হবে, সিদ্ধান্ত হবে তফসিলের সময়।”
ভোটে সেনাবাহিনীর কী ভূমিকা
এই প্রশ্নে মো. আলমগীর বলেন, “সেনাবাহিনী তো আমাদের জাতীয় নির্বাচনে (অতীতে) মোতায়েন হয়েছে। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না, সেটাও তিনি (সিইসি) বলেছেন। তবে কদিন আগে মোতায়েন হবে সেটা এখনও আলোচনা হয়নি।”
সেনাবাহিনীর উপস্থিতি ভোটে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে বলেও বিশ্বাস করেন এই নির্বাচন কমিশনার।
সশস্ত্র বাহিনীর কর্মপরিধি এবং কত সময় তারা নির্বাচনী এলাকায় অবস্থান করবে- সে বিষয়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের পর আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে থাকে।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি এবং ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের সংসদ নির্বাচনে সশস্ত্র বাহিনীর প্রায় ৫০ হাজার সদস্যকে মোতায়েন করা হয়েছিল।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরাবর সেনা মোতায়েন হলেও সেনাসদস্যরা বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করতেই নিয়োজিত থাকে। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর ভোটের এক সপ্তাহ আগে মাঠে নেমেছিল সশস্ত্রবাহিনী।
সবশেষ একাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার দিন তৎকালীন সিইসি কে এম নূরুল হুদা জাতির উদ্দেশে ভাষণে বলেন, “নির্বাচন চলাকালে আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে বেসামরিক প্রশাসনকে যথা-প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের ‘এইড টু দ্য সিভিল পাওয়ার’ বিধানের অধীনে সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন থাকবে।”
বিদেশি পর্যবেক্ষকের বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত
এই প্রশ্নে মো. আলমগীর জানান, বিদেশি পর্যবেক্ষকদের আসার লক্ষ্যে আবেদনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে সার্কভুক্ত নির্বাচন সংস্থাগুলোর কমিশনার বা ফেসবোসার সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের ৩০ থেকে ৩৫ জনকে দাওয়াত দেওয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “তাদের সব ব্যয় আমরা বহন করব। অন্য বিদেশি পর্যবেক্ষক যারা আসবে তাদের শুধু আমরা অনুমোদন দেব।”